করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই জেএমবির ১৭ সদস্য গ্রেপ্তার
2020.05.05
ঢাকা
আপডেট: ৫ মে ২০২০। ইস্টার্ন সময় সন্ধ্যা ০৬.১৫
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশজুড়ে চলমান ছুটির মধ্যেই রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সন্দেহভাজন ১৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ (সিটিটিসি)।
তাঁরা ‘জিহাদে’ যোগ দেবার জন্য কৌশলে তাবলিগ জামায়াতের সঙ্গে ভিড়ে ভারত হয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কাকরাইল মসজিদের উল্টো দিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সামনে থেকে সোমবার সন্ধ্যায় তাঁদের গ্রেপ্তার করার কথা বেনারকে জানান সিটিটিসি বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার তহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে রমনা মডেল থানায় মামলা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক বাবু কুমার সাহা বেনারকে জানান, মঙ্গলবার তাঁদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কারাগারে রাখার আবেদন করা হয়েছে।
ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনছারী শুনানি শেষে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সারাদেশ করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকলেও জঙ্গিরা নিজেদের কার্যক্রম ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) বেনারকে বলেন, “সারা দেশ যখন করোনাভাইরাস নিয়ে রীতিমত আতঙ্কিত, তখন এই সময়টা নানাভাবে কাজে লাগাতে ব্যস্ত রয়েছে জঙ্গিরা। এই ১৭ জনের আটক সে কথাই প্রমাণ করে।”
তিনি বলেন, “ধর্মান্ধ ও জঙ্গি গোষ্ঠী নিজেদের বিশ্বাসকে বাস্তবায়ন করার জন্য এই মহামারির মধ্যেও নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সেটা কখনো অনলাইনে কখনো বা অফলাইনে।”
“বর্তমানে পুলিশ বাহিনী করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় মানুষকে ঘরে রাখা ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার কাজে ব্যস্ত। জঙ্গিরা যেন এই সুযোগটা ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে,” বলেন মোহাম্মদ আলী শিকদার।
সোমবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন; মোঃ হায়দার আলী (৪৪), মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে মাসুম, মোঃ জামিরুল ইসলাম (২৪), মোঃ বিল্লাল হোসেন (৩৮), মোঃ শেখ আরাফাত ওরফে জনি (৪৮), মোঃ ইমরুল হাসান ওরফে ইমন (২৫), মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৫), মোঃ মোজাম্মেল হক (৩৩), মোঃ শাহজালাল (৩৪), মোঃ আক্তারুজ্জামান (৩০), মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে সাব্বির (২৩), মোঃ আবিদ উল মাহমুদ ওরফে আবিদ (২২), মোঃ সোহাইল সরদার (৩৩), মোঃ ওবায়দুল ইসলাম ওরফে সুমন (৩০), মাহমুদ হাসান ওরফে শরীফ (১৮), মোঃ মাজেদুল ইসলাম ওরফে মুকুল ( ২৮) ও মোঃ সোহাগ হাসান (২০)।
তাঁদের কাছ থেকে ১৯টি মুঠোফোন, দুই লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও ৯২২ ডলার জব্দ করা হয়।
তহিদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করেছে।
২০০৫ সালে সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংগঠনটির কার্যক্রম চলছে।
জিহাদে যোগ দিতে সৌদি যাওয়ার চেষ্টা
তহিদুল সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৭ সালে এক বাংলাদেশি প্রকৌশলী সৌদি আরবে যান এবং এখনো সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি সেখান থেকে মুসলিমদের পক্ষে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়ে অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এই ১৭ জন ওই প্রকৌশলীর বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর সাথে যোগাযোগ করে জিহাদ করতে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা চালান।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে তাঁরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে সৌদি যাবার সিদ্ধান্ত নেন।
তহিদুল ইসলাম বলেন, “তাঁদের পরিকল্পনা ছিল তাবলিগ-জামায়াতের পরিচয় দিয়ে সাতক্ষীরা বা যশোরের বেনাপোল সীমান্ত হয়ে ভারত-কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে সৌদি আরবে পৌঁছা। সে জন্য গত ১৮ মার্চ তাঁরা প্রথমে সাতক্ষীরা এবং পরে যশোর সীমান্তের কাছে বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করেন।”
“কিন্তু সীমান্ত পার হতে না পেরে ঢাকা হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। সে জন্যই তাঁরা ঢাকায় এসে কাকরাইল এলাকায় অবস্থান করছিলেন,” জানান ওই কর্মকর্তা ।
তহিদুল ইসলাম আরো বলেন, ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন ছাত্র গত জানুয়ারি মাসে ওমরা পালন করতে সৌদি আরব গিয়ে ফিরে আসেননি। তাঁরাও ওই প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করেছিলেন বলে পুলিশ পরে জানতে পেরেছে।
এর আগে বিভিন্ন সময় আরও সাতজন সৌদি আরবে গেছেন বলে গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে জানান সিসিটিসির এই কর্মকর্তা।
এদিকে ওই প্রকৌশলীর সন্দেহজনক জঙ্গি কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এর আগে সৌদি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ হয়েছে বলে বেনারকে জানান সিটিটিসির উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “এখন যেহেতু আমরা তাঁর জঙ্গি কার্যক্রম সম্পর্কে নিশ্চিত প্রমাণ পেয়েছি, সেহেতু তাঁর অবস্থান চিহ্নিত করা ও সম্ভব হলে তাঁকে ফেরত পাঠানোর জন্য আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি কর্তৃপক্ষকে লিখব।”
সোমবারে গ্রেপ্তার হওয়া দলটির নেতৃত্ব হায়দার আলী দিচ্ছিলেন বলেও জানান সাইফুল।