বেঁচে গেলেন খাদিজা, ফিরলেন বাড়িতে
2017.02.24
প্রায় পাঁচ মাস পর বাড়িতে ফিরলেন বখাটের চাপাতির কোপে গুরুতর আহত খাদিজা।
“আমি ভালো আছি, খুব ভালো আছি। সবাইকে দেখে খুশি লাগছে, খুব খুশি লাগছে, বাসায় আজ অনেক আনন্দ।”
এভাবেই বেনারকে নিজের অনুভূতির কথা জানালেন খাদিজা আক্তার।
দীর্ঘ সময় ধরে চারটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট, অস্ত্রোপচার, ফিজিওথেরাপি শেষে বৃহস্পতিবার সিলেটের জালালাবাদের আউশা গ্রামে খাদিজা ফিরেন তাঁর যৌথ পরিবারের মাঝে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যমের কর্মীরাও।
বাড়ি ফিরে খাদিজা আক্তার নার্গিস কথা বলেন বেনারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আর কোনো ছাত্রী এভাবে বখাটের হামলার শিকার যেন না হয়। বদরুলের কঠিন শাস্তি চান তিনি।
বদরুল আলম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির সহসম্পাদক। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা এমসি কলেজে পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে গত বছরের ৩ অক্টোবর বদরুলের হামলার শিকার হন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপি খাদিজা আক্তার নার্গিসের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় সাংবাদিকদের। আট সদস্যের চিকিৎসক দল ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের তত্ত্বাবধানে খাদিজা ছিলেন প্রায় তিন মাস।
চিকিৎসকেরা বলেন, খাদিজার মাথার বাম পাশে গভীর ক্ষত ছিল। বাম পাশটা নিষ্ক্রিয় ছিল। একজন মানুষ তখনই ঠিকভাবে চলাফেরা ও স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন, যখন তাঁর ভারসাম্যের স্কোর হয় ৫৬। খাদিজার স্কোর ছিল ১৩। এখন এই স্কোর এসে দাঁড়িয়েছে ৪৫ এ।
সিআরপির নিউরোলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট সুলক্ষণা শ্যামা বিশ্বাস বলেন, খাদিজাকে কিছুদিন দু–একটা ওষুধ খেতে হবে। মাঝে মাঝে ফলোআপে আসতে হবে।
“খাদিজা ২৮ নভেম্বর যখন এই হাসপাতালে আসে তখন অন্যের সাহায্য ছাড়া হাঁটা-চলা ও ওঠাবসা করতে পারতেন না। পরিবারের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিলেন। এখন তিনি নিজে চলাচল করতে পারেন,” বলেন সুলক্ষণা।
দ্রুত এগোচ্ছে বিচার
আগামী রোববার সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির হয়ে খাদিজার সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
মামলার একমাত্র আসামি বদরুল আলম। ঘটনার পর খাদিজার স্বজনেরা শাহপরান থানায় মামলা করেন।
হামলার পরপরই স্থানীয় লোকজন বদরুলকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। ৫ অক্টোবর বদরুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ৮ নভেম্বর মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা থাকলেও, শারীরিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় চিকিৎসকেরা সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পেছানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
এ পর্যন্ত এই মামলায় ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ৩৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বদরুল আলমের বিচার হওয়া নিয়ে সংশয় ছিল অনেকেরই।
দেশজুড়ে সংশয় ও আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ৮ অক্টোবর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচার নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, অপরাধী যে-ই হোক তার বিচার হবে। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল, সাভার সিআরপি ও এনাম মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয়ও বহন করে সরকার।
যা বলছে বদরুলের পরিবার
বদরুল আলমের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে মেধাবী ও বদরাগী বলে জানে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ছাত্র বদরুলের পরিবারের আর কেউ অর্থাভাবে লেখাপড়া করতে পারেনি।
বুধবার কথা হয় বদরুলের ভাই খালিদ হোসেনের সঙ্গে।
“বদরুল অন্যায় করেছে। আমার ভাই অনুতপ্ত। জানি না ওর কী সাজা হবে,” খালেদ বলেন।
তিনি আরও বলেন, “খাদিজা যেন সুস্থ হয়ে ওঠে সে জন্য আমরা সবাই দোয়া করেছি।”
আবার শুরু করবেন খাদিজা
“দেশবাসী আমার জন্য দোয়া করেছেন, সবাই যেভাবে আমার পাশে ছিলেন, আগামী দিনেও থাকবেন আশা করি,” বেনারকে বলেন খাদিজা।
খাদিজা এখন নতুন করে লেখাপড়া শুরু করবেন। তিনি চান লেখাপড়া শেষ করে ব্যাংকার হতে।
স্কয়ার হাসপাতালে খাদিজার প্রধান চিকিৎসক ছিলেন নিউরোসার্জারি বিভাগের রেজাউস সাত্তার। খাদিজার এই ফিরে আসায় তিনি আনন্দিত।
“অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায় আমরা খাদিজাকে পেয়েছিলাম। ওর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ৫ ভাগ। একজন মানুষের কনশাসনেস লেভেল ৮ না হলে আমরা ঝুঁকি নিই না। ওর ছিল ৫। ঝুঁকি নিয়ে সেদিন অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিই,” বেনারকে বলেন রেজাউস সাত্তার বলেন।
ওই চিকিৎসক ধন্যবাদ দিয়েছেন সিলেট এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের। তিনি বলেন, ‘গোল্ডেন আওয়ার’ এ সুচিকিৎসা পাওয়ায় খাদিজার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে।