সীমিত পরিসরে হবে হজ, সৌদি যেতে পারবেন না বিদেশি কেউ

জেসমিন পাপড়ি
2020.06.23
ঢাকা
200623_Saudi_Arabia_bars_Haj_1000.jpg হজ পালন শেষে সৌদি আরব থেকে ঢাকার হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে পৌঁছেছেন হাজিরা। ২৯ আগস্ট ২০১৯।
[নিউজরুম ফটো]

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর সীমিত পরিসরে হজ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোনো দেশ থেকে মুসলিমরা হজ পালনে যেতে পারবেন না এ বছর।

সোমবার সন্ধ্যায় সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ এ বিষয়টি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানান। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এতে বলা হয় “সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এ বছর প্রথাগত হজ পালন হচ্ছে না। এ বছর কেবলমাত্র সীমিত সংখ্যক (অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে এক হাজারের কম) লোককে হজ করতে দেয়া হবে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘সঠিক’ বলে অভিহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।

ধর্ম সচিব মো. নুরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “সৌদি আরব জানিয়েছে, করোনা মহামারির কারণে এ বছর বাংলাদেশসহ কোনো দেশ থেকে কেউ হজে অংশ নিতে পারছেন না। এ জন্য বাংলাদেশের সরকার, প্রধানমন্ত্রী এবং ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।”

সচিব জানান, “দেশটিতে অবস্থানরত সীমিত সংখ্যক বিদেশি মুসলিমদের নিয়ে এবার হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হবে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব।”

সৌদি সরকার জানিয়েছে, জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৮ জুলাই থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সৌদি সরকারের তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২০ লাখ লোক একসাথে মুসলমানদের সবচেয়ে এই বড় জমায়েতে অংশ নেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জানায়, এ বছর এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯১ বাংলাদেশির হজে যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ৬০০ নিবন্ধন করেছিলেন।

সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে এ বছর যারা হজে যেতে পারছেন না তাঁরা চাইলে নিবন্ধনের টাকা ফেরত নিতে পারবেন বলে জানান ধর্ম সচিব।

তিনি বেনারকে বলেন, “হজে যেতে ইচ্ছুক যেসব ব্যক্তি ২০২০ সালে নিবন্ধন করেছিলেন, তাঁরা চাইলে জমা দেওয়া টাকা ফেরত নিতে পারবেন।”

তবে কেউ টাকা রেখে দিলে তিনি আগামী বছর হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন বলে জানান ধর্ম সচিব।

অর্থনীতিতে প্রভাব

সৌদি আরবের সীমিত আকারে হজ পালনের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হজ এজেন্টদের সংগঠন হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বেনারকে বলেন, “বর্তমানে আমাদের সংগঠনের সদস্য সংখ্যা এক হাজার ২৩৮। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ হাজারের মতো কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। তা ছাড়া পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে ও সৌদি আরবে আরও প্রায় এক লাখ লোক এ পেশার সাথে জড়িত।”

তিনি বলেন, “বছরে হজকেন্দ্রিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। এবার সেই লেনদেন বন্ধ থাকবে। ফলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধাক্কা আমাদের পোহাতে হবে।”

এর প্রভাব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সেও পড়বে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর দেয়া সাম্প্রতিক তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই- ডিসেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স করপূর্ব নিট লাভ করেছে ৪২৩ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিমানের আয়ের বড় একটি অংশ আসে হজ ফ্লাইট থেকে। কারণ, দেশের সকল হজযাত্রীদের বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেন বেনারকে বলেন, “এখন সকল বাণিজ্যিক ফ্লাইট এমনিতে বন্ধ। সেখানে হজ ফ্লাইট চললে আমরা কিছু রাজস্বা পেতাম। সেটাও এ বছর পাওয়া যাবে না।”

আরও এক রোহিঙ্গার মৃত্যু

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার বিকেলে আরও এক রোহিঙ্গা নারী মারা গেছেন বলে বেনারকে জানান কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু তোহা এম আর এইচ ভূঁইয়া।

তিনি জানান, ওই নারী উখিয়ার থাইংখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা। তাঁর বয়স অনুমানিক ৫০ বছর।

এ পর্যন্ত করোনায় পাঁচজন রোহিঙ্গা মারা গেছেন এবং ৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান ডা. তোহা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মঙ্গলবার ৪৩ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৪৫ জন। আর এই সময়ে ৩ হাজার ৪১২ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ায় এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ১৯৮ জনে।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯১ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন চার লাখ ৭৪ হাজারের বেশি।

ঝুঁকিতে শিশুরা

ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন বলছে, করোনা মহামারির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার ৬০ কোটি শিশু স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে রয়েছে।

শুধু বাংলাদেশেই লকডাউনের সময় পরিষেবা প্রাপ্তির সীমিত সুযোগ এবং অভিভাবকদের সংক্রমণের আশঙ্কার কারণে এপ্রিল মাসে মাত্র অর্ধেক শিশু তাদের নিয়মিত টিকা নিতে পেরেছে বলে এতে জানানো হয়।

এছাড়া তীব্র অপুষ্টিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের সেবা গ্রহণের হার জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যবর্তী সময়ে ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

ইউনিসেফ জানায়, জন হপকিন্স ইউনিভারসিটি ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথ কর্তৃক মে মাসে প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুযায়ী, মহামারির পরোক্ষ কারণে আগামী ছয় মাসে দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোর পাঁচ বছরের কম বয়সী আট লাখ ৮১ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে।

এই মৃত্যুগুলোর বেশিরভাগই ভারত ও পাকিস্তানে ঘটার আশঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে জানানো হয় ওই গবেষণা প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমু হোজুমি বলেন, “কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলার পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর ক্রমবর্ধমান ক্ষতির প্রেক্ষাপটে শিশুদের ওপর এর প্রভাবে ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।”

এ ছাড়া যত দ্রুত সম্ভব স্কুলগুলোকেও পুনরায় নিরাপদে চালু করা এবং শিশুদের জন্য হেল্পলাইন চালু রাখার বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কক্সবাজার থেকে আবদুর রহমান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।