দেশে আল কায়েদার উপস্থিতি আবারো বাংলাদেশের অস্বীকার

শৈলজা নীলাকান্তন
2021.01.15
ওয়াশিংটন ডিসি
দেশে আল কায়েদার উপস্থিতি আবারো বাংলাদেশের অস্বীকার ঢাকায় ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়কে জঙ্গিরা বাসায় ঢুকে হত্যা করার পর তাঁর শোকাহত স্ত্রী আশামনি। ৭ আগস্ট ২০১৫।
[এএফপি]

উগ্রপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদা অতীতে বাংলাদেশে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ, যদিও দেশটির পররাষ্ট্রদপ্তরের বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস বিষয় বার্ষিক প্রতিবেদনে এই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। 

গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে আল কায়েদার “নতুন ঘাঁটি ইরান” প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল পম্পেও বলেন, ইরান যদি এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন দেয় তবে এই গোষ্ঠীটি “বাংলাদেশের মতো জায়গাগুলোতেও বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে দেবে, যেখানে এদেরই একটি অংশ আগে আক্রমণের ঘটনা ঘটিয়েছিল।” 

এই বক্তব্যের পরদিনই এ সম্পর্কে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

“মি. পম্পেও বাংলাদেশকে এমন একটি স্থান হিসাবে উল্লেখ করেছেন, যেখানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল কায়েদা অতীতে আক্রমণের ঘটনা ঘটিয়েছে, এবং অযথাই ভবিষ্যতে একই ধরনের আক্রমণের আশঙ্কা করেছেন তিনি,” বুধবার এক বিবৃতিতে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

এতে বলা হয়, “একজন জ্যেষ্ঠ নেতার এ ধরনের দায়িত্বহীন মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক ও অগ্রহণযোগ্য। এই ধরনের ভিত্তিহীন ও অসত্য বক্তব্য বাংলাদেশ তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে।” 

বেনারের পক্ষ থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দুই দেশের মধ্যকার সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার যৌথ কার্যক্রমগুলোর কথা উল্লেখ করেন। 

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমসহ অনেকগুলো ক্ষেত্রে যৌথ অগ্রাধিকারের ভিত্তিকে কাজ করে থাকে। আমরা সব সময়ই সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়কে গুরুত্বের সাথে দেখি।”

যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আইন অনুযায়ী দমনে কাজ করে যাচ্ছে সে বিষয়ে প্রতিবছর দেশটির পররাষ্ট্রদপ্তরকে কংগ্রেসে প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়।

বাংলাদেশ সরকার অব্যাহতভাবে দেশে আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতির বিষয় অস্বীকার করার কথা উল্লেখ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম’ বা দেশভিত্তিক সন্ত্রাস বিষয়ক প্রতিবেদনে। 

দেশটির ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে বলা হয় “বাংলাদেশ সরকার দেশের সন্ত্রাসী হামলাগুলোর জন্য স্থানীয় জঙ্গিদের দায়ী করলেও, আল কায়েদা ইন দি ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (একিউআইএস) ও আইসিস মিলে ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশের অন্তত ৪০টি হামলার দায় স্বীকার করেছে।

“আইসিস ও একিউআইএস-এর সাথে সম্পৃক্ত একাধিক প্রকাশনা, ভিডিও ও ওয়েবসাইটে বাংলাদেশি জঙ্গিদের উপস্থাপন করা হয়েছে,” বলা হয় ওই প্রতিবেদনে।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটেরই (আইএস) অন্য নাম আইসিস, যে গোষ্ঠীটি গত এক দশকে আল কায়েদার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রদপ্তরের প্রতিবেদন মতে, একিউআইএস-সম্পৃক্ত এক জঙ্গি ২০১৮ সালে “ইসলামের শত্রু” আখ্যা দিয়ে বিজ্ঞান লেখক অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনা ঘটায়। একই বছর কবি ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যাকাণ্ডের সাথেও জঙ্গি গোষ্ঠীটির সম্পৃক্ততার বিষয়ে সন্দেহ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একিউআইএস ২০১৬ সালে বাংলাদেশে দুটি হামলার দায় স্বীকার করে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু মাহবুব রাব্বি তনয়কে কুপিয়ে হত্যা। 

একিউআইএস-এর সাথে সম্পৃক্ত বাংলাদেশের জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারউল্লা বাংলা টিম (এবিটি) ও আনসার আল ইসলাম ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মুক্তমনা ব্লগার ও লেখক হত্যার সাথে জড়িত বলে সেই সময় বেনারনিউজের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। 

একইভাবে ২০১৫ সালের আগস্টে ঢাকায় বাসায় ঢুকে ব্লগার নীলাদ্রি চট্ট্যোপাধ্যায়কে (নিলয় নীল) হত্যার দায় স্বীকার করেছিল আল কায়েদার দক্ষিণ এশিয় শাখা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।