ভেজাল প্রতিরোধ এবং মান নিয়ন্ত্রণে ওষুধ নীতির নতুন সংস্করণ অনুমোদন
2016.12.19
ঢাকা থেকে

বর্তমানে বিশ্বের ১২২টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ, যা এই শিল্পের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। ভেজাল প্রতিরোধ এবং যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ওষুধ নীতি ২০১৬ অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
দেশে প্রথম ওষুধনীতি হয়েছিল ১৯৮২ সালে, সামরিক শাসনামলে। পরে ২০০৫ সালের যে ওষুধ নীতি করা হয়, সেটির যুগোপযোগী সংস্করণ এটি।
সরকারের হিসেবে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ বাংলাদেশ থেকে ওষুধ আমদানি করছে। এসব দেশের গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাকটিস (জিএমপি) এই ওষুধ নীতিতে অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের ওষুধের মান সম্পর্কে সনদ দিয়েছে।
“এই প্রেক্ষাপটে এখন ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে। নতুন ওষুধ নীতিতে বছরে একবার সরকারের তত্ত্বাবধানে ওষুধের দাম নির্ধারণ করা যাবে,” সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ।
তিনি বলেন, নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি, মজুত ও বিক্রি বন্ধে জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠন করবে সরকার। এ ছাড়া ওষুধ খাতের বিভিন্ন অপরাধের জন্য শাস্তি নির্ধারণ করা হবে, যা আইনে উল্লেখ থাকবে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওষুধনীতির খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। খসড়ায় বলা হয়েছে, ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে তা ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। কেউ বেশি দাম নিলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিটি দেশে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা করতে বলে। এসব ওষুধের দাম নির্ধারণ করে সরকার। নতুন ওষুধনীতিতে ২৮৫টি ওষুধকে এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ছিল ১১৭টি।
বাজারে ৩৯টি জেনারের প্রায় দুই হাজার ওষুধ রয়েছে। ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথি ওষুধকে এবার ওষুধনীতির আওতায় আনা হয়েছে। ৬৯৩টি ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথি ওষুধকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোনজনিত সমস্যার ওষুধ ও ঘুমের ওষুধের মতো স্পর্শকাতর ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে জাতীয় ওষুধনীতি ২০১৬-তে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাই মন চাইলেই যারা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক কেনেন ও বিক্রি করেন—তাদের জন্য দুঃসংবাদ রয়েছে এই নীতিতে।
অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে ওষুধ কার্যকারিতা হারাচ্ছে এবং সহজে রোগ সারছে না। এই প্রেক্ষাপটেই দীর্ঘদিন ধরে পরামর্শপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়ে আসছিলেন জনস্বাস্থ্যকর্মীরা।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদ ও স্বীকৃতি লাভ করেছে বাংলাদেশের ওষুধ। স্কয়ার, ইনসেপ্টা ও বেক্সিমকোর মতো কোম্পানি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সনদ পেয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় ১১ বছর পর আন্তর্জাতিক চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে নীতিমালাটি যুগোপযোগী করা হয়েছে।
নতুন এই ওষুধ নীতিকে জনবান্ধব বলে বর্ণনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। বেনারকে তিনি বলেন, আগের দুটি ওষুধ নীতিতে নকল ও ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে কথা ছিল। এবারের নীতিতে নকল-ভেজাল বন্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ঢাকার শাহবাগে মেসার্স ঔষধালয়ের স্বত্তাধিকারি শামসুল হক বেনারকে বলেন, ওষুধ নীতিকে ব্যবসায়িরা স্বাগত জানায়। তাঁরা সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে চায়। ভেজাল বন্ধ হলে এবং দাম নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলে মানুষ উপকৃত হবে, ব্যবসার পরিবেশও ভালো হবে।