জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ব্র্যাকের এক প্রকৌশলী গ্রেপ্তার

শরীফ খিয়াম ও আবদুর রহমান
2021.05.20
ঢাকা ও কক্সবাজার
জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ব্র্যাকের এক প্রকৌশলী গ্রেপ্তার ঢাকার একটি সড়কে হিযবুত তাহরিরের পোস্টার লাগানো দেয়ালের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একজন পথচারী। ২৫ আগস্ট ২০১৯।
[শরীফ খিয়াম/বেনারনিউজ]

জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার সন্দেহে কক্সবাজার থেকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে কর্মরত এক প্রকৌশলীকে গ্রেপ্তারের কথা বৃহস্পতিবার জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার এইচ এম মেহেদী হাসান রানা (৩০) ব্র্যাকে অ্যাসিস্ট্যান্ট টেকনিক্যাল অফিসার হিসাবে তিন বছর ধরে কক্সবাজারে কর্মরত জানিয়ে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) পুলিশ সুপার (এসপি, মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস) মোহাম্মদ আসলাম খান বেনারকে বলেন, “সে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরিরের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিল।”

“সংগঠনটির অনলাইন সম্মেলন ও প্রচারণায় তাঁর সম্পৃক্ততার প্রমাণ” পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, রানাকে বুধবার সন্ধ্যায় উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী অধ্যুষিত এলাকা পালংখালী থেকে আটক করে এটিইউ।

রানা ২০১৮ সালের জুলাই থেকে কক্সবাজারে চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন জানিয়ে ব্র্যাকের মিডিয়া ম্যানেজার মাহবুবুল আলম কবির বেনারকে বলেন, “পুলিশকে আমরা জানিয়েছি, তদন্তের স্বার্থে আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।”

এছাড়া রানার কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার জন্য একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

রানার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার উখিয়া থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়েরের পর আদালতে তোলা হয়।

রানা দোষ স্বীকার করে “স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ায়” তাঁর রিমান্ড চাওয়া হয়নি জানিয়ে এসপি আসলাম বলেন, “জবানবন্দিতে সে হিযবুত তাহরিরের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করায় আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছে।”

তিনি জানান, রানা কক্সবাজারে শরণার্থীদের সাথে কাজ করলেও রোহিঙ্গাদের মধ্যে “নিজের সংগঠনের মতবাদ প্রচারের কথা স্বীকার করেনি।”

রানা অনলাইন মিডিয়ায় কথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি আটক জঙ্গিদের মুক্তির জন্যও চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান এসপি আসলাম।

এছাড়া “বর্তমান সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে দেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রসহ বিভিন্ন কার্যক্রম” পরিচালনার সাথেও রানা যুক্ত ছিলেন বলে জানান তিনি।

ফার ইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ঢাকার বনানীর ক্যাম্পাস থেকে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা রানার বাড়ি পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জ, চাকরিসূত্রে থাকতেন কক্সবাজার।

রানাকে গ্রেপ্তারের সময় হিযবুত তাহরিরের তিন রকমের লিফলেট পেয়েছে এন্টি টেররিজম ইউনিট। তাঁর মোবাইল ফোন এবং দুটি সিমকার্ডও জব্দ করার কথা জানিয়েছে তারা।

জঙ্গিবাদে জড়িত সন্দেহে আটক এইচ এম মেহেদী হাসান রানা। [সৌজন্যে: পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট]
জঙ্গিবাদে জড়িত সন্দেহে আটক এইচ এম মেহেদী হাসান রানা। [সৌজন্যে: পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট]
বর্তমানে জঙ্গিবাদে উচ্চশিক্ষিতদের অংশগ্রহণই বেশি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মতে, আশি ও নব্বইয়ের দশকে “দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে জঙ্গিবাদের উত্থান” হলেও জঙ্গিবাদের বর্তমান রূপে “উচ্চশিক্ষিত, মেধাবী ও অবস্থাসম্পন্নদের অংশগ্রহণই বেশি।”

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ২০১৬ সালের হোলি আর্টিজানের ঘটনায় জড়িতরাও এই শ্রেণির মানুষ ছিলেন বলে জানান তিনি।

এছাড়া এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট শিক্ষকদের হিযবুত তাহরিরের সাথে যুক্ত থাকা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার মতো ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উচ্চশিক্ষিত হলে বা ব্র্যাকের চেয়েও বড় কোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও যে কেউ জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত হতে পারে।”

তবে সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারে “হিযবুত তাহরিরের কোনো সক্রিয়তা চোখে পড়েনি,” বলে বেনারকে জানান উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী।

“কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে যেসব ধর্মভিত্তিক সংগঠন বিভিন্ন ব্যানারে সক্রিয় আছে, তাদের মধ্যে সরকার বিরোধীদের উপস্থিতি বিভিন্ন সময়ে টের পেয়েছি আমরা। তাই এখানে জঙ্গি কার্যক্রম চলছে না, সেটি নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই,” বলেন তিনি।

রোহিঙ্গা শিবিরে হিযবুত তাহরিরের তৎপরতার খবর এর আগেও পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৭ সালের আগস্টের শেষদিকে মিয়ানমার থেকে যখন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ঢল নামে তখন তাদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে উসকানিমূলক বিভিন্ন বক্তব্য সমৃদ্ধ পোস্টার লাগিয়েছিল তারা।

মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ইসলামি গবেষক ও ফিলিস্তিনের জেরুজালেমের শরিয়া আদালতের বিচারপতি শায়েখ তাকিউদ্দীন আন-নাবহানী ১৯৫৩ সালে হিযবুত তাহরির প্রতিষ্ঠা করেন। 

প্রতিষ্ঠার পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে এই দলটি ধীরে ধীরে আফ্রিকা, ইউরোপ, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

উগ্র মতবাদ প্রচার ও কর্মকাণ্ডের কারণে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর এই সংগঠনটিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।