আইএস ও জেএমবি সম্পৃক্ত ভারতীয় জঙ্গির আটকাদেশ বৃদ্ধি
2016.12.21
গৌহাটি, ভারত
গত ৪ জুলাই থেকে আটক ভারতীয় নাগরিক মসিহউদ্দিন ওরফে আবু মুসা আইএস এবং বাংলাদেশের জেএমবি'র সাথে যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)-এর মুখপাত্র শ্যামল ঘোষ।
আইএস এবং জেএমবি যৌথভাবে ভারতে অবস্থানকারী আমেরিকানদের উপর আক্রমণের পরিকল্পনা করছে বলে আবু মুসার দেয়া তথ্যের উপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিসেম্বরের শুরুতে এফবিআইর প্রতিনিধিরা ভারত সফর করেন বলেও বেনারকে জানান এনআইএ’র এই কর্মকর্তা।
এনআইএ’র মতে বাংলাদেশের জেএমবি পয়লা জুলাই ঢাকায় হলি আর্টিজান রেস্তোরায় আক্রমণের দায় স্বীকারকারী আইএস-সম্পৃক্ত একটি সংঠন। তবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের কর্মকর্তারা বরাবরই গুলশান হামলায় আইএস সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকারের পাশপাশি, বাংলাদেশে আইএস-এর অস্তিত্বের কথাও অস্বীকার করে আসছেন।
বাংলাদেশ সরকার জঙ্গি হামলার পেছনে নব্য জেএমবিকেই দায়ী করছে।
শ্যামল ঘোষ বেনারকে জানান, "মুসাকে আজ কলকাতার একটি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ আদালতে উপস্থিত করা হলে আদালত তার আটকাদেশের মেয়াদ জানুয়ারির ৩ তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত করেন।” পরবর্তী শুনানির আগেই এনআইএ মুসার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মুসার বিরুদ্ধে ভারতীয় বিধি অনুযায়ী রাষ্ট্র বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ আনা হবে বলে জানা যায়। তবে এ প্রসঙ্গে মুসার আইনজীবী মোহাম্মদ জাকিরের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মার্কিন নাগরিক হত্যার পরিকল্পনা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনআইএ’র একজন কমর্কতা বলেন “জিজ্ঞাবাদের সময় আবু মুসা জানিয়েছে, সে মোহাম্মদ সুলায়মান ওরফে আবু সুলায়মান নামে একজনের কাছ থেকে ভারতে আইএস-এর একটি বিশেষ সেল গঠনের দায়িত্ব পায়। যে সেলটির মূল উদ্দেশ্য হলো ভারতে মার্কিন নাগরিক ও সম্পদের উপর হামলা পরিচালনা করা।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী আবু সুলায়মান গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম। এনআইএ’র ওই কর্মকর্তা জানান বর্তমানে পলাতক সুলায়মান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে বলেও আবু মুসার কাছ থেকে জানা গেছে।
“ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা এখন মোটামুটি নিশ্চিত যে আবু মুসা হয়ত ঢাকার হলি আর্টিজান আক্রমণে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল।” বেনারকে জানান এনআইএ’র ওই কর্মকর্তা
সিরিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় আইএস-এর প্রধান সমন্বয়কারী শফি আরমারের সাথেও মসিহউদ্দিন ওরফে আবু মুসা পরিচিত ছিল বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের নাগরিক শফি আরমার ভারতে পর্যটন এলাকাগুলোতে হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন “ঢাকার হলি আর্টিজান আক্রমণের মতো পরিকল্পনা করার উদ্দেশ্যেই মূলত মুসা কলকাতায় মাদার তেরেসা সেন্টার এবং শ্রীনগরে বেড়ানোর নাম করে পরিদর্শন করতে যায়।”
মুসাকে এফবিআইর জিজ্ঞাসাবাদ
আইএস এবং জেএমবি যৌথভাবে ভারতে মার্কিন নাগরিকদের উপর আক্রমণের পরিকল্পনা করছে, মুসার দেয়া এই তথ্যের উপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এফবিআই ভারতে একটি বিশেষ দলকে পাঠায়।
এনআইএ’র কর্মকর্তা জানান “এফবিআইর সাত সদস্যের একটি দল গত ৮ ডিসেম্বর চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।” এফবিআই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য এনআই-কে সরবরাহ করেছে বলে জানালেও সেই সব তথ্য সম্পর্কে কিছু বলতে ওই কর্মকর্তা অস্বীকার করেন।
গত আগস্টে বাংলাদেশ পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল কলকাতায় গিয়ে আবু মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আবু মুসা ২০১৪র দিকে জেএমবির সাথে সম্পৃক্ত হয় বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন “জিজ্ঞাসাবাদে মুসা জানায়, জেএমবির নেতারা তাকে ভারতে বসেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করেন এবং অপারেশন পরিচালনার নির্দেশনা দেন।”
জিজ্ঞাসাবাদকালে আবু মুসা বাংলাদেশে জেএমবির ১২জন নেতার নাম উল্লেখ করে, যাদের মধ্যে দুজনকে বাংলাদেশ পুলিশ ইতোমধ্যে গ্রেফতারও করেছে বলে জানান মনিরুল ইসলাম।
সতর্কতা জরুরি
গুলশানে হলি আর্টিজানে আক্রমণের পরপর দক্ষিণ ভারতের তামিল নাড়ুর মুদি দোকানের কর্মচারি মসিহউদ্দিনের ফোনে এবং ইমেইলে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং সিরিয়া থেকে যোগাযোগের তথ্য পেয়েই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাকে নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসে।
পরে ৪ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে গ্রামের বাড়ি যাবার পথে মসিহউদ্দিনকে বরদান রেল স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের ভাষ্যমতে গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ১৩ ইঞ্চি একটি ছোরা এবং আফগানিস্তান ও সিরিয়ার জাল নোট উদ্ধার করা হয়।
ভারতীয় কর্মকর্তারা যখন ক্রমাগতভাবে দাবি করে আসছেন যে ভারতে আইএস-এর অস্তিত্ব কোনোভাবেই শক্ত নয়, সেই অবস্থায় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে ইতোমধ্যেই প্রায় অর্ধ শত ভারতীয় মুসলিম জঙ্গিদলে যোগ দেবার উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমিয়েছে। যাদের মধ্যে অন্তত সাতজন বিভিন্ন যুদ্ধে মারাও গেছে।
বিভিন্ন জঙ্গি দলের প্রতি সনানুভূতিশীল অন্তত ৭০জন এখন পুলিশের হাতে আটক রয়েছে বলেও জানা গেছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক জি.এম শ্রীবাস্তব বেনারকে বলেন, আইএস এবং জেএমবির সাথে মসিহউদ্দিনের সম্পৃক্ততা যদি প্রমাণিত হয়, তবে তা হবে ভারতের নিরাপত্তা হুমকির ক্ষেত্রে একটি বিশাল ঘটনা।”