মালিকপক্ষ প্লট বুঝে পেলেও ওই স্থানে থাকছে না হলি আর্টিজান

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.11.14
 গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি বুঝে পাওয়ার পর সংস্কার কাজ শুরু করেছে মালিকপক্ষ। নভেম্বর ১৪, ২০১৬।
স্টার মেইল

রক্তক্ষয়ী জঙ্গি হামলার প্রায় চার মাস পর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি মালিকদের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছে পুলিশ। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী গত রোববার বিকেলে মালিকদের কাছে ভবনটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সোমবার থেকেই পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু করেছে মালিকপক্ষ।

গত ১ জুলাই জঙ্গি হামলার পর সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল এবং কিচেন রেস্তোরাঁ ও হলি আর্টিজান বেকারি গত রোববার দুপুর পর্যন্ত পুলিশের পাহারায় ছিল। ওই দিন বিকেলে মালিকপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পর সেখান থেকে পুলিশি পাহারা সরিয়ে নেওয়া হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদর রহমান বেনারকে জানান, প্লটমালিক সামিরা আহম্মদ তাঁর সম্পত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে আদালতে আবেদন করেছিলেন। আদালত মতামত জানতে চাইলে পুলিশ অনাপত্তি দেয়। এরপর আদালত অনুমতি দেওয়ায় ওই জমি ও ভবন হস্তান্তর করা হয়।

গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর প্লটটিতে গড়ে উঠেছিল ও কিচেন ও হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ। প্লটের একপাশে ছিল লেকভিউ ক্লিনিক। বছর দুয়েক আগে চালু হওয়া অভিজাত ওই রেস্তোঁরা দেশি–বিদেশি অনেককে আকৃষ্ট করে এর ছিমছাম পরিবেশের কারণে।

রাজউক সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে আবাসিক ভবন ও ক্লিনিক গড়ে তোলার জন্য ডা. সুরাইয়া জাবিনকে প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৯৮২ সালে প্লটটির একপাশে গড়ে তোলা হয় লেকভিউ ক্লিনিক।  ডা. সুরাইয়ার মৃত্যুর পর প্লটের মালিক হন তার মেয়ে সামিরা আহম্মদ ও সারা আহম্মদ। সামিরার স্বামী সাদাত মেহেদী ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে ২০১৪ সালে সেখানে গড়ে তোলেন হলি আর্টিজান বেকারি।

গত ১ জুলাই রাতে পাঁচ জঙ্গি হলি আর্টিজানে ঢুকে সশস্ত্র হামলা চালায়। ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে তারা। নিহত হন দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। সন্ত্রাসীরা সারা রাত জিম্মি করে রাখে বেশ কয়েকজনক।  পরদিন সকালে অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। সাঁজোয়া যান নিয়ে পরিচালিত ওই অভিযানে হলি আর্টিজান বেকারি অনেকটাই বিধ্বস্ত হয়।

জঙ্গি হামলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পর গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জমিটিতে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছিল। সেজন্য মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।  তাঁর এই বক্তব্যের পরপর গুলশানের আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরিয়ে দেওয়ার তৎ​পরতা শুরু হয়। কয়েকটি আবাসিক এলাকা ইতিমধ্যে বাণিজ্যিক ঘোষণা করা হয়েছে। নানামুখি চাপে সরকারের এই উদ্যোগ আলোচনা–সমালোচনার মধ্যে আটকে আছে।

এদিকে আবাসিক এলাকায় হলি আর্টিজান গড়ে তোলায় রাজউকের পক্ষ থেকে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে মর্মে নোটিশ পাঠানো হয়। হলি আর্টিজান কর্তৃপক্ষ নোটিশ পায়নি বলে দাবি করে।  এরপর রাজউক ওই ভবনের ফটকে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়। প্লটের মালিক ওই নোটিশের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেন। সম্প্রতি আদালত মালিকের পক্ষে আদেশ দিয়ে তাঁকে প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

হলি আর্টিজানের অন্যতম মালিক সাদাত মেহেদী সোমবার সন্ধ্যায় বেনারকে বলেন, আগামী ২০ ডিসেম্বর তাঁরা লেক ভিউ ক্লিনিকটি চালু করবেন। আদালতের কাছে তারা সেরকম আবেদনই করেছিলেন।  তিনি বলেন, হলি আর্টিজান এই প্লটটি​তে আর চালু করা হবে না। তবে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের দিকে আবারও এটি খোলার চিন্তা ভাবনা রয়েছে তাঁদের।

হলি আর্টিজানের আরেক মালিক আলী আরসালান বেনারকে বলেন, সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহতদের স্মরণে বা তাঁদের স্মৃতিরক্ষায় প্লটটিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।  তবে পরিকল্পনাটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে আলী আরসালান বলেন, ভবনটি পরিষ্কার করার পর তারা এই ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।