সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারছেন না খালেদা জিয়া, হাসপাতালে ভর্তি

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.04.01
ঢাকা
190401-BD-khaleda-620.jpeg দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। ১ এপ্রিল ২০১৯।
[বেনারনিউজ]

দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়েছে। তিনি নিজে থেকে ভালোভাবে হাঁটতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্মকর্তারা।

সোমবার ছিল নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের দিন। এদিন তিনি অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির না হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

“খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে সোমবার হাসপাতালে আনা হয়েছে,” জানিয়ে বিএসএমএমইউ’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবিএম মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের জানান, “উনি কোনো কিছুর সাপোর্ট ছাড়া ভালোভাবে হাঁটতে পারছেন না।”

মাহবুবুল জানান, “তাঁর পায়ে ও জয়েন্টে ব্যথা আছে। তাঁর ডায়াবেটিস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, শরীর দুর্বল। ঘুম কম হয়, খাবারের রুচি কমে গেছে।”

এদিকে খালেদা জিয়া একটি ‘বেসরকারি বিশেষায়িত’ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চান বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আনার পর হাসপাতালের ভেতরে যান মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির কয়েজন শীর্ষ নেতা। সেখান থেকে বের হয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই হাসপাতালে তিনি আসতে চান না। কারণ তিনি মনে করেন, এই হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হচ্ছে না, চিকিৎসা হয় না।”

তিনি বলেন, “কিন্তু সেই কথায় কর্ণপাত না করে তাঁকে আবার সেই পিজি হাসপাতালেই নিয়ে আসা হয়েছে।”

দলের দাবি অনুযায়ী খালেদা জিয়ার অন্য কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা করার প্রয়োজন আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল আলম বলেন, “তাঁর এমন কোনো রোগ নেই যেগুলোর চিকিৎসা এখানে হবে না।”

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত বোর্ডের সদস্যরা তাঁর সাথে কথা বলেছেন জানিয়ে মাহবুবুল বলেন, খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের সাথে ‘সহযোগিতা’ করেছেন এবং তিনি ওই বোর্ডের ওপর ‘সন্তুষ্ট’।

‘পুরোপুরি ভালো হবেন না’

জিয়া এতিমখানা এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের দুটি পৃথক রায়ে সাজা পাওয়ার পর গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মোট ১৭ বছর কারাদণ্ড ভোগ করছেন বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া।

তাঁকে রাখা হয়েছে, ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো জেলখানায়। সেখানে তিনিই একমাত্র বন্দী।

এর আগে দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য তাঁর পছন্দমতো বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানোর দাবি জানানো হলেও সেই দাবি নাকচ করে দেয় সরকার।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন খালেদা জিয়া।

এর প্রেক্ষিতে ৬ অক্টোবর বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিতে আসেন খালেদা জিয়া। এখানে এক মাসের বেশি চিকিৎসা নিয়ে আবার ফিরে যান নাজিমুদ্দিন রোডের জেলখানায়।

সাজা হওয়া দুটি মামলা ছাড়াও, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতি ও ফৌজাদারি মামলা চলছে।

সোমবার জেলখানার কাছে স্থাপিত আদালতে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির নির্ধারিত তারিখ ছিল। তবে “অসুস্থতার কারণে বেগম খালেদা জিয়া আজ আদালতে আসতে পারেননি,” বলে বেনারকে জানান তাঁর আইনজীবী মাসুদ তালুকদার।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে খালেদা জিয়াকে শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে আসে কারা কর্তৃপক্ষ।

গোলাপি শাড়ি পরা খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনা হয়। সহকারী ফাতেমা বেগমের গায়ে হেলান দিয়ে ছিলেন তিনি।

“খুব বেশি সমস্যা না হলে তাঁকে তাঁর পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে,” মন্তব্য করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। কারণ তাঁর কোনো কিছু হলে, সরকারকেই সেই দায় নিতে হবে।”

এ প্রসঙ্গে “জেলখানায় একজন এফসিপিএস মহিলা ডাক্তার সার্বক্ষণিকভাবে তাঁর স্বাস্থ্য তদারকি করছেন। তিনি ভালো আছেন,” মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছি।”

“তবে ডাক্তাররা আমাদের যা বলেছেন সে অনুযায়ী খালেদা জিয়ার অধিকাংশ স্বাস্থ্য সমস্যা পুরোপুরি ভালো হবে না। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে,” যোগ করেন মন্ত্রী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।