জামিনে মুক্ত মাহমুদুর রহমান

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.11.23
মাহমুদুর রহমান কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মাহমুদুর রহমান। নভেম্বর ২৩, ২০১৬।
স্টার মেইল

টানা ১৩১৯ দিন কারাভোগের পর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার দুপুর একটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-২ থেকে তিনি মুক্তি পান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ চেষ্টা ও হত্যা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করা মামলায় মাহমুদুর রহমানের জামিন আপিল বিভাগ বহাল রাখায় তিনি মুক্তি পেলেন। ঘাড়ে ও হাতে ব্যথা নিয়ে গতকাল বিকেলে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল ব্রাসেলসভিত্তিক আইন বিশেষজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রধান নিজামুল হকের কথিত স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশ করে দৈনিক আমার দেশ। এই কথোপকথন প্রকাশ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তখন থেকেই তিনি কারাগারে ছিলেন। এর আগে ২০১০ সালে দীর্ঘ ১০ মাস কারাভোগ করেন আলোচিত এই সম্পাদক, যাঁর বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময় বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে উন্মাদনা সৃষ্টির অভিযোগ তোলা হয় মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে।

“মাহমুদুর রহমানের নামে জয়কে অপহরণ চেষ্টা ও হত্যা ষড়যন্ত্রের মামলাসহ অন্তত ৭০টি মামলা রয়েছে। অন্যসব মামলায় এর আগেই জামিন নিয়েছেন তিনি,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ। তাঁর মতে, এই কলম সৈনিককে সরকার ভয় পায় বলে কারাগারে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রেখেছিল।

এ প্রসঙ্গে সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, সাংবাদিকতার জন্য মাহমুদুর রহমান গ্রেপ্তার হননি। ফৌজদারি বিভিন্ন অপরাধের দায়ে আদালত তাঁকে ​জেল দিয়েছে।  তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সাংবাদিকতার জন্য তাঁকে জেলে যেতে হয়নি।

বিগত চার দলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সময় জ্বালানি উপদেষ্টা ছিলেন প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান। বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান শাইনপুকুর সিরামিকসের প্রধান নির্বাহী থাকা অবস্থায় বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান হন তিনি। বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের শেষভাগে এসে কিছুদিনের জন্য তিনি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় জ্বালানি উপদেষ্টা নিযুক্ত হন।

১৯৯৯ সালে আরটিসান সিরামিকস নামে নিজে কোম্পানি খোলেন। উত্তরায় ওই কোম্পানির কার্যালয়েই ২০০৬ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে পুলিশ ও প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে বৈঠকে বসেন তিনি। খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে গেলে অনেক কর্মকর্তা মুখ ঢেকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

পরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত জোটকে আবারো ক্ষমতায় বসাতে ওই গোপন বৈঠকের ব্যবস্থা করেন মাহমুদুর।

২০০৮ সালে আর্থিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত আমার দেশ পত্রিকার দায়িত্ব নেন মাহমুদুর রহমান। সরকারবিরোধী বলে পরিচিতি ওই পত্রিকার প্রচারসংখ্যা ​দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়। পরে ধর্মীয় উস্কানি দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে সরকার।

তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় একটি মামলা করেন।

চলতি বছর ১৮ এপ্রিল ওই মামলায় ঢাকার সিএমএম আদালতে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো এবং ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে গত ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।

হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার জামিন ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেন। ৩১ অক্টোবর সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখেন।

পল্টন থানার একই মামলায় গত ১৬ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ নিউ ইস্কাটন গার্ডেনের বাসা থেকে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে আটক করে। পরে তাঁকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পল্টন থানার পুলিশ।

গত ৩১ আগস্ট জামিন পান শফিক রেহমান। গতকাল একই মামলায় জামিন পেলেন মাহমুদুর রহমান। মুক্তি পাওয়ার পর আমার দেশের সাবেক সাংবাদিক ও কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কারাফটকে মাহমুদুর রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

“মাহমুদুর রহমানের জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছানোর পর তা যাচাই-বাছাই শেষে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়,” বেনারকে জানান কাশিমপুর কারাগার-২ এর জেলার নাশির আহমেদ।

মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল আমিন বেনারকে বলেন, “আইনী লড়াইয়ে আমরা আপাতত জয়ী হয়েছি। এই মামলা মিথ্যা প্রমাণ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।