কুনিও হোশিকে হত্যার অভিযোগে ৭ জেএমবি সদস্যের বিচার শুরু

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.11.15
 কুনিও হোশি। ফাইল ফটো
স্টার মেইল

জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা মামলায় মঙ্গলবার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে রংপুরের একটি আদালত। পুলিশের অভিযোগপত্রে থাকা আট আসামীর মধ্যে একজন নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক হাসান গত ২ আগস্ট রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।

রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার নিহত একজনকে বাদ দিয়ে মঙ্গলবার এই মামলায় সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে দেশি–বিদেশে আলোচিত ওই মামলার বিচার শুরু হলো। ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছে আদালত।

কুনিও হত্যায় জেএমবির আট সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। তাঁরা হলেন; মাসুদ রানা, ইছাহাক আলী, লিটন মিয়া, আবু সাঈদ, সাখাওয়াত হোসেন, সাদ্দাম হোসেন, আহসানউল্লাহ আনসারি ও নজরুল ইসলাম। নজরুল বাদে বাকি সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত।  অভিযুক্ত সাতজনের মধ্যে সাদ্দাম হোসেন ও আহসানউল্লাহ আনসারি পলাতক। বাকি পাঁচজনকে মঙ্গলবার রংপুরের আদালতে হাজির করা হয়। তবে “তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে সুবিচার চেয়েছে। আদালত বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখবেন,” বেনারকে জানান সরকারি বিশেষ কৌঁসুলি (পিপি) রথীশ চন্দ্র ভৌমিক।

গত বছরের ৩ অক্টোবর রংপুর শহরের উপকণ্ঠে কাউনিয়া উপজেলার কাচু আলুটারি গ্রামে ৬৬ বছর বয়সি কুনিও হোশিকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই জাপানি নাগরিক ওই এলাকায় গবেষণার অংশ হিসেবে ঘাসের চাষ করতেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, কুনিও হোশিকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি গুলি করেন জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা। মোটর সাইকেলে তারা তিনজন ছিলেন। গুলি করার পর মোটর সাইকেলে করে তারা পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলেই মারা যান কুনিও।

এর কয়েকদিন আগে ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজারকে (৫০) একই কায়দায় হত্যা হয়।  ছয়দিনের ব্যবধানে এই দুজন বিদেশি নাগরিকের হত্যাকাণ্ড সে সময় দেশে–বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।  ঘটনার পরপর আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস এই ঘটনার দায় স্বীকার করলেও সরকার তা নাকচ করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে এই হত্যার জন্য বিরোধী দলের নেতা–কর্মী ও এ দেশীয় জঙ্গিদের দায়ী করা হয়।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সরকারের মন্ত্রী ও সুশীল সমাজের একটি বড় অংশ মত দেন যে, দেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।

ঘটনার পর গ্রেপ্তার হন কুনিওর ব্যবসায়িক সহযোগী হুমায়ুন কবির হীরা। এ ছাড়া রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদ-উন-নবী খান বিপ্লকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় বিজয় দাশ নামে আরও একজন গ্রেপ্তার হন। এছাড়া গত বছরের ১৩ নভেম্বর র‍্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান—র‍্যাব তিন যুবককে গ্রেপ্তার করে। এরা হলেন; রংপুর মহানগর যুবদলের সদস্য রাজীব হাসান সুমন ওরফে মেরিল সুমন ও নওশাদ হোসেন রুবেল ওরফে ব্ল্যাক রুবেল এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগের সদস্য কাজল চন্দ্র বর্মণ ওরফে ভরসা কাজল। তখন সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব তখন দাবি করে যে, এই তিনজন কোনিও হোশিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে তাঁদের কারও নাম নেই।

রংপুর যুবদল ও যুবলীগের এই তিন সদ্যসকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব দাবি করেছিল, তাঁরা কুনিও হোশি হত্যার সঙ্গে জড়িত। পরে তাঁরা নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় ছাড়া পান। নভেম্বর ১৩, ২০১৫। স্টার মেইল।
রংপুর যুবদল ও যুবলীগের এই তিন সদ্যসকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব দাবি করেছিল, তাঁরা কুনিও হোশি হত্যার সঙ্গে জড়িত। পরে তাঁরা নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় ছাড়া পান। নভেম্বর ১৩, ২০১৫। স্টার মেইল।
স্টার মেইল।

প্রায় নয় মাস তদন্তের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী গত ৩ জুলাই জাপানি নাগরিক হত্যার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তাতে আটজনকে আসামি করা হয়। একইসঙ্গে ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়। এর ফলে গত আগস্টে তাঁরা ছাড়া পান।

বেনারকে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদের জিলানী জানান “ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনার সঙ্গে জেএমবির যোগসূত্র পাওয়া যায়, নিও জেএমবির আট সদস্য কোনিও হোশিকে হত্যা করে বলে তথ্যপ্রমাণ মেলায় তাদের বিরুদ্ধে গত ৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়”। তিনি আরো বলেন , অভিযোগপত্রে নাম না আসায় আদালত এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনকে মুক্তি দেয়। এ ছাড়া পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।