জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের দুই জঙ্গি গ্রেপ্তার

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.12.20
র‌্যাবের অভিযানে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির দুই সদস্য । র‌্যাবের অভিযানে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির দুই সদস্য । ডিসেম্বর ২০, ২০১৬।
নিউজরুম ফটো

বেশ কয়েক দিন বিরতির পর রাজধানী ঢাকার পল্লবী এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির দুই সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। গতকাল মঙ্গলবার জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের এই দুই সদস্যকে আটক করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে; আতিকুর রহমান মিলন (২১) ও খাদেমুল ইসলাম ওরফে খাদেম (২৮)। তাঁরা মূলত এই সংগঠনের প্রচারক ও অর্থ সংগ্রাহক হিসাবে কাজ করত বলে র‍্যাবের দাবি।

“প্রাথমিকভাবে জানা গেছে আতিক সংগঠনের সদস্যদের অর্থের জোগান দিত আর সংগঠনের কাজে ঘর ছেড়ে আসা সদস্যদের আশ্রয়দাতা ছিল খাদেমুল,” বেনারকে জানান র‌্যাবের (৪) সহকারী পুলিশ সুপার অনু মং।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাবের কাওরান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে র‌্যাব ৪ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) খন্দকার লুৎফুল কবীর গ্রেপ্তারকৃতদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, তাঁদের কাছ থেকে পাঁচটি জিহাদি বই, দুটি ব্যাগ, বিভিন্ন ধরনের প্রচারপত্র, নগদ ৩৭ হাজার টাকা ও চারটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আতিকুর রহমান ২০১১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পাস করে। ২০১৪ সালে ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে সে রংপুরে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করতে। ২০১৫ সালে সে সাভার কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে কিছুদিন ক্লাস করার পর অর্থাভাবে পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়।

এ বছরের জানুয়ারি মাসে ফেসবুকে ফজলে রাব্বী নামের একজনের সঙ্গে আতিকের পরিচয় হয়। পরে ফজলে রাব্বীর মাধ্যমেই আতিক জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয়। ফজলে রাব্বী ও নাজমুলকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানান লুৎফুল কবির।

র‍্যাব জানায়, ফজলে রাব্বীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। সে নিজেকে জেএমবি’র (সারোয়ার-তামিম গ্রুপের) সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয়। ফজলে রাব্বী তার ফেইস বুক আইডিতে যেসব জিহাদি পোস্ট দিত, সেগুলো মিলন লাইক দিয়ে তার নিজের আইডিতে শেয়ার করত। পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়।

মিলনকে ফজলে রাব্বী ২০১৬ সালের জুলাই মাসের দিকে আব্দুর রহমান নামে সংগঠনের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। গত ৮ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে র‌্যাবের অভিযানে আব্দুর রহমান ওরফে সারোয়ার জাহানের মৃত্যু হয়। এরপর মিলন জানতে পারে উল্লেখিত বড় ভাই জেএমবির একটি গ্রুপের প্রধান।

লুৎফুল কবীর আরও জানান, আব্দুর রহমান বিভিন্ন সময় মিলনকে অর্থ বহনের কাজে নিয়োগ করত। এরই ধারাবাহিকতায় মিলন গাজীপুরসহ কয়েকটি জায়গায় অর্থ দিয়ে আসে এবং টঙ্গীর একটি বস্তিতে অর্থ দিতে গিয়ে খাদেমুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

র‍্যাবের তথ্য হচ্ছে, যেসব জঙ্গি প্রাথমিক পর্যায়ে বাড়ি ছেড়ে চলে আসত তাদের আশ্রয় প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল খাদেমুল ও নাজমুল। সাধারণত খাদেমুল এই সকল জঙ্গিদের আশ্রয় দানের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে টাকা পেত।

মো. খাদেমুল ইসলাম খাদেম ওরফে গাজোয়াতুলের বিষয়ে র‌্যাব জানায়, ‘সে ১৯৯৫ সালে ফায়দাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে। পারিবারিক অর্থ সংকটের কারণে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। ছোট ভাই নাজমুলের মাধ্যমে ইসলামি জিহাদের প্রতি অনুপ্রাণিত হয় সে। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে জেএমবির (সারোয়ার-তামিম গ্রুপের) প্রচার ও প্রসার নিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কথা বার্তা হয়। এরপর ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের প্রথম দিকে সিলেটের নীরবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক মারজান বেনারকে বলেন, "গুলশান হামলার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো জঙ্গি দমনে প্রশংসনীয় কিছু কাজ করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি দমন অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো কিছু ঘটনা ঘটেছে।"

ওই শিক্ষক বলেন, "মুসলিমপ্রধান এই দেশে জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না। মানুষ জঙ্গিবাদ পছন্দ করে না। তাই র‍্যাব–পুলিশ যদি আন্তরিকতার সঙ্গে এটা দমন করতে চায়, সেটি সম্ভব।"

জঙ্গি নারী মা হলেন

কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন কারাগারে বন্দী নারী জঙ্গি আফরিন আক্তার প্রিয়তী ওরফে ফাতেমা ফেরদৌস (২২)। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তারা দুজনই সুস্থ আছেন।

আফরিন আক্তার প্রিয়তী ওরফে ফাতেমা ফেরদৌস নব্য ধারার জেএমবির শীর্ষ নেতা নূরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী। পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, জঙ্গি মারজান পলাতক রয়েছে।

গত ১২ আগস্ট ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে বলেন, গুলশান হামলায় মাস্টারমাইন্ডদের একজন মারজান। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এর আগে কারাগারে বন্দী জঙ্গি আফরিন ওরফে প্রিয়তীকে অসুস্থ অবস্থায় প্রথমে গাজীপুরের শহীদ তাজ উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে একটি ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালায় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। পরে ওই বাসা থেকে তানভীর কাদরী ওরফে জামসেদ হোসেন ওরফে শমসের উদ্দিন ওরফে আব্দুল করিম (৪০) নামে এক জঙ্গির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ সময় আহতাবস্থায় আটক করা হয় আফরিন ওরফে প্রিয়তীসহ তিন নারী জঙ্গি ও নিহত করিমের ১৪ বছর বয়সী এক ছেলেকে। তখন থেকে জেলে রয়েছেন প্রিয়তি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।