প্রতিবেদন ও ছবি প্রকাশ করে জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করল আইএস

প্রাপ্তি রহমান
2017.04.21
ঢাকা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গোলচত্বরের পাশে পুলিশ বক্সের বিস্ফোরণে একজন নিহত হবার পর সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান। মার্চ ২৪, ২০১৭।
স্টার মেইল

সিরিয়া ও ইরাক ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর মুখপাত্র আত-তামকীন ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের ওপর সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণকারী হিসেবে দাবি করে এক তরুণের ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ওই ছবি মিরপুর থেকে নিখোঁজ আয়াদ হাসান এর।

তবে বিষ্ফোরণে নিহত তরুণ আয়াদ কি না সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় পরিবার। পাশাপাশি আত-তামকীন এর প্রতিবেদন মিথ্যা তথ্যে পরিপূর্ণ বলে পুলিশের দাবি।

গত ১৬ এপ্রিল আত-তামকীন ‘আর মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ কর সমবেতভাবে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের শুরুতে যে ছবি ব্যবহার করা হয় তাতে এক তরুণকে একটি তলোয়ার উঁচিয়ে থাকতে দেখা যায়। আরও একটি ছবি ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যাহার করা হলেও সে ছবিটি কার তা স্পষ্ট নয়। তবে তলোয়ার উঁচিয়ে রাখা তরুণটির নাম আবু মুহাম্মদ আল-বাঙ্গালী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার এক মাস পর গত বছরের ৯ আগস্ট চিরকুট রেখে আয়াদ হাসান ও তার খালাতো ভাই রাফিদ হাসান তাদের মিরপুরের বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল।

আয়াদের মা মুনমুন আহমেদ বলেছেন তলোয়ার ধরে থাকা তরুণের ছবিটি তাঁর ছেলের।

“আত-তামকীনের ছবিটা আয়াদের,” বেনারকে নিশ্চিত করেন মুনমুন আহমেদ।

প্রসঙ্গত বিশ্বজুড়ে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস যেসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে সে সম্পর্কিত খবর ও ছবি আত-তামকীনে বাংলায় প্রকাশ করা হয়।

হলি আর্টিজানে হামলার এক মাস পর র‍্যাব আত-তামকীনের অ্যাডমিন সিফাত ও তার সহযোগিদের গ্রেপ্তারের করে। তখন র‍্যাব জানিয়েছিল এই দলটি আইএস এর কাছে ছবি ও প্রতিবেদন পাঠানোর কাজ করত। দলটির কয়েকজন বাংলা পাঠকদের জন্য বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুবাদ ও ভিডিও সম্পাদনার কাজেও সম্পৃক্ত ছিল বলে সেই সময় জানায় র‍্যাব।

জঙ্গিগোষ্ঠীর অনুকূলে বার্তা ছড়ানো এই সাইটটি বাংলাদেশ সরকার একাধিকবার বন্ধ করার পরও তাদের তৎপরতা চলছে। সর্বশেষ এই সাইটটি গত আগস্টে বন্ধ করা হয়।

আত-তামকীন এর প্রতিবেদন মিথ্যায় পরিপূর্ণ: পুলিশ

আত-তামকীনের ১৬ এপ্রিল সংখ্যায় বলা হয়েছে, “আবু মুহাম্মদ আল বাঙ্গালী ‘মুরতাদ’ পুলিশের মধ্যে ঢুকে পড়ে বিস্ফোরণ ঘটান। এতে তিনজন মারা যায় ও আরও অনেকে আহত হয়। এর একদিন পর সিলেটে ‘মুরতাদ’ সেনারা ‘মুজাহিদ’দের এক ঘাঁটিতে হামলার চেষ্টা চালায়, এ সময় ‘মুজাহিদ’দের বোমার বিস্ফোরণে কয়েক ডজন মুরতাদ হতাহত হয়। এ ছাড়া এর এক সপ্তাহ আগে আরেক মুজাহিদ বিস্ফোরক কোট দিয়ে আক্রমণ করেন ঢাকার আশকোনায় একটি এলিট ফোর্সের ঘাঁটিতে।”

