ইউরোপ থেকে অবৈধ অভিবাসী ফেরত আনবে বাংলাদেশ

জেসমিন পাপড়ি
2017.07.27
ঢাকা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশগামী বাংলাদেশি শ্রমিকরা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশগামী বাংলাদেশি শ্রমিকরা। আগস্ট ১৬, ২০১৫।
নিউজরুম ফটো

অব্যাহত চাপের মুখে ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয় এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।

এ প্রসঙ্গে বৈঠকের সভাপতি পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বেনারকে বলেন “পৃথিবীর কোনো দেশেই বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে বসবাস করুক তা আমরা চাই না।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে শিগগিরই একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন সাপেক্ষে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে এসব বাংলাদেশিদের ফেরত আনা হবে।

ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বেনারকে জানান, “আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধভাবে বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে আমরা বাধ্য। এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও জড়িত। ইইউ’র দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই চূড়ান্ত এসওপি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে আরো আলোচনার সুযোগ রয়েছে।”

প্রসঙ্গত এই জুলাই মাসের মধ্যেই বাংলাদেশকে এসওপি চূড়ান্ত করার বাধ্যবাধকতা দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সে অনুযায়ী প্রস্তাবিত এসওপি চূড়ান্ত করার পর ইইউর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।

“অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত আনার দিকেই এগোচ্ছি আমরা। তবে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ হয়নি। এখনো কিছু বিষয়ে নেগোশিয়েট করতে হবে,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা।

৯৩ হাজারের বেশি অবৈধ অভিবাসী

গত এক বছর ধরেই অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে তাগিদ দিয়ে আসছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সঠিক পরিসংখ্যানও জানতে চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রায় ৮০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশির উপস্থিতির কথা জানায় এ বছরের এপ্রিল মাসে ঢাকা সফর করা ইইউ প্রতিনিধিদল।

তবে সর্বশেষ ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরো স্টেটের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইউরোপের দেশগুলোতে ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশি অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। তাদের ফেরত আনতে প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে ইইউ। এমনকি ভিসার ওপর কড়াকড়ি আরোপের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। তবে আশ্রয় চাওয়া বাংলাদেশিদের ঢালাওভাবে ফেরত না পাঠিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া ফেরত আনা অভিবাসীদের পুনর্বাসনেও সরকারের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে শরণার্থী বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরু’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সি আর আবরার বেনারকে বলেন, “ওই দেশগুলোতে যারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন, সেই প্রক্রিয়া যেন সম্পন্ন হয়। তারপরে তারা যদি ইকোনমিক মাইগ্রেন্ট হিসেবে বিবেচিত হন তাহলে নিয়ে আসা যেতে পারে। তবে ধরা পড়লেই যেন ঢালাওভাবে ফেরত দেওয়া না হয়।”

ফেরত আনার পরে তাঁদের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান বেনারকে বলেন, “অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত একান্তই সংশ্লিষ্ট দেশের বিষয়। তবে ফেরত আসার পরে তাঁরা যাতে সমাজে পুনর্বাসনের সুযোগ পান, সে ব্যবস্থা বাংলাদেশকেই করতে হবে।”

ইউরোপ থেকে ফেরত আসা অভিবাসীদের পুনর্বাসনে ব্র্যাক আইওএম’র সঙ্গে যৌথভাবে তিন বছর মেয়াদের একটি প্রকল্প পরিচালনা করতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ভিসা বন্ধের হুমকি

এদিকে ইতালি থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের দ্রুত ফিরিয়ে না আনলে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপের হুমকি দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। খোদ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ জাঙ্কার বাংলাদেশের জন্য এই সতর্কতা উচ্চারণ করেন বলে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক খবরে জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে ৯৩ হাজারের বেশি অভিবাসী প্রবেশ করে বলে জানায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। এদের মধ্যে নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ ও গায়ানার নাগরিকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

এর আগে ইতালিতে শরণার্থীদের বেশিরভাগ সাব-সাহারান আফ্রিকার অধিবাসী হলেও বর্তমানে বাংলাদেশি নাগরিকদের সংখ্যা বেশি বলে জানায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট তাদের মে মাসের ৫ তারিখে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।

“চিত্র দ্রুত বদলে যাচ্ছে, বর্তমানে অধিকাংশ অভিবাসী বাংলাদেশের নাগরিক,” ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এর মুখপাত্র ফ্লাভিও ডি গিয়াকোমো।

“গত বছর মার্চ পর্যন্ত যেখানে মাত্র একজন বাংলাদেশি ইতালিতে এসেছিলেন, সেখানে এ বছর একই সময়ের মধ্যে ইতালিতে এসেছেন ২,৮৩১ জন বাংলাদেশি নাগরিক,” ইন্ডিপেন্ডেন্টকে জানান গিয়াকোমো।

তবে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত ইতালিতে ৮ হাজার ৪৩৬ জন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে বলে জানায় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।