বিশ্লেষকদের মতে, ভারতে বিজেপির বিজয় বাংলাদেশ সরকারের জন্য সহায়ক হতে পারে

আহম্মদ ফয়েজ
2024.06.05
ঢাকা
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতে বিজেপির বিজয় বাংলাদেশ সরকারের জন্য সহায়ক হতে পারে নয়া দিল্লিতে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছে জাতীয় নির্বাচনে নিজের দল ও জোটের সাফল্যে বিজয়চিহ্ন দেখাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৪ জুন ২০২৪।
[এএফপি]

টানা তৃতীয়বারে মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার পথে নরেন্দ্র মোদি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে বাংলাদেশের জনগণের সুস্পষ্ট কোনো সুবিধার সম্ভাবনা না থাকলেও তাঁর এই ধারাবাহিক জয় বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

ভারতের ১৮তম জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে মঙ্গলবার। এতে মোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) ২৯০টির বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বেনারকে বলেন, এটা পরিষ্কার যে মোদি আবারও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন, “তবে বিজেপির ক্ষমতায় আসার ফলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কোনো কিছু পাওয়ার নেই।”

প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বেনারকে বলেন, “ভারতের এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের জন্য অর্থবহ কিছু বহন করছে না। তবে পূর্ব সম্পর্কের কারণে কর্তৃত্ববাদী শাসন চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই জয় আওয়ামী লীগের জন্য সহায়ক হতে পারে।”

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী নীতি অনুসরণ, সাংবাদিক ও সমালোচকদের গ্রেপ্তার, গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ, বিরোধীদের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগ জানিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য পশ্চিমা দেশগুলো অব্যাহত আহ্বান জানালেও নরেন্দ্র মোদির সরকার “বাংলাদেশের নির্বাচন দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়” হিসেবে উল্লেখ করে প্রসঙ্গটি পুরোপুরি এড়িয়ে যায়।

এদিকে, জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভের পর গত ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণব কুমার ভার্মার সঙ্গে এক বৈঠকের শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের “বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে সংশয় আর অবিশ্বাসের দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভবিষ্যতেও ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে চিড় ধরার কোনো কারণ দেখছি না।”

“নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার নেতা। আমরা তাঁর বিজয়ে খুশি,” চলতি নির্বাচনে বিজেপির বিজয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বুধবার বেনারকে বলেন জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

“মোদি সরকার আবারও ক্ষমতায় আসায় আমাদের জন্য ইতিবাচক ঘটনা ঘটল। অন্য কেউ এলেও আমাদের কোনো সমস্যা নেই,” যোগ করেন তিনি।

দিলারা চৌধুরীর মতে, “মোদির দীর্ঘ শাসনামলে দেখা গেছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক মানুষে মানুষে নয়, বরং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ ছিল।”

তবে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার বেনারকে বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা দু’দেশের সম্পর্ক হবে মানুষে মানুষে। কোনো নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক না হয়ে স্বার্থ বিবেচনায় মানুষে মানুষে সম্পর্ক হলে আর কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকে না।”

ভারতে শক্তিশালী বিরোধীদল

মঙ্গলবার প্রকাশিত নির্বাচনী ফলাফল অনুযায়ী বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) জয় পেয়েছে ২৯৩ আসনে এবং একক দল হিসেবে বিজেপি জিতেছে ২৪০টি আসনে।

ভারতীয় নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, সরকার গঠন করতে হলে কমপক্ষে ২৭২ আসন প্রয়োজন।

বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভারত এবার “একটি শক্তিশালী বিরোধী দল” পেতে যাচ্ছে বলে বুধবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক দেবজ্যোতি চন্দ।

নির্বাচনে বিরোধী দল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট জয় পেয়েছে ২৩২টি আসনে, এককভাবে কংগ্রেস জিতেছে ৯৯ আসনে।

বিগত দুটি লোকসভা নির্বাচনে ধারাবাহিক পরাজয়ের সম্মুখীন হওয়া কংগ্রেসের এবার প্রায় ১০০ আসনে জয় লাভ করা দলটির “পুনরুত্থানের ইঙ্গিত” বলে এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করে টাইমস অব ইন্ডিয়া। এছাড়া বিরোধী জোটের বিশাল সাফল্য “বিজেপির আধিপত্যের জন্য” একটি শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দন

বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবং ভারতের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

তিনি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়াকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

“আমরা এনডিএ, ‘ইন্ডিয়া’ এবং ভারতের জনগণকে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য অভিনন্দন জানাই,” পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন তিনি।

এ সময় তিনি ভারতের নির্বাচনকে গণতন্ত্রের অনুপ্রেরণা ও উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।