মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলায় সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে

জেসমিন পাপড়ি
2018.07.23
ঢাকা
180723_mahmudur_rahman_1000.jpg কুষ্টিয়ায় হামলার পর পুলিশের পাহারায় আদালত চত্বর ছাড়েন মাহমুদুর রহমান। ২২ জুলাই ২০১৮।
নিউজরুম ফটো

সরকারবিরোধী কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর আদালত প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সরকারের সমালোচক বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বলছেন, এই হামলা মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ।

তবে সরকার এ ঘটনায় দায় অস্বীকার করে বলেছে, দোষীদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বেনারকে বলেন, “এটা ফ্যাসিজমের সবচেয়ে খারাপ রূপ। কোনো ভিন্ন মতকে সমর্থন না করতেই পারি, কিন্তু তার ওপর হামলা চালানো যায় না। আমি মনে করি মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা চালিয়ে অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছে সরকার সমর্থকেরা (ছাত্রলীগ)। আর এটা সরকারি মদদ ছাড়া সম্ভব না।”

গত রোববার কুষ্টিয়ায় মানহানির মামলায় হাজিরা দিতে গেলে মাহমুদুর রহমানের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেন এক ছাত্রলীগ নেতা।

ওই মামলায় জামিন পেতে রোববার কুষ্টিয়া আদালতে গিয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান। তিনি স্থায়ী জামিনও পান।

তবে জামিন পাওয়ার পরে আদালত চত্বরে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগে থেকে আদালত চত্বরে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা জামিন মঞ্জুরের পরপরই মাহমুদুর রহমানকে আদালতের একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে একপর্যায়ে তিনি নিজের গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা তাঁকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।

এ সময় ইটের টুকরার আঘাতে মাহমুদুর রহমান রক্তাক্ত হন। পরে পুলিশ মাহমুদুর রহমানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।

এর আগে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগের পর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ২০১৬ সালে ২৩ নভেম্বর জামিনে ছাড়া পান মাহমুদুর রহমান। ২০১৩ সালে ১১ এপ্রিল কারওয়ান বাজারের আমার দেশ কার্যালয় থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই রাতে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানাও সিলগালা করে দেয় পুলিশ। এরপর থেকে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে।

আটকের পর তেজগাঁও থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে আরও অনেক মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।

২০১০ সালে জুন মাসেও একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান। আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা দিয়ে মুক্তি পান তিনি।

মুক্তচিন্তার ওপর আঘাত

মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তচিন্তার ওপর আঘাত করে চলেছে।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, “মাহমুদুর রহমানের ওপর হত্যার উদ্দেশে আক্রমণ হয়েছে। গতকালই আমি বলেছি এই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত।”

“আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঘটনার সময়ই ফোন করেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, তিনি মাহমুদুর রহমানের নিরাপদে বের হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন,” বলেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য, পুলিশের উপস্থিতিতে যেভাবে মাহমুদুর রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে, এটা ইদানীংকালের নজিরবিহীন ঘটনা।”

সরকারবিরোধী সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।

দোষীদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা

এদিকে কুষ্টিয়ায় আদালত প্রাঙ্গণে মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সোমবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় যে কারও ভিন্নমত থাকতে পারে। আমরা এ ধরনের হামলা সমর্থন করি না।”

এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “কারও নির্দেশনায় এ হামলা হয়নি। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা ছাত্রলীগ নামধারী দুর্বৃত্ত। অনেকেই ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে এ ধরনের অপকর্ম করে। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটায় তারা অনুপ্রবেশকারী।”

“এ হামলায় জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত.” বলেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।