১৩ বছর পর সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যায় নয় জনের যাবজ্জীবন

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.11.30
রায়ে এজলাসে উপস্থিত পাঁচ আসামি রায়ের পাঁচ আসামি এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। নভেম্বর ৩০, ২০১৬।
স্টার মেইল

বাংলাদেশের বিভাগীয় শহর খুলনায় সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা হত্যার ঘটনায় নয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ওই মামলায় খালাস পেয়েছেন দুজন।

হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৩ বছর পরে বুধবার এ রায় দিয়েছে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিচার পাওয়া গেলেও, এতে সন্তোষ প্রকাশ করেননি নিহতের পরিবার ও সহকর্মীরা।

এদিকে একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় ১০ আসামির সকলকেই খালাস দিয়েছে আদালত।

হত্যা মামলার দণ্ডাদেশ অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত সকলকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদেরকে আরো এক বছর করে কারাগারে কাটাতে হবে।

এ মামলায় মোট ১৩ জন আসামি ছিলেন। আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্তের পর সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরো একজনকে যুক্ত করলে আসামির সংখ্যা ১৪তে দাঁড়ায়। এদের মধ্যে তিনজন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলে ১১ জনের বিচার শুরু হয়।

মামলায় বুধবার সাজাপ্রাপ্তরা হলেন আকরাম হোসেন হাওলাদার ওরফে আকরাম হাওলাদার ওরফে বোমারু হাওলাদার, আলী আকবর শিকদার ওরফে শাওন, হাই ইসলাম, নুরুজ্জামান, মিঠুন, সুমন, সাত্তার ওরফে ডিসকো সাত্তার, বেল্লাল ওরফে বুলবুল, কচি ওরফে ওমর ফারুক, সাকা ওরফে সাকাওয়াত হোসেন ও সরোয়ার হোসেন ওরফে সরো।

খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন আবদুল হাই ইসলাম ওরফে কচি ও ওমর ফারুক ওরফে কচি। এদের মধ‌্যে আবদুল হাই কারাগারে ছিলেন। আর ফারুক পলাতক রয়েছেন। আবদুল হাই কচি বাদে অন্য সকল আসামিই বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামি ছিলেন।

পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন আবদুর রশিদ, আলতাফ ওরফে বিডিআর আলতাফ ও মাহফুজ ওরফে মাফিজ ওরফে নাসিম ওরফে শফিকুল ইসলাম।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযোগপত্রে ৫৪জন সাক্ষীর নাম ছিল। তাঁদের মধ্যে ৪৫জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত। তবে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত না হওয়ায় দুজন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।”

সন্তুষ্ট নয় পরিবার

এ দিকে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রায় পেয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেনি নিহত মানিক সাহার পরিবার। এ মামলা থেকে হত্যা পরিকল্পনাকারীরা বাদ পড়ে গেছে বলে অভিযোগ আনেন তারা।

যোগাযোগ করা হলে মানিক সাহার ছোট ভাই প্রদীপ সাহা বেনারকে বলেন, “এ রায় মোটেই সস্তুষ্ট হওয়ার মত নয়। একজন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যার শাস্তি কয়েক বছরের জেল হেতে পারে না। আমরা হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি আশা করেছিলাম।”

তিনি অভিযোগ করেন, “শুরু থেকেই অভিযোগপত্রে হত্যার পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা বিচারের উর্ধ্বেই থেকে গেলো।”

তবে আসামিরা এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাননি অভিযোগ করে তাদের আইনজীবী মামুনুর রশিদ বেনারকে বলেন, “উচ্চ আদালতে আমরা আপিল করব। সেখানে তাঁরা খালাস পাবেন আশা করি।”

মানিক সাহা দৈনিক সংবাদের ব্যুরো প্রধান ছিলেন। তিনি বিবিসিরও প্রতিনিধি ছিলেন। মরোনোত্তর একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সাংবাদিক এক সময় খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেস ক্লাব থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রেস ক্লাবের কাছেই দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া বোমার আঘাতে নিহন হন মানিক সাহা। এর দু’দিন পর পুলিশ বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করে।

এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মানিক সাহার সহকর্মী সাংবাদিকরাও।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব ওমর ফারুক বেনারকে বলেন, “অনেকদিন পরে একজন সাংবাদিক হত্যার বিচারের রায় হয়েছে সত্য। তবে তাতে কাঙ্ক্ষিত রায় হয়নি।”

তিনি বলেন, “একজন মানুষকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনার এতদিন পরে রায় হলো; অথচ আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তি পায়নি। এটা হতাশার। আসামিদের কেউ না কেউ সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে, সে আশা করেছিলাম।”

এ রায়কে ‘নমনীয়’ আখ্যা দিয়ে সাংবাদিক নির্যাতন রুখতে এটি সাহায্য করবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।