তামিমসহ তিন জঙ্গির মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবেই দাফন

শাহরিয়ার শরীফ
2016.12.15
ঢাকা থেকে
গুলশানে হলি আটির্জান রেস্তোরাঁ থেকে জিম্মিদের উদ্ধারে পরিচালিত সেনা নেতৃত্বাধীন অভিযান। গুলশানে হলি আটির্জান রেস্তোরাঁ থেকে জিম্মিদের উদ্ধারে পরিচালিত সেনা নেতৃত্বাধীন অভিযান। জুলাই ০১, ২০১৬।
স্টার মেইল

নিহত হওয়ার সাড়ে তিন মাস পর গতকাল বৃহস্পতিবার নব্য জেএমবির নেতা তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিন জঙ্গির লাশ দাফনের জন্য আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে লাশগুলো ওই প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেয় পুলিশ।

এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট নতুন তথ্য প্রকাশ করে বলেছে, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালাতে জঙ্গিরা মোট আট লাখ টাকা খরচ করেছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে পাওয়া তথ্য থেকে তাঁরা এই হিসাব বের করেছেন।

“হামলায় সাধারণত খরচ খুব বেশি হয় না। কিন্তু জঙ্গি মোকাবিলায় ও পরবর্তী হামলা ঠেকাতে কয়েকগুণ খরচ করতে হয়,” বেনারকে জানান নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন।

সাখাওয়াত বলেন, গুলশানে হামলার পর বাংলাদেশের সরকারের খরচ এখন বেড়ে গেছে। বাহিনীগুলোর অতিরিক্ত অভিযান, তল্লাশি চৌকি, টহল, যানবাহন, বাড়তি ইউনিট তৈরি, নতুন সরঞ্জাম কেনাসহ বিভিন্নখাতে খরচ বেড়েছে।

এ পর্যন্ত ২০ টি লাশ আঞ্জুমানের কাছে

পুলিশের হিসেবে, এ পর্যন্ত জঙ্গিদের ২০টি মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কল্যাণপুরে নিহত ১৪ জঙ্গিসহ ১৫ জনের লাশ দাফনের জন্য আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে বেওয়ারিশ হিসেবে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে আরও দুটি লাশ অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফনের জন্য আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামে হস্তান্তর করা হয়েছিল।

গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার একটি বাড়িতে পুলিশের অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হন। ওই সময় পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতদের একজনকে জঙ্গিনেতা তামিম চৌধুরী এবং আরেকজনকে তামিমের সহযোগী ও কলেজছাত্র ফজলে রাব্বি বলা হয়। নিহত অপরজনকে তাওসিফ হোসেন বলে জানানো হয়। তাদের লাশও গতকাল আঞ্জুমানকে দেওয়া হলো।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের বিভিন্ন প্রকাশনার ওপর ভিত্তি করে তামিম আহমেদ চৌধুরীকে সংগঠনটির বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক বলা হচ্ছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তামিমকে ‘নব্য জেএমবি’র শীর্ষ নেতা ও গুলশান হামলার সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক বলা হচ্ছে।

অভিযানের পর তামিম, তার বাবা ও বোনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য কানাডা পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষায় বাবা ও বোনের ডিএনএর সঙ্গে তার নমুনা মিলে গেছে বলে গত ৯ নভেম্বর পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়।

নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার একটি বাড়িতে পুলিশের অভিযানে তামিমসহ তিন জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আলমগীর সিদ্দিকের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ ও আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কর্মীরা গতকাল দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে যান।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আলমগীর সিদ্দিক মর্গে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তিন জঙ্গির লাশ অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফনের জন্য আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

“ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী এই তিন ব্যক্তির লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে,” বেনারকে জানান আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কর্মকর্তা রুহুল আমিন।

আরও ১০টি মরদেহ মর্গে

রাজধানীর রূপনগরে জঙ্গি আস্তানায় নিহত সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলাম ও আজিমপুরে নিহত তানভীর কাদেরীর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের হিমঘরে রাখা হয়েছে।গাজীপুরের হরিনাল ও পাতারটেকে পুলিশ এবং র‍্যাবের পৃথক অভিযানে নিহত ১০ জনের মধ্যে আটজনের লাশ এখনো কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল মর্গের হিমঘরে রয়েছে।

আট লাখ টাকায় গুলশান হামলা!

হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালাতে জঙ্গিরা মোট আট লাখ টাকা খরচ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।

গত ১ জুলাই রাতে জঙ্গিরা গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়ে ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে। তাৎক্ষণিক অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুজন কর্মকর্তা। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের জিম্মি উদ্ধার অভিযানে হামলায় জড়িত পাঁচ জঙ্গি এবং ওই রেস্তোরাঁর এক পাচক সাইফুল ইসলাম চৌকিদার নিহত হন। রেস্তোরাঁর আটক আরেক কর্মী জাকির হোসেন ওরফে শাওন পরে হাসপাতালে মারা যান।

এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলা তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। এই ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, হামলার ঘটনা তদন্তে জঙ্গিদের খরচ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে শুধু এ হামলার জন্য তারা খরচ করেছিল প্রায় আট লাখ টাকা, যার মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনতে।

এ ছাড়া তাদের প্রশিক্ষণ পর্যায়ে বাসা ভাড়া করা, খাওয়া, যাতায়াত ইত্যাদি সব মিলিয়ে আরও তিন লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে বলেও জানান তিনি।

টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার টাকার উৎস সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু জানার বাকি রয়ে গেছে। পুলিশ বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখ্য, ওই হামলার জন্য হুন্ডির মাধ্যমে দুই চালানে ২৮ লাখ টাকা বিদেশ থেকে এসেছে বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ। এর বাইরে র‍্যাবের অভিযানে গত ৮ অক্টোবর নব্য জেএমবির নেতা সারোয়ার জাহানের বাসা থেকে নগদ ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।