অমুসলিমদের বাড়তি সুবিধা দিয়ে ভারতের লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পাশ

জয়শ্রী বালাসুব্রামানিয়ান ও ঝুমুর দেব
2019.01.08
নয়াদিল্লি ও গৌহাটি
190108-IN-Assam-protest-1000.jpg আসামের রাজধানী গৌহাটিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভ। ৮ জানুয়ারি ২০১৯।
[এএফপি]

ভারতে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে হিন্দুসহ অমুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিকত্ব সুবিধা দিয়ে মঙ্গলবার পাশ হওয়া বিলের প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে আসামসহ উত্তরপূর্বাঞ্চল।

এই আইনের কারণে নিজেদের ভূমিতে কোনঠাসা হয়ে পড়ার আশঙ্কায় প্রথম থেকেই আসামের জাতীয়তাবাদী দলগুলো এর বিরোধিতা করে আসছিল। তাদের মতে এই বিলটি ১৯৮৫ সালের আসাম অ্যাকর্ড বা আসাম চুক্তি বিরোধী।

মঙ্গলবার লোকসভায় পাশ হওয়া সংশোধিত বিলটির ফলে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে নীপিড়নের শিকার হয়ে ভারতে পাড়ি জমানো হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, শিখ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন শরণার্থী হিসেবে ভারতে বসবাসের অধিকার ও পরবর্তীতে নাগরিকত্ব পাবেন।

নাগরিকত্ব পাওয়া এই অভিবাসীদের “সারা দেশে ভাগ করে দেওয়া হবে” বলে মঙ্গলবার সংসদে জানিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।

এই আইনটি ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধিত রূপ। বর্তমান আইনে ভারতে ১২ বছর বসবাসের পর নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়ম থাকলেও নতুন আইনে তা কমিয়ে ৭ বছর করা হয়েছে।

এই সংশোধনী প্রস্তাবটি ২০১৬ সালে লোকসভায় উত্থাপন করা হলেও তখন তা অনুমোদন পায়নি।

এদিকে বিলটিকে ভারতীয় সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করে এর বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ বলেন, “এই আইনটি সংবিধান বিরোধী নয়, এর ফলে প্রতিবেশী তিনটি দেশ থেকে নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘুরা ভারতে আশ্রয়ের সুযোগ পাবে, যেহেতু ভারত ছাড়া তাঁদের আর কোথাও যাবার জায়গা নেই।”

আইনটিকে ক্ষমতাসীন দলের সাম্প্রদায়িক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রতিফলন হিসেবে চিহ্নিত করে অন্যান্যদের সাথে মুসলমানদেরকেও আইনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সংসদে দাবি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

উত্তাল উত্তরপূর্বাঞ্চল

নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে আসামসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক জোট থেকে সোমবার বের হয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছে অসম গণ পরিষদ।

আসামে স্থানীয় সংগঠনগুলোর ডাকে মঙ্গলবার অর্ধ দিবস বন্ধ পালিত হয়েছে। ত্রিপুরায় আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংবাদ দিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম।

বন্ধ চলাকালে ট্রেনসহ মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা।

“এই আইনটি অবৈধ বাংলাদেশিদের আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এনে জড়ো করার জন্য বিজেপি সরকারের একটি কূট কৌশল। জনমতকে অবজ্ঞা করে মোদি সরকার এই আইনটি পাশ করেছে। আমরা এই অঞ্চলের আদিবাসীদের সুরক্ষার জন্য যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত,” বেনারকে বলেন নিখিল আসাম ছাত্র ইউনিয়নের উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য।

অভিবাসন বিরোধী সংগঠন আসাম গণ পরিষদের সংগঠক অতুল বোরা বেনারকে বলেন, “এই বিলটি আইনে পরিণত হলে বর্তমানে অবৈধভাবে আসামে বাস করা দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশি হিন্দু নাগরিকত্ব পাবে। আরো অংসখ্য বাঙালি হিন্দু আসামে প্রবেশ করবে। এর ফলে বাঙালি আগ্রাসনের মুখে আসামের মানুষজনের কর্মসংস্থানসহ সংস্কৃতিও মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়বে।”

তিনি বলেন, “প্রত্যেক বাংলাদেশিকে আসাম ছাড়তে হবে। বাছাই করা কিছু লোকের জন্য আলাদা নিয়ম হতে পারে না। আমরা আসাম চুক্তি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর, যাতে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে আসামে প্রবেশ করা প্রত্যেক বিদেশিকে তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।”

প্রসঙ্গত, আশির দশকের শুরুতে অসম গণ পরিষদের বাঙালি বিরোধী আন্দোলন ও সহিংসতায় আসামে দু হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন।

আসামের নাগরিকপঞ্জি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে ভারতে পাড়ি জমানো সব বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচিত।

গত জুনে প্রকাশিত আসামের নাগরিকপঞ্জির খসড়া তালিকা থেকে প্রায় চল্লিশ লক্ষ লোক অবৈধ বিদেশি হিসেবে বাদ পড়েন। যাদের বেশিরভাগই বাঙালি মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

নাগরিকপঞ্জিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপিলের মেয়াদ গত ৩১ ডিসেম্বর পার হয়ে গেলেও প্রায় দশ লাখ মানুষ প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ আবেদন করতে পারেননি।

যারা আবেদন করতে পারেননি, তাঁদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সে সম্পর্কে ক্ষামতাসীন বিজেপি এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে নতুন আইন পাশ হলে মুসলিমরা ছাড়া অন্য সম্প্রদায়ের মানুষেরা বাড়তি সুবিধা পাবেন।

ভারতীয় সংসদের লোকসভায় পাশ হওয়া বিলটি রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর আইনে পরিণত হওয়ার আগে সংসদের উচ্চকক্ষ বা রাজ্যসভায় পাশ হতে হবে। তবে রাজ্যসভায় ক্ষমতাসীন বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।