জেএমবির ৫ সদস্য গ্রেপ্তার, আত্মঘাতী নারীর পরিচয় প্রকাশ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.12.28
জেএমবির ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেএমবির ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬।
স্টার মেইল

রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল। এরা জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) পুরানো সদস্য বলে পুলিশের দাবি।

গতকাল বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের সম্পর্কে তথ্য জানানো হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৫টা ৫৫ মিনিটের দিকে তাদের গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে; মো. রিয়াজ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার ওরফে রাকিব, মো. আবু বিন সাঈম ওরফে বাপ্পী ওরফে অপু, কাজী আবদুল্লাহ আল ওসমান ওরফে আহসান, মো. সোহাগ ওরফে চেয়ারম্যান ও মো. মামুন ওরফে হিমেল। তাঁদের ঠিকানা বা পূর্ণাঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের দেওয়া লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের তরল ও পাউডার-জাতীয় ৩০ কেজি বিস্ফোরক পদার্থ, বোমা তৈরির বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ যন্ত্রপাতি ও বই উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ওই বক্তব্যে বলা হয়, রাজশাহী এলাকায় জেএমবির দায়িত্বপ্রাপ্ত জিয়া, হায়দার ও শহীদুল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক থার্টি ফাস্ট নাইটে ঢাকায় নাশকতার লক্ষ্য নিয়ে তারা বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহ করেছিল।

তবে ব্রিফিংয়ে মনিরুল বলেন, “পুরোনো জেএমবির এই সদস্যরা ডাকাতি ও ছিনতাই করে জীবিকা নির্বাহ ও সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। এ রকমই কোনো কিছু করার জন্য তাঁরা ঢাকায় এসেছিলেন।”

ওই কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, এই গ্রুপের প্রধান রিয়াজ। সে কিছুদিন আগে ভারতে গিয়েছিল। সেখানে আরেক জঙ্গি নেতা সালেহউদ্দিন সালেহিনের সঙ্গে দেখা করে তাঁর পরামর্শ নিয়ে দেশে ফেরে।

তিনি আরও জানান, কয়েক মাস আগে ডাকাতি করে লুণ্ঠিত স্বর্ণ ও টাকাসহ জেএমবির একটি গ্রুপকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল এই গ্রুপটিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আত্মঘাতী নারীর নাম শাকিরা

গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর আশকোনায় পুলিশের অভিযানের সময় আত্মঘাতী নারীর নাম পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। জেএমবির পাঁচ সদস্য গ্রেপ্তার হওয়া উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম আশকোনার অভিযান নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

এ সময় মনিরুল বলেন, জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে নিহত নারীর নাম শাকিরা। তাঁর বাড়ি ভোলায়। তার স্বামী রাশেদুর রহমান ওরফে সুমন জেএমবির সদস্য ছিল। গত মাসে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

মনিরুল বলেন, সুমন গ্রেপ্তার হওয়ার পরই তার স্ত্রী শাকিরা নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়েবসাইট ডিএমপি নিউজ থেকে জানা যায়, গত ২১ নভেম্বর রাশেদুর রহমান ওরফে সুমনসহ তিনজনকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইউনিট যাত্রাবাড়ীর কাজলা থেকে গ্রেপ্তার করে। সুমন ডাকাতি করত এবং সেই অর্থ সাংগঠনিক কাজে ব্যয় করত।

মুসার নাম যেভাবে জেনেছে পুলিশ

মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মেজর (অব) জাহিদুল ইসলামের (২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে পুলিশি অভিযানে নিহত) মেয়ের মুখ থেকে পুলিশ প্রথম মঈনুল ইসলাম ওরফে মুসার নাম শুনতে পারে। তখন থেকেই তাঁকে খুঁজতে শুরু করে। প্রায় তিন মাসের চেষ্টায় তারা ‘সূর্য ভিলা’ নামে ওই বাড়িটি চিহ্নিত করেন।

মনিরুল বলেন, সূর্য ভিলা শনাক্তের আগে পুলিশ ওই এলাকার আরও তিনটি বাড়িতে অভিযান চালায়। চতুর্থ বাড়িতে গিয়ে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায়। সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ মঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা আশকোনার বাড়িটি ভাড়া নেয়। ওই মাসের মাঝামাঝি সময়ে সে বাসায় ওঠে।

গ্রেনেডগুলো হাতে তৈরি ও শক্তিশালী

মনিরুল ইসলাম জানান, আশকোনার জঙ্গি আস্তানার ১৯টি তাজা গ্রেনেড ছিল হাতে তৈরি। তবে এর মধ্যে সুইসাইডাল ভেস্টে যেসব গ্রেনেড ছিল সেগুলো ছিল বেশি শক্তিশালী।

শক্তিশালী গ্রেনেড হলে আত্মঘাতী ওই নারীর শরীর ছিন্নভিন্ন হয়নি কেন— এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, সুইসাইডাল ভেস্ট জঙ্গিদের নতুন প্রযুক্তি। নারীটি যে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তার মধ্যে কিছু ফুটেছে, কিছু ফোটেনি। তা ছাড়া বিস্ফোরণে তার নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে।

আর্থিক সহায়তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

চলতি বছরের ১ জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদ জামায়াতে জঙ্গি হামলায় নিহত চার পুলিশ সদস্যের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ পরিবারের স্বজনদের আর্থিক সহায়তা দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ পরিবারের স্বজনদের আর্থিক সহায়তা দেন।
নিউজরুম ফটো
চার পুলিশ সদস্য হলেন; ১ জুলাই গুলশান হামলায় নিহত গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সিনিয়র সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট রবিউল করিম এবং বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন। ৭ জুলাই শোলাকিয়া ঈদ জামাতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত কনস্টেবল জহুরুল হক ও কনস্টেবল আনসারুল হক।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বেনারকে জানান, “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে নিহত পুলিশ সদস্যের পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকার ৯টি চেক হস্তান্তর করা হয়েছে।”

রবিউল করিমের মা করিমন নেছা, পিতা সাজেদুল ইসলাম, স্ত্রী উম্মে সালমা, সালাউদ্দিন খানের স্ত্রী রিম করিম, কন্যা সামান্থা, পুত্র সেমরাইয়ান, কনস্টেবল আনসারুল হকের মা রাবেয়া আক্তার, স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম এবং কনস্টেবল জহিরুল হকের মা জুবাইদা খাতুন চেক গ্রহণ করেন।

চেক গ্রহণকালে নিহত পুলিশ পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী তাদের সান্ত্বনা দেন এবং ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।