তুরস্কে অবৈধভাবে অবস্থানরত ৫৬ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হচ্ছে

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.12.03
ঢাকা
191203_Bangladeshis_Return_Turkey_1000.JPG তুরস্কের বদরুম শহরে পুলিশের হাতে আটক কয়েকজন বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি অবৈধ অভিবাসী। তাঁরা সকলেই তুরস্ক থেকে গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
[রয়টার্স]

তুরস্কে অবৈধভাবে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এর অংশ হিসাবে দেশটিতে অবস্থানরত ৫৬ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনতে অনাপত্তিপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুনিম হাসান বেনারকে বলেন, পুলিশের অনাপত্তির ভিত্তিতে তাঁদের ট্রাভেল পাশের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হবে। তাঁরা মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পাড়ি জমাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন।

তিনি বলেন, ওই ৫৬ জনের কারও বিরুদ্ধে জঙ্গি অথবা রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপের কোনো প্রমাণ পায়নি এসবি।

তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে পুলিশের ছাড়পত্র সবসময় সঠিক হয় না। যারা ফিরে আসছেন তাঁদের কেউ যে ইসলামিক স্টেটের অনুসারী নন সে কথা হলফ করে বলা যায় না। উল্লেখ্য, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সিরিয়ার সাথে সীমান্ত থাকা ইউরোশীয় দেশ তুরস্ক।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেনারকে বলেছেন, বিদেশে যেসব বাংলাদেশি ট্রাভেল পাশ নিয়ে দেশে ফেরার জন্য আবেদন করবেন, তাঁদের বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কারণ সন্ত্রাসীরা কৌশল বদল করে ট্রাভেল পাশ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।

যুগ্ম সচিব মুনিম হাসান বেনারকে বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তুরস্কে অবৈধভাবে প্রবেশ করা বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে চাপ দিচ্ছে তুরস্ক। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে আমরাও আমাদের নাগরিকদের ফেরত আনতে চাই।”

তিনি বলেন, “এর অংশ হিসাবে তুরস্কের তালিকা অনুযায়ী মোট ৫৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা। সংস্থাটি বলেছে, তাঁদের কারও বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। আমরা খুব শি​গগির ট্রাভেল পাশ দিয়ে তাঁদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করব।”

মুনিম হাসান বলেন, “আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এসব বাংলাদেশি মানব পাচারের শিকার। তাঁরা তুরস্ক হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন।”

তিনি বলেন, “তাঁদের কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই। সুতরাং ট্রাভেল পাশ দিয়ে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।”

জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের স্বর্ণযুগে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও কিছু চরমপন্থী তুরস্ক হয়ে সিরিয়া প্রবেশ করে। ঢাকার বাসিন্দা ডা. রোকন উদ্দিন সপরিবারে এবং আরও অনেকেই সিরিয়ায় পাড়ি জমান।

ইসলামিক স্টেটের প্রকাশনায় বাংলাদেশ থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে গিয়ে মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির এক ছাত্রের প্রাণ হারানোর খবর প্রকাশ হয়।

সিরিয়া থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে হলি আর্টিজান হামলার প্রশংসা করে বাংলাদেশে হামলার হুমকি দেয় বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া কয়েক জঙ্গি।

এ বছর সিরিয়া থেকে ইসলামিক স্টেট বিতাড়িত হলে বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাশ দেয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “অধিকাংশ সন্ত্রাসীদের কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই। তারা কৌশল হিসেবে ট্রাভেল পাশ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে।”

তিনি বলেন, “আর সে কারণে আমরা ট্রাভেল পাশ দেয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেছি। আর যারা ট্রাভেল পাশ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে, তাদের বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখা হবে, তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে ‍যুক্ত ছিল কি না।”

মন্ত্রী বলেন, কোনো প্রকার সন্ত্রাসী কাজের সাথে সংশ্লিষ্টতার পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ইউরোপ থেকে কয়েক হাজার অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরানো হচ্ছে। আর সে কারণে তুরস্কও সে দেশে ধরা পড়া অথবা চিহ্নিত অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “তুরস্কে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের বড় অংশ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েছে অথবা ব্যর্থ হয়েছে। তারা মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছে।”

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “তবে পুলিশ যাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে অনাপত্তি দিয়েছে তারা সবাই যে মানবপাচারের শিকার সে কথাও নিশ্চিত করে বলা যাবে না।”

তিনি বলেন, ইসলামিক স্টেটের পক্ষে যুদ্ধ করতে অথবা তাদের সেবা করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যারা সিরিয়া গেছে, তারা তুরস্ক হয়েই গেছে। বাংলাদেশ থেকেও কিছু লোক গেছে যদিও সেই সংখ্যা অন্যান্য দেশের চেয়ে কম। অনেকে তুরস্কে ধরা পড়েছে।

সাখাওয়াত বলেন, “সম্প্রতি তুরস্কে আটক সকল সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। সুতরাং আমাদের দেখতে হবে কোনো সন্ত্রাসী যেন ট্রাভেল পাশ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। কারণ, বাংলাদেশে পুলিশের অনাপত্তিপত্র সবসময় সঠিক হয় না।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।