মার্চ ২৪ তারিখ থেকে সিলেটের আতিয়া মহলে ১১১ ঘণ্টার অভিযান চলে। ২৫ তারিখ বিকেলে অভিযানস্থলের কাছে সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর বোমা বিস্ফোরণে র‌্যাব ও পুলিশের তিন সদস্যসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন। আহত হন প্রায় ৫০ জন।

ওই অভিযানের সময় বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়ে পরবর্তীতে মৃত্যুবরণকারী র‌্যাবের লে. কর্নেল আজাদসহ নিহত সবাইকেই আত-তামকীনে ‘মুরতাদ’ বলে দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ধরনের হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

তবে আত-তামকীনসহ আইএসের মুখপাত্র হিসেবে বিবেচিত বিভিন্ন সাইটে যেসব কনটেন্ট প্রচার হচ্ছে তার বড় অংশ মিথ্যায় পরিপূর্ণ বলে মনে করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

“যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ আহত বা নিহত হন, তখন আইএস দায় স্বীকারে এক মুহূর্ত দেরি করতে চায় না। কিন্তু আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, পুলিশ যখন একের পর এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালাচ্ছে এবং তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে, তখন তারা চুপ করে থাকছে,” মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন।

আত-তামকীনে গত ২৪ মার্চ হজরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাটি যেভাবে উদ্ধৃত হয়েছে তাতেও মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর-ই-আজম চৌধুরী বেনারকে বলেন, পুলিশ চেকপোস্টের কাছে বোমা বিস্ফোরণে বোমা বহনকারী তরুণ ছাড়া আর কেউ নিহত হয়নি।

“বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে বহনকারী তরুণ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ডজন ডজন লোক আহত হয়েছেন, তা-ও নয়। তবে বোমাটি শক্তিশালী ছিল। সেটি নিষ্ক্রিয় করার সময় ছয়জন সামান্য আহত হন,” বলেন নূর-ই-আজম চৌধুরী।

বিস্ফোরণে নিহত তরুণ আয়াদ কি না নিশ্চিত নয়

আত-তামকীনে প্রকাশিত ছবিটি আয়াদের বলে চিহ্নিত করলেও তাদের দাবি অনুযায়ী বিমান বন্দরের কাছে বোমা বিষ্ফোরণে নিহত তরুণ আয়াদ কি না সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন আয়াদের মা।

প্রতিবারই নিহতদের মধ্যে ছেলে আছে কি না তার খোঁজ নিয়েছেন ওই মা। বিমানবন্দর সড়কের ওপর বোমা বিস্ফোরণে নিহত তরুণের ছিন্নভিন্ন দেহ দেখে তিনি পুলিশকে জানান, ছেলেটি তার হতে পারে। তবে এখনো তিনি নিশ্চিত নন।

“গতকালও (বৃহস্পতিবার) ডিএনএ নমুনা মেলানো হয়েছে কি না খোঁজ নিয়েছি। এখনো রিপোর্ট হাতে পাইনি,” বেনারকে বলেন মুনমুন আহমেদ।

আয়াদ হাসানের মা মুনমুন আহমেদ মিরপুরে থাকেন। আয়াদ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তার (আয়াদের) বাবা মারা যান। নিখোঁজ হওয়ার পরপরই মুনমুন মিরপুর থানায় বিস্তারিত জানিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তবে ছেলের সন্ধান পাননি।

আয়াদ নিখোঁজ হওয়ার পর মুনমুন আহমেদের জিডির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত করে। মিরপুর অঞ্চলের সহকারী উপকমিশনার পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, রাফিদ ও আয়াদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার পেছনে তাদের মামাতো ভাই আরেফিনকে দায়ী করে পরিবার দুটি।

২৭ মার্চ মিরপুরের পর্বতা থেকে আরেফিনসহ চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।