নানা রোগে ভুগছেন খালেদা জিয়া : মেডিকেল বোর্ড

প্রাপ্তি রহমান
2018.10.08
ঢাকা
নানা রোগে ভুগছেন খালেদা বিএনপি'র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়। অক্টোবরের ৬ তারিখের তোলা ছবি।
বেনার নিউজ

বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আথ্রারাইটিস (গেঁটে বাত) ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড এ খবর জানিয়েছে।

সোমবার বিএসএমএমইউ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানো হয়। তবে ঠিক কত দিন তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হবে সে সম্পর্কে চিকিৎসকেরা কিছু বলতে পারছেন না।

“খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসার পর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব,” মেডিকেল বোর্ডের সদস্য সৈয়দ আতিকুল হক সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার গোড়ায় রয়েছে আথ্রারাইটিস।

এদিকে বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক আবদুল জলিল এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে তাঁরা কাজ করছেন এবং নির্দেশের কোনোরকম ব্যত্যয় ঘটানো হবে না।

তাঁর মতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক সমস্যার সর্বোচ্চ চিকিৎসা এই হাসপাতালে দেওয়া সম্ভব। কারণ এখানে প্রয়োজনীয় সব বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন।

“উনার (খালেদা) শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। উনি দীর্ঘদিন ধরে রিউমেটয়েড আর্থ্ররাইটিস রোগে ভুগছেন। এটা কনট্রোল না করার কারণে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে,” জানান আবদুল জলিল।

“এজন্য উনার হাত বাঁকা হয়ে গেছে, হাত তুলতে পারছেন না। বাম কাঁধ নাড়াতে পারেন না। ঘাড়ে ও  কোমরে ব্যথা, বাম উরুর জয়েন্টে ব্যথা, বাম হাটু ফুলে গেছে," বলেন ওই বিশেষজ্ঞ।

সোমবার চিকিৎসার প্রথম দিনে একজন সদস্য খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন ও চিকিৎসার পুরোনো রেকর্ড দেখেছেন। তাঁকে মঙ্গলবার ফিজিওথেরাপি দেওয়া হতে পারে। তা ছাড়া একটি এক্স রে করারও কথা রয়েছে।

গত শনিবার নাজিমুদ্দীন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়। তাঁকে হাসপাতালের কেবিনে রাখা হয়েছে।

ওই দিনই অধ্যাপক আব্দুল জলিলকে প্রধান করে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। একদিন পর বোর্ড থেকে হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সজল ব্যানার্জির পরিবর্তে একই বিভাগের তানজিমা পারভিনকে বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন; অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক নকুল কুমার দত্ত এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে নকুল কুমার দত্ত ছাড়া অন্য সব বোর্ড সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

“গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হওয়া জরুরি। সে জন্যযেমন মিথ্যে মামলায় বিএনপি নেতা কর্মীদের জেলে ভরা অনুচিত, একইভাবে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাও নিশ্চিতকরা দরকার। তিনি দলীয় প্রধান, অথচ বারবার তাঁর সুচিকিৎসার কথা বলতে হলো এটা দুঃখজনক,” এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়। মার্চের শেষ ভাগ থেকে খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে সুস্থ নন বলে দাবি করতে শুরু করেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। তাঁরা রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি করেন।

এপ্রিলের গোড়ার দিকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিকসবিভাগের চেয়ারম্যান মো.শামসুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড কারাগারে গিয়ে দেখে আসেন। তাঁরা সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার আর্থরাইটিস বেড়েছে। তিনি অন্যের সাহায্য নিয়ে হাঁটছেন। তবে তাঁর অবস্থা সংকটজনক নয়।

অবশ্য গত ৭ জুলাই গণভবনে আয়োজিত আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগসভানেত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে ‘ভান’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন নিউজ পেপার বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল, “তার দুর্নীতির কাহিনি আছে। অসুস্থার ভান করে কোর্টে হাজিরা দেয় না। হাজিরা দিলেই ধরা খাবে। সে জন্যই হাজিরা দেয় না, এটা হলো বাস্তবতা।”

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার এত পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়ার সমালোচনা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, চিকিৎসক কখনো রোগীর অসুস্থতার কথা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে পারেন না।

“না, না। এটা নৈতিকতা বিরোধী। এভাবে একজনের চিকিৎসা সংক্রান্ত খবর ফলাও করে প্রচার করা যায় না,” জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন।

স্বাস্থ্য আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা আখতারও চিকিৎসকদের এই বক্তব্যে বিস্মিত হয়েছেন বলে জানান।

“আমার প্রশ্ন হলো, খালেদা জিয়া কিজানেন যে তাঁর ব্যক্তিগত এসব তথ্য চিকিৎসক জনসমক্ষে প্রকাশ করছেন? আমরা বুঝতে পারছি তাঁর ব্যাপারে জনগণের আগ্রহ আছে। কিন্তু চিকিৎসকেরা কতটুকু প্রকাশ করবেন তারও একটা নিয়ম আছে,” ফরিদা আখতার বলেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।