বঙ্গবন্ধু হত্যার দিনে জন্মদিন পালনের মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
2016.11.17
ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন পালনের অভিযোগে দায়ের হওয়া নালিশি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বাংলাদেশের আদালত। তবে এটাকে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছে বিএনপি।
বিশিষ্টজনেরা এ ধরনের মামলা দায়ের করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য হাজার হাজার মামলার স্তূপ পড়ে আছে। এ ধরনের রাজনৈতিক মামলার চেয়ে সেসবের প্রতি নজর দেওয়া উচিত।”
গত ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজি জহিরুল ইসলাম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন। সেদিনই মামলা আমলে নিয়ে গত ১৭ অক্টোবর আসামিকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হেয় করতে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করে আসছেন বলে মামলায় বাদী অভিযোগ করেন। ভুয়া জন্মদিন পালন বন্ধ করতে আদালতের প্রতি আরজি জানান তিনি।
এদিকে নির্ধারিত দিনে আদালতে হাজির না হওয়ায় বাদী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ওই আবেদনের শুনানি শেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী দুলাল মিত্র বেনারকে বলেন, বৃহস্পতিবার মামলাটি আদেশের দিন ছিল। কিন্তু আসামি আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
“এর পাশাপাশি আসামিকে গ্রেপ্তার করা গেল কি না, তা ২ মার্চ ২০১৭তে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানাতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,” জানান ওই আইনজীবী।
মামলার আবেদনে বলা হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়া জন্মদিন বানিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট থেকে জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়া ও তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা উৎসব করেন। সেই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কুৎসা ও বানোয়াট আলোচনা হয়।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষের পথে। রাজনৈতিক মহলে ধারণা রয়েছে যে, এই মামলায় তাঁর সাজা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি অযোগ্য ঘোষণা হতে পারেন। এ ছাড়া খালেদার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এক ডজনেরও বেশি মামলায় তিনি জামিনে আছেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বেনারকে বলেন, “এই সরকার খালেদা জিয়াকে ভয় পায়, এ জন্য তাঁকে রাজনীতির মাঠে দেখতে চায় না।” তিনি বলেন, “পাকিস্তানের স্বৈরশাসক থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বৈরশাসকেরা বিভিন্ন সময় জনমতকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতায় থাকার সব চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কেউ তা পারেনি, এ সরকারও পারবে না।”
এটা সরকারের কূটকৌশল: বিএনপি
এদিকে সরকারের কূটকৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বলে অভিযোগ এনেছে বিএনপি। এ আদেশকে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ উল্লেখ করে নিন্দাও জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বেনারকে বলেন, “এক ধরনের হীনতা ও প্রতিহিংসা থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।”
এদিকে পরোয়ানা জারির পর এক বিবৃতিতে নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে সরকারের নির্দেশেই। এটা বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির আরও একটি পদক্ষেপ।”
শিষ্টাচার প্রদর্শনের আহ্বান
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও শিষ্টাচার দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাজনীতি বিশ্লেষকেরা। ড. বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “এমন মামলার মাধ্যমে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। এমন অবস্থায় সবারই শিষ্টাচার প্রদর্শন করা দরকার। একই সঙ্গে অতি উৎসাহীদের দূরদর্শিতা দেখানো উচিত।”
খালেদার সঙ্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বৈঠক
বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের (ইউপি) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক প্রতিনিধি দলের সদস্যরা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৃহস্পতিবারের এই বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ট্রেড কমিটি বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি দেখতে চায়।”
ইউপির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারপারসন বারন্ড লাঙ্গা এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরো মায়াদনও ছিলেন।
“আমরা প্রতিনিধিদলটিকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়টি অবহিত করেছি। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং সব দলের অংশগ্রহণে যাতে নির্বাচন হয়, সে জন্য বিএনপির অবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরেছি,” জানান মির্জা ফখরুল।