জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা: অভিযোগপত্রে ছয় জনের নাম

শরীফ খিয়াম
2018.07.25
ঢাকা
180725_Zafar_Iqbal_1000.JPG হামলায় আহত হবার পর সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ড. জাফর ইকবাল। ৩ মার্চ ২০১৮।
বেনারনিউজ

উগ্রবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী ওলামাদের বয়ান শুনে, বই পড়ে এবং ভিডিও দেখে প্রভাবিত হয়েছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবালকে হত্যা চেষ্টাকারী ফয়জুল হাসান ওরফে ফয়েজ।

গত ৩ মার্চের ওই হত্যাচেষ্টার ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেবে পুলিশ। আসামিরা হচ্ছেন; হামলাকারী ফয়জুল, তাঁর বন্ধু মো. সোহাগ মিয়া, বাবা হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমান, মা মোসাম্মাত মিনারা বেগম, মামা ফয়জুর রহমান ও ভাই এনামুল হাসান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নগর পুলিশের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বুধবার রাতে বেনারকে বলেন, “তার সাথে জঙ্গিবাদী কোনো গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।”

এর আগে বিকেলে সিলেট নগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে লিখিত বক্তব্য দেন সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফয়জুল ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফয়জুল তাঁর বন্ধু সোহাগের কাছ থেকে ৮ জিবি মেমোরি কার্ড নেয়।

এতে জসিম উদ্দিন রাহমানী, তামিম উল আদনানী ও ওলিপুরী ‘হুজুরের’ ওয়াজ ছিল। যা শুনে সে জিহাদে উদ্বুদ্ধ হয়। জসিম উদ্দিন রাহমানীর লেখা ‘উন্মুক্ত তরবারি’ পড়ে ও তিতুমীর মিডিয়ার ভিডিও দেখে তাঁর ধারণা হয়, জাফর ইকবাল একজন ‘নাস্তিক’।

এ ছাড়া দাওয়া-ইলাল্লাহ নামে এক ওয়েবসাইটে ভূতের বাচ্চা সোলায়মান দেখে ও এতে বিভিন্ন মন্তব্য পড়ে ফয়জুলের ধারণা হয়, নবী সোলায়মান (রা.) কে কটাক্ষ করে বইটি লেখা হয়েছে।

পরে ফয়জুল প্রায় এক বছর আগে জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হামলার তিন-চার মাস আগে সে সিলেট নগরের আল হামরা মার্কেটের নিচতলার একটি দোকান থেকে একটি ছোরা কিনে। এরপর সে জাফর ইকবালকে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকে।

পরিতোষ ঘোষ বলেন, “গত ৩ মার্চ বিকেল চারটার দিকে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে যায়। হামলার আগে সে ওই স্থানে এক ঘণ্টা রোবোটিকস প্রতিযোগিতা দেখে। পাঁচটা ১০ মিনিটের দিকে জাফর ইকবালের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় ও সুযোগ খুঁজতে থাকে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সে জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালায়।”

এ ঘটনায় ওই দিনই শাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে সিলেট নগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। মামলায় ঘটনাস্থলের বিভিন্ন স্থিরচিত্র, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, মুঠোফোনের কল তালিকা ও অন্যান্য সাক্ষ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে পুলিশ ছয়জনকে চিহ্নিত করে।

ওসি শফিকুল বেনারকে বলেন, “পরিবারের সদস্যরা জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনার কথা না জানলেও ফয়েজের উগ্রবাদী চিন্তা-ভাবনার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন।”

প্রসঙ্গত, গত ৩ মার্চ শাবিপ্রবির মুক্তমঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশল (ট্রিপল ই) বিভাগের ট্রিপল ই ফেস্টিভ্যালের একটি প্রতিযোগিতায় জাফর ইকবালের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ফয়জুল হাসান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।