চট্টগ্রামে ৬ নব্য জেএমবির সদস্য গ্রেপ্তার

জেসমিন পাপড়ি
2020.10.14
ঢাকা
201014_CTG-NEO_JMB_ARRESTED_1000.jpeg চট্টগ্রামের ষোলশহরে পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ছয়জনের সাথে সিএমপি সদস্যরা। ১৪ অক্টোবর ২০২০।
[সৌজন্যে: সিএমপি]

চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নব্য জেএমবির ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

বান্দরবান জেলা শহরের কলাবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এলাকা থেকে দুইজন এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার দরগাহমুড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাকি চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন।

তিনি বেনারকে বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে ছয়জনই পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।”

সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছয়জনই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন নব্য জেএমবির সদস্য। তারা সংগঠনের আদর্শ বাস্তবায়ন ও শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয়ভাবে দলবদ্ধ হয়ে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এতে বলা হয়, অনলাইনে পাওয়া অপ্রচলিত মোবাইল ফোনের অ্যাপস ব্যবহার করে এর মাধ্যমে দলের সকল সদস্যের সাথে যোগাযোগ করে বোমা/আইইডি তৈরির বিভিন্ন ভিডিও আদান-প্রদানে করে সেই অনুসারে তারা মালামাল সংগ্রহ করে আইইডি তৈরি করে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ কমে আসলেও জঙ্গিরা একেবারে থেমে নেই। আইনশঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও তারা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “একটা সময়ে চট্টগ্রামকে জঙ্গিবাদের অন্যতম আস্তানা হিসেবে দেখা হতো। তবে আপাতত সে ধরনের আলামত নেই। এটা অবশ্যই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সার্থকতা। তাদের নিবারণমূলক ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা নজরদারির কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।”

“তারপরেও অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে জঙ্গিরা বিভিন্ন সময়ে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে,” বলেন তিনি।

গ্রেপ্তার হলেন যারা

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আব্দুর শুক্কুরের ছেলে মহিদুল আলম (২৪), ওসমান গনির ছেলে মো. জহির উদ্দিন (২৮), শাহাবুদ্দিনের ছেলে মো. মঈন উদ্দিন (২০), নুরুল কবিরের ছেলে মো. আলা উদ্দিন (২৩), আবুল হাশেমের ছেলে মো. আবু সাদেক (১৯) ও উত্তর আমিরাবাদ এলাকার সালেহ আহম্মদের ছেলে রহম উল্ল্যাহ প্রকাশ আকিব (২৪)।

এদের মধে মধ্যে মহিদুল আর জহিরকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বান্দরবান থানাধীন কলাবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশ থেকে এবং মঈন, সাদেক ও আকিবকে এদিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সাতকানিয়া উপজেলার কেরানিরহাট কাঁচাবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান আসিফ মহিউদ্দীন। এছাড়া অপর আসামি আলা উদ্দিনকে বুধবার ভোর রাতে লোহাগাড়া থানার দরগামুড়া এলাকা থেকে আটক করা হয়।

সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বলেন, “এদের মধ্যে সাদেক পুলিশ বক্সের ভেতরে বোমাটি রেখে আসে। এছাড়া আকিব বোমা তৈরিতে দক্ষ বলে আমরা জানতে পেরেছি। এসব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরদিন এ ঘটনায় ট্রাফিক পরিদর্শক অনিল বিকাশ চাকমা বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন।

বিস্ফোরণের ঘটনার পরদিনই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি কার্যক্রম নজরদারি সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’ জানিয়েছিল, জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

তবে এর আগে গত মে মাসে এই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এই ঘটনার সাথে আইএসের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ মেলেনি। নব্য জেএমবির পরিকল্পনাতেই এই হামলা বাস্তবায়ন হয়।

এদিকে বুধবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিএমপি জানায়, পরে ঘটনাস্থলের আশেপাশের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা, প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছিল। গত রাতে (মঙ্গলবার) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখার গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তা কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের একটি দল ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।