আইএস জঙ্গিদের ঢুকতে দেবে না বাংলাদেশ

প্রাপ্তি রহমান
2019.03.26
ঢাকা
190326_IS_1000.JPG আইএস এর পতনের পর সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলের দেইর আল জর এলাকায় একটি তেলক্ষেত্র পাহারা দিচ্ছে সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (এসডিএফ) সৈন্যরা। ২৩ মার্চ ২০১৯।
[রয়টার্স]

আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট ইন সিরিয়ার (আইএস) সবশেষ ঘাঁটির পতনের ঘোষণা এসেছে গত শনিবার। বিশ্বের অন্যান্য এলকার জঙ্গিদের সাথে এ মুহূর্তে সেখানে কিছু বাংলাদেশিও বন্দী আছে মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (এসডিএফ) হাতে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কোনোভাবেই ওইসব জঙ্গিদের বাংলাদেশে ফিরতে দেয়া হবে না।

“আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই কতজন বাংলাদেশি আইএস এর পক্ষে যুদ্ধ করতে সিরিয়া-ইরাক গেছে। তবে, আমরা বিমানবন্দরগুলোকে সতর্ক থাকতে বলেছি। সন্দেহজনক এমন কাউকে পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করা হবে,” বেনারনিউজকে বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, “অনেক জঙ্গি যাদের আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশি বলা হচ্ছে তারা আসলে আমাদের নাগরিক নয়। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অন্য কোনো দেশের নাগরিক। তাদেরও বাংলাদেশে আসতে দেয়া হবে না।”

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা বিমানবন্দরগুলোয় সতর্কতা জারি করেছেন। তাঁরা বলছেন, যত দূর খোঁজখবর পাওয়া গেছে আইএসে যোগদানকারী জঙ্গিদের সঙ্গে নিজ নিজ দেশের পাসপোর্ট বা অন্যান্য ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই। সে ক্ষেত্রে তারা চাইলেও দেশে আসতে পারবে না। এরপরও যদি কেউ ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে তাহলে তারা বিচারের মুখোমুখি হবে।

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোয় দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, গ্রেপ্তার এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

“যাঁরা সিরিয়ায় গেছেন, তাঁদের কারও কারও দেশে ফিরে আসার চেষ্টা রয়েছে। তাঁদের ছবিসহ তথ্য বিমানবন্দরগুলোতে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যেন গ্রেপ্তার এড়াতে না পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে,” মনিরুল ইসলাম।

যাদের কথা জানা গেছে

পুলিশ সদরদপ্তর ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, বাংলাদেশ থেকে চল্লিশজনের মতো তরুণ আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগ দিতে দেশ ছাড়ে। এর বাইরেও অন্য কোনো দেশ থেকে সিরিয়ায় যাওয়া কিছু দ্বৈত নাগরিক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউ কেউ জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগ দিয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বাহিনীগুলো বলছে, এই তিন দলের সদস্যদের মাথায় রেখেই নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

তা ছাড়া, মার্কিন সমর্থনপুষ্ট সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এসডিএফ) সিরিয়ার বাঘুজে বিভিন্ন দেশের আটশ আইএস জঙ্গিকে বন্দী করে রেখেছে। বার্তা সংস্থা এপি বলছে, জঙ্গিদের স্ব স্ব দেশে নিয়ে বিচার শুরুর আহ্বান জানিয়েছে তারা। তবে বাংলাদেশে কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা কাউকেই যেচে ফিরিয়ে আনবেন না। তারপরও কোনো উপায়ে যদি বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে গ্রেপ্তার করে বিচারের ব্যবস্থা হবে।

এখন পর্যন্ত কারা কারা ফিরে আসতে পারে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা কমপক্ষে তিন ব্যক্তি ও একটি পরিবারের কথা বলেছেন।

তাঁরা হলেন, দন্ত চিকিৎসক আরাফাত রহমান তুষার, দুই ভাই ইব্রাহিম হাসান খান ও জুনায়েদ হাসান খান ও সপরিবারে বাংলাদেশ ছাড়া চিকিৎসক খন্দকার রোকনউদ্দীন, তাঁর স্ত্রী নাঈমা আক্তার, দুই মেয়ে রমিতা রোকন ও রেজওয়ানা রোকন ও মেয়ের জামাই সাদ কায়েস। এদের সবাই ২০১৫ সালের দিকে দেশ ছাড়েন।

এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়া ভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমে আরাফাত রহমান তুষারের একটি ভিডিও প্রচারিত হয়। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, খেলাফত শেষ।

“এখানে বেঁচে থাকার জন্য সামান্য খাবার আর পানিও নেই। যেই খলিফার ডাকে দেশ ছেড়েছিলাম তারই কোনো খোঁজ নেই। খিলাফত শেষ,” আরাফাত রহমান তুষার বলেন।

এই আরাফাত সেই তিন যুবকের একজন যারা সিরিয়ার রাক্বা থেকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। অপর দুই যুবক তাহমিদ শফি ও তওসিফের কোনো খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নেই।

ইব্রাহীম হাসান খান ও জুনায়েদ হাসান খানের বেড়ে ওঠা সৌদি আরবে। পরিবারের অন্য সদস্যরা এখনও সেখানেই রয়েছেন। তাঁরা দুজনেই বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী। সিরিয়ায় যাওয়ার আগে ঢাকাতেই ছিলেন। এই দুই ভাইয়ের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সুস্পষ্ট তথ্য আছে। সিরিয়ায় যুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁদের ছবি প্রকাশিত হয়। গোয়েন্দাদের হাতে সে তথ্যও রয়েছে।

সূত্র বলছে, আইএস নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে চিকিৎসক রোকনউদ্দীন সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে।

ঝুঁকিকারণ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে, ফেরার সুযোগ পেলে এবং ফেরার পর বিচার না করলে জঙ্গিরা দেশের ভেতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। তাঁরা হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করছেন। আফগান ফেরত যোদ্ধারা বাংলাদেশে এসে এই জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলে এবং নব্বই দশক থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন জঙ্গি হামলা চালায়।

কথা হচ্ছিল নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।

“সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যদি এসেই পড়ে তাঁদের গভীরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। অন্য কয়েদিদের থেকে আলাদা করে তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। কীভাবে তারা উদ্বুদ্ধ হলো জানতে হবে,” সাখাওয়াত বলেন।

এসব তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারের কৌশল ঠিক করা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কামরান রেজা চৌধুরী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।