খালেদা জিয়ার জন্য নতুন মেডিকেল বোর্ড গঠনের নির্দেশ
2018.10.04
ঢাকা
কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নতুন করে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত। একই সাথে তাঁকে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করতে নির্দেশনাও দিয়েছে হাইকোর্ট।
সরকার, বিএসএমএমইউ ও কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি ওই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইউনাইটেড বা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশনা চেয়ে খালেদা জিয়ার করা রিটটি নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালত বিএসএমএমইউ ও কারা কর্তৃপক্ষসহ বিবাদীদের প্রতি পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তাঁর সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে যথাযথ মানসম্মত চিকিৎসা দিতে হবে। পাশাপাশি আবেদনকারীকেও চিকিৎসা কাজে সহায়তা করতে বলা হয়েছে।
“খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে অবিলম্বে ভর্তি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষ, সরকার ও মেডিকেল বোর্ডকে বলেছেন আদালত,” আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন।
তিনি বলেন, “যেহেতু খালেদা জিয়া একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তাই তাঁকে সরকারের হেফাজতে থেকে সরকারের পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন আদালত,”
“তবে সরকার যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছিল তার মধ্যে তিনজন চিকিৎসকের ব্যাপারে তাঁরা আসামিপক্ষ) আপত্তি জানিয়েছিলেন এই বলে যে, তারা তিনজন সরকার দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সে জন্য আদালত তিনজনকে বাদ দিয়ে অন্য তিনজন নিয়ে বোর্ড গঠন করতে বলেছেন,” বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
এই আদেশ কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট করেছে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের।
“এই আদেশের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো খালেদা জিয়ার সাংবিধানিক ও আইনগত যে অধিকার ছিল তা থেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সরকার তাঁকে এত দিন বঞ্চিত করে রেখেছিল,” বলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের একজন কায়সার কামাল।
আদেশে যা আছে
গত সেপ্টেম্বরে মাসে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দিয়েছিল সরকার। এই বোর্ডে ছিলেন বিএসএমএমইউ’র অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী (ইন্টারনাল মেডিসিন), অধ্যাপক হারিসুল হক (কার্ডিওলজি), অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী (অর্থোপেডিক সার্জারি), সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলী (চক্ষু) ও সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ (ফিজিক্যাল মেডিসিন)।
আদেশে আদালত বলেছে, অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী ও সহযোগী অধ্যাপক বদরুনেসা আহমেদ নতুন ওই বোর্ডে থাকবেন। অপর তিনজন সদস্য সরকার মনোনয়ন করবে।
তবে তিনজনের কেউ আওয়ামী লীগ সমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বা বিএনপি সমর্থক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) অতীত বা বর্তমান নির্বাহী কমিটির সদস্য বা কর্মকর্তা হতে পারবেন না। বোর্ড ও কারা কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি ও চিকিৎসাসেবা শুরুর ব্যবস্থা করবে।
আদালত বলেছে, এই বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাসেবার সময় যত দূর সম্ভব আবেদনকারীর (খালেদা জিয়া) পছন্দমতো ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইকোনকলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান প্রাধান্য পাবে।
এ ছাড়া কোনো বিশেষ রোগের চিকিৎসার জন্য বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউ এর বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনতে পারবেন। তবে আবেদনকারীকে (খালেদা জিয়াকে) দেখতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কারাবিধি প্রযোজ্য হবে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড বা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন খালেদা জিয়া, যার ওপর গত মঙ্গল ও বুধবার শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার আদেশ দেওয়া হয়।
‘পেশাগত দায়িত্ব রাজনীতির ঊর্ধ্বে’
আদেশে আদালত জানায়, যদি চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের ওপর আস্থা না থাকে, তা বিবেচনার দাবি রাখে। তবে আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) যেহেতু দণ্ডিত কয়েদি তাই তাঁর যথাযথ চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের।
দেশের চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও আইনজীবীদের বেশির ভাগ দুটি ভাগে (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) বিভক্ত উল্লেখ করে আদালত বলে, “তবে পেশাদারির ক্ষেত্রে বা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় তাঁরা এসব বিভক্তির ঊর্ধ্বে থাকেন এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁরা পেশার নীতি অনুসরণ করেন বলে বিশ্বাস করি।”
এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করে খালেদা জিয়ার পছন্দ অনুযায়ী রাজধানীর কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর অনুরোধ জানায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন হবে বলে জানান।
এরপর সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে বলে গত ১৩ সেপ্টেম্বর জানান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহাবুবুল ইসলাম।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে বিচারিক আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডাদেশ দেয়। এরপর থেকে ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়া ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।