জঙ্গি আতঙ্কের মধ্যে ঢাকায় ৫ দিনের আইপিইউ সম্মেলন শুরু

জেসমিন পাপড়ি
2017.03.31
ঢাকা
ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাঁ থেকে আইপিইউর প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আইপিউ’র সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং। মার্চ ৩১, ২০১৭।
স্টার মেইল

ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬ তম সম্মেলন, যা এযাবৎকালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। শনিবার পাঁচ দিন ব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারা দেশে জঙ্গি আতঙ্কের মধ্যেই এ সম্মেলন হতে যাচ্ছে, যেখানে বিশ্বের ১৩২টি দেশের ৪৫ জন স্পিকার, ৩৭ জন ডেপুটি স্পিকার, সাড়ে ছয় শ পার্লামেন্ট সদস্যসহ ১৫ শতাধিক প্রতিনিধির অংশ নেওয়া কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ অতিথি ঢাকায় পৌঁছেছেন।

শুক্রবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইপিইউ’র পক্ষ থেকে সম্মেলন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানানো হয়। সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দরে জোরদার করা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। সাম্প্রতিক সময়ের জঙ্গি আতঙ্ক এ সম্মেলনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের আহ্বান থাকবে এবারের আইপিইউ সম্মেলনে। তবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া জঙ্গিবাদ দমনে সরকারগুলোর পাশাপাশি পার্লামেন্টের ভূমিকা কী হওয়া উচিত সে বিষয়টিরও প্রাধান্য থাকবে সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে।

এবারই প্রথম ‘গ্রিন অ্যাসেম্বলি’র আয়োজন করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সংসদীয় ফোরাম। এ বিষয়ে আইপিইউ জানায়, সম্মেলনে অতিথিরা বিমানে আসা এবং এ দেশে অবস্থান করায় যে কার্বন নিঃসরণ হবে, হিসাব করে আগামী ৩ কিংবা ৪ এপ্রিল তা নিউট্রালাইজ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া কাগজের ব্যবহার কমাতে ‘আইপিউ১৩৬’ নামে একটি অ্যাপও তৈরি হয়েছে।

বৈষম্য দূর ও জঙ্গিবাদ দমন

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলনে আইপিইউ’র বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী, সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং ও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এবারের আইপিইউ সম্মেলনে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য বিলোপের বিষয়টি ব্যাপক পরিসরে আলোচনা হবে বলে তারা জানান। এ ছাড়া বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রধান বাধা সহিংস উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস দমনের কৌশল নির্ধারণের বিষয়টিও এবার বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘বৈষম্যের প্রতিকার: সকলের জন্য মর্যাদা ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণ’। আইপিইউ সম্মেলনে বৈষম্যের ওপর জোর দেওয়া এবং এ বিষয়টির সঙ্গে সহিংস উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসের যোগসূত্র প্রসঙ্গে আইপিউ’র সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং বলেন, বিশ্ব নেতারা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যে (এসডিজি) একজনকেও উন্নয়নের বাইরে না রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু অসমতা ও বিচারহীনতার কারণে বিশ্বব্যাপী সহিংস উগ্রবাদ বাড়ছে। অনেকে মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত। যা নিয়ে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়।

এই প্রেক্ষাপটে এবারের আইপিইউ সম্মেলনের আলোচনায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য গুরুত্ব পাবে বলে জানান তিনি। সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ রোধে সংসদের ভূমিকার বিষয়টিও আলোচনা হবে বলে জানান মার্টিন।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যার রূপ নিয়েছে জানিয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “কেবলমাত্র সামরিক কৌশল দিয়ে এর মোকাবিলা করা যাবে না। এর মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এ কাজে সরকারের গৃহীত কৌশলের পাশাপাশি সংসদ সদস্যরা কীভাবে এ নিয়ে কাজ করতে পারেন, আইপিউ নির্বাহী কমিটিতে সে কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হবে।”

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ১৩৪৮ জন নিবন্ধন করেছেন। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৩২ দেশের সংসদীয় প্রতিনিধি দলসহ মোট ১৬৪টি প্রতিনিধি দল এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে।

বিরাট সংখ্যক এই বিদেশি অতিথির জন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এ উপলক্ষে আট হাজার পোশাকধারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অতিথিদের নির্বিঘ্ন চলাচলে সতর্ক অবস্থানে ট্রাফিক বিভাগও। এ ছাড়া সম্মেলন উপলক্ষে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

“সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি জঙ্গি হামলা ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযান এ সম্মেলনে কোনো প্রভাব ফেলবে না,” বেনারকে জানান ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। এর আগে গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আইপিইউ সম্মেলন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বড় অর্জন বাংলাদেশের

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এ আয়োজন ‘বড় অর্জন’ অভিহিত করে স্পিকার শিরীন শারমিন গতকাল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন, গণতন্ত্রের সফল অভিযাত্রা ও সুদূরপ্রসারী উন্নত, সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাগুলো আমরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সামনে তুলে ধরতে পারব।”

এদিকে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির জন্যও আইপিইউকে কাজে লাগানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন সাবের হোসেন চৌধুরী।

সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী বেনারকে বলেন, “আইপিইউ বিশ্বের ৬৫০ কোটি মানুষকে প্রতিনিধিত্বকারী জনপ্রতিনিধিদের সংগঠন। এই বৃহত্তর পরিসরের সামনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক অগ্রগতি তুলে ধরে দেশের ব্র্যান্ডিং করতে পারব।”

আইপিইউকে মিনি জাতিসংঘ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মুহ. রুহুল আমিন বেনারকে বলেন, “এই সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে প্রমাণ হবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক ক্ষেত্রে কাজ করতে যোগ্য এবং পারদর্শী।”

এদিকে আইপিইউ সদস্য হয়েও ঢাকার সম্মেলনে অংশ নিতে আসছে না পাকিস্তান। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিক বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রতি বৈরী আচরণের অভিযোগ তুলে আইপিইউ সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার কথা জানান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।