এইচআইভি-এইডস এবং যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি একত্রিত করছে সরকার

ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী
2017.02.17
বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে সচেতনতা বাড়াতে রাজধানী ঢাকায় র‍্যালি আয়োজন করা হয়। বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে সচেতনতা বাড়াতে রাজধানী ঢাকায় র‍্যালি আয়োজন করা হয়। ডিসেম্বর ০১, ২০১৬।
স্টার মেইল

নারী যৌন কর্মী, সমকামী ও শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের জন্য বিদ্যমান এইচআইভি-এইডস প্রতিরোধ কার্যক্রম ও আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানের পৃথক কার্যক্রম আর থাকছে না। পরবর্তী হেলথ সেক্টর প্রোগ্রামে যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সঙ্গে এইডস কার্যক্রম যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

বিশেষায়িত এই প্রকল্প অন্য কর্মসূচির সঙ্গে মেলানোর ফলে এইডস রোগীদের গুরুত্ব কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, চতুর্থ হেলথ সেক্টর প্রোগ্রামে এ বছর জানুয়ারি থেকে ভূতাপেক্ষ অনুমোদনসহ কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে। এর আগে তৃতীয় হেলথ সেক্টর প্রোগ্রামে এইচআইভি-এইডস রোগীদের চিকিৎসা ও এই রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম আলাদা অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল।

“সরকার চতুর্থ হেলথ সেক্টর প্রোগ্রামে এইচআইভি-এইডস চিকিৎসা ও প্রতিরোধ কার্যক্রম যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে একত্রিত করেছে। চতুর্থ হেলথ সেক্টর প্রোগ্রাম অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় আছে। তবে যখনই অনুমোদন হোক, তা এ বছর জানুয়ারি থেকে ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর হবে,” বেনারকে বলেন এইচআইভি-এইডস কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. আনিসুর রহমান।

তৃতীয় হেলথ সেক্টর প্রোগ্রামের আওতায় এইচআইভি-এইডস প্রতিরোধ কার্যক্রম ও আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গুলশানে আলাদা অফিস স্থাপন করা হয়। সেখান থেকে এনজিও কর্মীদের মাধ্যমে এইচআইভি-এইডস রোগীদের বিভিন্ন সেবার ব্যবস্থা রয়েছে।

এই সেবার মধ্যে রয়েছে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে ওষুধ বিতরণ, ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণ, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও চিকিৎসা প্রদানসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কার্যক্রম।

গত ২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এক প্রশ্নের জবাবে সংসদকে জানান, সরকারি অর্থায়নে এইচআইভি আক্রান্ত ও সমকামী ব্যক্তিদের সেবা প্রদান ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম জুন ২০১৬ থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে গ্লোবাল ফান্ডের আওতায় প্রতিরোধমূলক সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

ডা. আনিসুর রহমান এ প্রসঙ্গে বেনারকে বলেন, এইচআইভি-এইডস রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান ও এর প্রতিরোধ কার্যক্রমের জন্য দুটি উৎস থেকে অর্থ খরচ হতো। একটি হলো সরকারি অর্থ যা হেলথ সেক্টর প্রোগ্রামের মাধ্যমে অর্থ খরচ হতো। আরেকটি হলো বিদেশি অর্থ যা গ্লোবাল ফান্ড।

“গ্লোবাল ফান্ডের আওতায় প্রতিবছর এইচআইভি-এইডস কার্যক্রমের জন্য সাত মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫৬ কোটি) টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এটি এখনো চলছে। তবে হেলথ সেক্টর প্রোগ্রামের আওতায় সরকার প্রতি বছর যে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা এইচআইভি-এইডস কার্যক্রমের জন্য ব্যয় করত তা বন্ধ হয়ে গেছে,” জানান আনিসুর রহমান। তাঁর মতে, “টাকা বন্ধ করলে কার্যক্রম সংকুচিত হবে, এটাই স্বাভাবিক।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এইডস রোগীর সংখ্যা কম হওয়ায় দুই প্রকল্প একত্রিত করা হতে পারে। তিনি জানান, “শুধু এআরভি ড্রাগ কেনা বাবদ প্রায় ১০ কোটি টাকা লেগে যেত।”

সরকারি অর্থায়ন বন্ধ করা প্রসঙ্গে এইডস আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন আশার আলোর নির্বাহী পরিচালক হাবিবা আক্তার বেনারকে বলেন, “সরকার বলছে, বাংলাদেশ এইচআইভি লো প্রিভেলেন্ট দেশ। কিন্তু আমরা সরকারকে বোঝাতে পারছি না যে এই কার্যক্রম আলাদা না থাকলে এইডস আক্রান্ত রোগীদের ওপর গুরুত্ব কমে যাবে। তাতে বাংলাদেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকবে।”

“সেবা ও প্রতিরোধ কার্যক্রম বন্ধ থাকতে পারে, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ তো আর থেমে নেই। এক সিরিঞ্জ দিয়ে একাধিক ব্যক্তিরা ড্রাগ নিয়েই যাচ্ছে, যৌনকর্মী ও সমকামীরা তাদের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিনই তারা এইডস এর বিস্তার ঘটাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ আর লো প্রিভেলেন্ট দেশ থাকবে না,” বলেন হাবিবা।

বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়। এ দেশে এইডস এর প্রাদুর্ভাব শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য (০.০০১) এক ভাগ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এইডস রোগীর প্রাক্কলিত সংখ্যা নয় হাজার ৬শ জন। ২০১৬ সালে ৫৭৮ জন নতুন এইডস রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪১ জন মারা গেছেন।

২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশে সর্বমোট চার হাজার ৭২১ জন এইডস রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে মারা গেছেন ৭৯৯ জন।

“রোগীর সংখ্যা কম, সেটি আসল ব্যাপার নয়। মূল বিষয় হলো এইডস রোগী ও সমকামীদের ব্যাপারে সরকার তথা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি মোটেও ইতিবাচক নয়। আমরা মরলেই বা কার কী যায় আসে,” বেনার নিউজের কাছে এভাবেই আক্ষেপ করেন এইচআইভি আক্রান্ত জনৈক মোশাররফ হোসেন (প্রকৃত নাম নয়)।

“কিন্তু সরকার যদি এইডস আক্রান্ত রোগীদের ব্যাপারে নজর ও গুরুত্ব কমিয়ে দেয়, তাহলে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে এর মূল্য দিতে হবে,” যোগ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।