আইন ও সালিস কেন্দ্রের কার্যালয়ে রাজউকের অভিযান ঘিরে প্রশ্ন

জেসমিন পাপড়ি
2019.11.15
ঢাকা
191115_ASK_mobile_court_1000.jpg আইন ও সালিস কেন্দ্রের লালমাটিয়া কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা। ১৫ নভেম্বর ২০১৯।
[বেনারনিউজ]

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—রাজউকের এক অভিযানে দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রকে (আসক) আর্থিক জরিমানা করা ছাড়াও কার্যালয় ছাড়ার নির্দেশ ঘিরে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা অভিযোগ করেন, “অলাভজনক ও মানবাধিকার সংগঠন হলেও যুক্তিহীনভাবে ইমরাত নির্মাণ আইনে আসককে জরিমানা করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, একই এলাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, এমনকি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানেরও কার্যালয় রয়েছে। অথচ আসক কার্যালয়ে অভিযান হয়েছে।

আসক কার্যালয়ে এই অভিযানের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরাও।

এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “আইন সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু যদি বৈষম্যমূলকভাবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে লক্ষ্য করে আইন প্রয়োগ করা হয়, তখন মনে প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক।”

তিনি বলেন, "মানবাধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি সংগঠনকে এককভাবে চিহ্নিত করে যদি স্থান ছাড়তে বলা হয় এবং যেখানে আশেপাশে অন্যান্য কার্যালয় রয়েছে, তাহলে অবশ্যই এটা দুশ্চিন্তার বিষয়।”

“সেক্ষেত্রে মানবাধিকারের কাজকে নিরুৎসাহিত করা এবং এ ​কাজে সংশ্লিষ্টদের কোনঠাসা করার কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা—এমন প্রশ্ন ওঠে। আমরা প্রশাসনের কাছে এর জবাব চাইব,” বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই অধ্যাপক।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় আসক কার্যালয়ে অভিযান চালায় রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আবাসিক এলাকায় কার্যালয় পরিচালনা করায় এই মানবাধিকার সংগঠনটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি আগামী দুই মাসের মধ্যে কার্যালয় ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযান পরিচালনাকারী রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার বেনারকে বলেছেন, “আইন অমান্য করার কারণেই আসককে জরিমানা করা হয়েছে, সংস্থাটির কার্যালয় সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে নয়, রাজউকের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ওই ভবনটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।”

জেসমিন আক্তার বলেন, “ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ এর ৩(ক) অনুযায়ী কোনো ভবনের অনুচিত ব্যবহার করা যাবে না। এই ভবনটি আবাসিক হিসেবে রাজউক অনুমোদন দিয়েছে। ফলে আবাসিক ভবনের অনাবাসিক ব্যবহার করা যাবে না।”

তাঁর যুক্তি, “মানবাধিকবার সংগঠন হলেও আবাসিক এই ভবনের পাঁচতলা জুড়ে কার্যালয় হিসেবে অনাবাসিক ব্যবহার করছে আসক। অভিযান চলাকালে এ বিষয়ে তারা ভুল স্বীকার করার প্রেক্ষিতেই জরিমানা করা হয়।”

তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজউকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেব দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তা বলেন, “মানবাধিকার সংগঠন হওয়ায় অত্যন্ত মানবিক বিবেচনায় সংগঠনটিকে সর্বনিম্ন জরিমানা করা হয়।”

“দুই মাসের মধ্যে এই ভবন ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও ভবনটি ব্যবহার করতে চাইলে রাজউকের কাছে আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে আপিল করতে পারবে আসক,” বলেন জেসমিন আক্তার।

উদ্বিগ্ন আসক

শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে আসক প্রধান শীপা হাফিজা বলেন, “এ ধরনের অভিযান মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে।”

“রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ ধরনের কার্যক্রম আসকসহ সকল অলাভজনক, সেবামূলক, উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে, যা মানবাধিকার রক্ষার সার্বিক কার্যক্রমকে সংকুচিত করবে,” বলেন তিনি।

শীপা হাফিজার অভিযোগ, অভিযান চলাকালে রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসক কার্যালয়ে গিয়ে আবাসিক এলাকায় আসকের কার্যালয় পরিচালনার কারণ জানতে চান। এ সময় আসকের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে জানানো হয়, ভাড়াটিয়া হিসেবে সকল শর্ত মেনেই কার্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, বাংলাদেশ এনজিও ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিয়েই আসক দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে মানবাধিকার রক্ষায় কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসব অনুমোদন সনদে আসকের বর্তমান কার্যালয়ের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে।

শীপা হাফিজা বলেন, বিষয়গুলো জানানো সত্ত্বেও রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আগামী দুই মাসের মধ্যে কার্যালয় ছাড়ার নির্দেশ দেন, পাশাপাশি দুই লক্ষ টাকা জরিমানা করেন।

আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাটি আসকের জন্য প্রযোজ্য নয়—এ কথা জানালেও বিষয়টি আমলে না নিয়ে জরিমানা আদায় করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

শীপা হাফিজার যুক্তি, ইমারত নির্মাণ আইনের ওই ধারাটি ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যেখানে ভবন মালিক, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এবং এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান জড়িত। কিন্তু আসক কোনোভাবেই ভবন নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, কেবলমাত্র ভাড়াটে হিসেবে ভবনটি ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, “ম্যাজিস্ট্রেটের আনা অভিযোগ আসকের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হলে তিনি অফিস সিলগালা করা দেওয়াসহ কর্মীদের গ্রেপ্তার করার হুমকি দেন। অথচ মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ অনুযায়ী অভিযুক্ত কর্তৃক অভিযোগ অস্বীকার করে বিচারিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।”

শীপা হাফিজা বলেন, “ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব যুক্তি না মেনে জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক স্বাক্ষর আদায় করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশের কপিও আসককে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন আসক নির্বাহী পরিচালক।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।