মালয়েশিয়ায় ৭৬৭ বাংলাদেশিসহ গ্রেপ্তার ৯৩৬, অবৈধ অভিভাসনের বিপক্ষে বাংলাদেশ
2016.11.29
বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার দুই সপ্তাহ পার না হতেই মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। গত রোববার মালয়েশিয়ার সমুদ্রতীরের পোর্ট ডিকসনের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ৭৬৭ বাংলাদেশিসহ ৯৩৬ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে সেদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ।
বাংলাদেশ সরকার ও জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা এই গ্রেপ্তার অভিযানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাঁরা বলছেন, দেশটির সঙ্গে বৈধভাবে ও কম খরচে জনশক্তি পাঠানোর চুক্তি হয়েছে। সেখানে অবৈধ শ্রমিক থাকা কাম্য নয়।
নেগেরি সেম্বাইলান রাজ্যের ইমিগ্রেশন পুলিশের পরিচালক হাপজান হুসাইনি গত মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “ইমিগ্রেশন পুলিশ ছাড়াও পুলিশ বাহিনী, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি), জাতীয় নিবন্ধন বিভাগ (এনআরডি), দুর্নীতি দমন কমিশন (এমএসিসি), সিভিল ডিফেন্স ফোর্স (এপিএম) এবং মালয়েশিয়া ভলান্টিয়ার বিভাগ (রেলা) যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করে।”
এর আগে হাপজান হুসাইনিকে উদ্ধৃতি করে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বারনামা জানিয়েছে, আটক হওয়া অভিবাসীদের বয়স ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। তাদের বিরুদ্ধে জাল ভিসা ব্যবহার, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজপত্র নিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থানসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ থেকে নির্মাণ শ্রমিক, প্ল্যান্টেশন ও ম্যানুফ্যাকচার খাতে কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়া । ঢাকার একটি হোটেলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলামের সঙ্গে সফররত মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী রিচার্ড রায়ট আনাক জায়েমের এ বিষয়ে চুক্তি সই হয়।
ওই ঘোষণা অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।
বারনামার খবরে বলা হয়, আটকদের ৭৬৭ জন বাংলাদেশ, ৮০ জন পাকিস্তান, ৫০ জন ভারত, ২২ জন ইন্দোনেশিয়া, ১৩ জন শ্রীলঙ্কা, তিনজন মিয়ানমার ও একজন নেপালের নাগরিক।
সম্প্রতিকালে চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া শ্রমিকদের নিয়োগ চুক্তি নবায়নের সুযোগ দেয় মালয়েশিয়া। তাতে খুব বেশি সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই চুক্তি নবায়নের সুযোগ শেষ হতেই অবৈধ অভিবাসীদের আটকে অভিযান শুরু করেছে দেশটি।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী মনে করেন, এই গ্রেপ্তার বৈধ অভিবাসনের পথ সুগম করবে। মঙ্গলবার বেনারকে তিনি বলেন, “আমরা অবৈধ অভিবাসনকে মোটেও সমর্থন করি না। যারা অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় গেছে, তারা নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং দেশের জন্য বোঝা।”
এক প্রশ্নের জবাবে আলী হায়দার বলেন, অবৈধ শ্রমিকেরা ফেরত আসায় বিদেশি আয়ের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
এদিকে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস এ–সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। দূতাবাস শুধু পোর্ট ডিকসনের জিমাহ এলাকা থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আটক করার কথা জানতে পেরেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা থেকে যোগাযোগ করা হলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা দুই–তিনশ শ্রমিককে গ্রেপ্তারের কথা জেনেছি। এসব খবর ওরা তাৎক্ষণিকভাবে জানায় না, কিছুটা সময় নেয়। দু-এক দিনের মধ্যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, যারা আটক হয়, তাদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র থাকে না। ফলে তাদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি সেটা চট করে বলা কঠিন।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার। সেখানে দক্ষ ও আধাদক্ষ কর্মী পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে কর্মী প্রেরণের কৌশল নিয়ে উভয় পক্ষ একাধিকবার বৈঠক করেছে।
এর আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে দালাল চক্র নির্মূল করার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। সরকারের লক্ষ্য অভিবাসন ব্যয় হ্রাস করা এবং সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী পাঠানো।
জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে, এর কারণ কম পারিশ্রমিকে বাংলাদেশের শ্রমিক নিতে পারে সেখানকার কোম্পানিগুলো।
ওই কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়া অবৈধ শ্রমিকদের গ্রেপ্তারের যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটা স্বাভাবিক। এর আগে মালয়েশিয়া অবৈধ শ্রমিকদের ক্ষমা করেছে বা বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এরপরও যারা অবৈধভাবে আছে, তাদের গ্রেপ্তার ও বিচার করবে দেশটি—এখানে আপত্তি করার সুযোগ নেই।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন মালয়েশিয়া থেকে হাতা ওয়াহারি।