মানববন্ধন কর্মসূচি হয়ে ওঠে বিক্ষোভ, খালেদার মুক্তি দাবি

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.09.10
ঢাকা
180910_BNP_1000.jpeg খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকায় বিএনপির মানবনন্ধন ও বিক্ষোভ। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
বেনারনিউজ

দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার কারা অভ্যন্তরে বিচারের বিরুদ্ধে এবং তাঁর সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক ঘণ্টার মানববন্ধন করার অনুমতি নিয়েছিল বিএনপি। এ ক্ষেত্রে পুলিশের শর্ত ছিল, তারা যানচলাচল বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

পরবর্তীতে হাজার হাজার নেতা–কর্মীর অংশগ্রহণে এক ঘণ্টার সেই মানববন্ধন রূপান্তরিত হয় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে। যার কারণে দিনের শুরুতেই সচিবালয়ের আশপাশে রাস্তা ও অলিগলিতে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।

এ সময় জলকামানসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যকে সমাবেশের আশপাশে অবস্থান নিতে দেখা যায়। রাজধানী ঢাকায় বাধা না দিলেও কর্মসূচি চলাকালে বেশকিছু নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৫৩ জনকে পরে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

বিএনপি বলছে, গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে ২০০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। গাজীপুর জেলা সদরে বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতে হঠাৎ পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা শুরু করে। এ ছাড়া পুলিশের বাধায় ফরিদপুর ও যশোরসহ কয়েকটি জেলায় বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির এ জাতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ঢাকায় এত নেতা–কর্মীর সমাগম ঘটেনি বলে বেনারকে জানান দলের নেতা–কর্মীরা।

বাংলাদেশী রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “মেয়াদের শেষ দিকে সরকার বিরোধী দলকে আর ঘরে আবদ্ধ রাখতে পারবে না বা রাখবে না। এটি তাদের রাজনৈতিক কৌশল।”

“তবে এই সুযোগে বিএনপি সহিংস আন্দোলন করলে সেটি হবে মারাত্মক ভুল। তখন সরকার কঠোর হাতে তাদের দমন করার যৌক্তিকতা পাবে,” যোগ করেন তিনি।

এদিকে অনেক দিন পর পুলিশের বাধা ছাড়াই সরকার বিরোধী বিক্ষোভ করতে পেরে খুশি তারা। তাদের দাবি, সরকারের সময় প্রায় শেষ। যে কারণে তারা রাস্তায় বিক্ষোভ করতে পারছে।

ঢাকা ছাড়াও সারা দেশে সকল জেলা শহরে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁর ‘সুচিকিৎসার’ দাবিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

খালেদা জিয়াকে বেসরকারি ইউনাইটেড অথবা অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে সুযোগ দেওয়ার জন্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে দেখা করার একদিন পরই এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হলো।

ঢাকার সমাবেশ থেকে মির্জা ফখরুল ঘোষণা করেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, যদি দেশনেত্রী কারাগারে থাকেন, এ দেশে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না।”

মিরপুর থেকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিএনপি কর্মী আসাদুজ্জামান বেনারকে বলেন, “৫ জানুয়ারি মতো একতরফা কোনো নির্বাচন এদেশে হতে দেওয়া হবে না। তবে “বিএনপি অরাজকতা করলে আওয়ামী লীগের ফায়দা হবে,” বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আতাউর।

 

নির্বাচন না মানার হুমকী

সোমবার এগারোটায় মানববন্ধন শুরুর কথা থাকলেও সকাল দশটার আগেই প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রেসক্লাবের সামনের দুই পাশের রাস্তা তারা দখল করে নেয়।

পুলিশ একপাশ দিয়ে যান চলাচল করানোর চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যেই বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুলসহ দলে সিনিয়র নেতারা। মহাসচিব বলেন, “দেশনেত্রীকে মুক্তি দিলেই বোঝা যাবে যে এই সরকার দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।”

ক্রমাগত স্লোগানের মধ্যেই সমাবেশ চলে। ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, জেলের তালা ভাঙব, খালেদা জিয়াকে আনব, খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন মানি না, মানব না’—বলে স্লোগান তোলে নেতাকর্মীরা।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, তফসিল ঘোষণার আগেই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। একটা নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।”

তিনি দাবি করেন, সরকার সারা দেশে ‘ভৌতিক মামলা’ দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে ‘গোটা জাতিকে জিম্মিতে পরিণত’ করেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাদ দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চায় আওয়ামী লীগ।”

“কিন্তু দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, আগামী নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সারাদেশের মানুষ যেমন এই দাবিতে একমত, সারা বিশ্বও বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়,” যোগ করেন তিনি।

তেজগাঁও থানা বিএনপি নেতা আশরাফ খান বেনারকে বলেন, “এই সরকার গত কয়েক বছর আমাদের রাস্তায় নামতে দেয়নি। তারা জানে, এখন শেষ সময়ে আমাদের নির্যাতন করলে পরিণাম ভালো হবে না।”

ড. আতাউর বলেন, “বিএনপি নেতা–কর্মীরা রাস্তায় আন্দোলন করতে পারেনি সত্য। কিন্তু ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে তাদের আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠার কারণে সরকার পুলিশ দিয়ে তাদের কঠোর হাতে দমন করার সুযোগ পেয়েছিল।”

খালেদার ‘দায়িত্ব’ সরকারের

গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত তাকে পাঁচ বছরের সাজা দেয়। তিনি বর্তমানে নাজিমুদ্দিন রোড়ের পুরোনো জেলখানায় একমাত্র বন্দী।

দেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দাবি, তিনি শারীরিকভাবে ‘মারাত্মক অসুস্থ’; বেসরকারি ইউনাইটেড অথবা অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চান। সরকার তাঁকে সেই সুযোগ দিতে চায় না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের। মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তাঁদের সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার।”

বেসরকারি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে তাঁর আইনজীবীদের করা রিটের ওপর শুনানি সোমবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। মঙ্গলবার ওই রিটের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।