কেরানীগঞ্জে ১৪ মামলার আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে' নিহত

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.08.01
ঢাকা
গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিতে ২১ পরিবারের সদস্যদের মানববন্ধন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিতে ২১ পরিবারের সদস্যদের মানববন্ধন। জুন ০৩, ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

কেরানীগঞ্জের ত্রাস হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসী আমির ওরফে ল্যাংড়া আমির মঙ্গলবার পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শফিউর রহমান।

শফিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমিরের বিরুদ্ধে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জেই পুলিশকে হত্যার হুমকি দেওয়া থেকে শুরু করে হত্যা, চাঁদা আদায় ও অপহরণসহ অন্যান্য অপরাধের ১৪টি মামলা রয়েছে।”

মঙ্গলবার রাত পৌনে দুইটায় কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগ এলাকায় কথিত ওই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটি ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। প্রায় পাঁচ বছর আগে এক মাকে গুলি করে তার কোল থেকে ছয় বছরের শিশু পরাগকে অপহরণ করে আলোচনায় আসে আসে এই আমির। এরপর থেকে তার নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের খবর মিলতে থাকে।

২০১২ সালের নভেম্বর মাসে আমির পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে' মারা গেছে বলে পুলিশ সাংবাদিকদের জানিয়েছিল। পরে পুলিশের পক্ষ থেকেই জানানো হয়, নিহত ওই ব্যক্তি আমির ছিল না।

এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর মৃত্যুর খবরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকার সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও মানবাধিকার কর্মীদের মতে, আমিরকে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাজা দেওয়া গেলে পুলিশ ও আইনের শাসনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বাড়ত।

“অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর কোনো আসামি, সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, যদি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় তাহলে সরকারকে জবাব দিতে হবে," বেনারকে বলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, “ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ যাই বলা হোক না কেন, এ সকল ঘটনা আইনের শাসনের পরিপন্থী। এসব কাজ বন্ধ করতেই হবে। রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকেই জবাবদিহির বাইরে রাখা যাবে না।”

ঢাকার পুলিশ সুপার শফিউর রহমান বেনারকে 'বন্দুকযুদ্ধের' ঘটনা বর্ণনা করেন। তার বর্ণনা অনুযায়ী, আমিরকে বাগেরহাট জেলা থেকে সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা আনার পর তাকে মীরেরবাগ এলাকায় তার ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নিয়ে যায় পুলিশ সদস্যরা। সেখানে অবস্থান করা অপরাধীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশ ও পাল্টা গুলি ছোড়ে। বন্দুকযুদ্ধের একপর্যায়ে আমির গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

তিনি জানান, “আমির ছিল কেরানীগঞ্জ এলাকার এক মূর্তিমান ত্রাস। তবে পরাগ অপহরণের পর (২০১২ সালের নভেম্বর মাসে) যে ব্যক্তি বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় সে আমির ছিল না। এবার সে মারা গেছে। এটা নিশ্চিত।”

২০১২ সালের ১১ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা এলাকায় মা, বোন ও গাড়ি চালককে আহত করে স্কুল পড়ুয়া ছয় বছর বয়সী শিশু পরাগ মণ্ডলকে অপহরণের মাধ্যমে আমির সারা দেশে আলোচনায় আসে।

দুই দিন পর ১৩ নভেম্বর কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজার এলাকা থেকে অচেতন অবস্থায় পরাগকে উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা তখন বলেছিলেন, মুক্তিপণ দিয়ে পরাগকে উদ্ধার করা হয়।

“আমিরের অত্যাচারে কেরানীগঞ্জের মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। ক্রস ফায়ারে সে মারা গেছে জেনে আমরা খুব খুশি। পুলিশ এদেরকে আদালতে পাঠালে কেমন করে যেন জামিন পেয়ে মামলাকারীদের অত্যাচার করে, হুমকি দেয়। আমিরের মতো সন্ত্রাসীদের বিচার আদালতে করা কঠিন," বেনারের কাছে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানান কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী মোতাহার হোসেন।

২০০৪ সালে র‍্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটিলিয়ন (র‍্যাব) গঠনের পর থেকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অপরাধীদের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘বন্দুকযুদ্ধ' বা ‘ক্রসফায়ার' এর ঘটনাগুলোকে নিছকই হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করে আসলেও সরকারের পক্ষ থেকে বরাবর তা অস্বীকার করা হয়।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকার তার ওয়েবসাইটে বলছে, তারা অনেক ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা তদন্ত করে দেখেছে যে সেখানে কোনো গোলাগুলির ঘটনাই ঘটেনি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাবস্থায় বলেছিল ক্ষমতায় গেলে তারা ‘ক্রসফায়ার’ নামক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করবে। কিন্তু ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের ঘটনা বন্ধ হয়নি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।