অব্যাহতি পেয়েও মুক্তি মিলল না হাসনাত করিমের
2018.07.26
ঢাকা
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলায় পুলিশের অভিযোগপত্র থেকে ব্রিটিশ নাগরিক হাসনাত করিম অব্যাহতি পেলেও প্রচলিত আইনি জটিলতার কারণে খুব শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি। এমনটাই মনে করছেন দেশের আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীরা।
হাসনাত করিমের মুক্তির বিষয়টি আবারও ঝুলে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে তাঁর পরিবার। বৃহস্পতিবার হাসনাত করিমের পক্ষে আইনজীবী হাসিবুর রশিদ মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে জামিন আবেদন করেন। হাকিম ফাহাদ বিন আমিন চৌধুরী ওই আবেদন না মঞ্জুর করেন।
মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের এক সূত্র বেনারকে জানায়, “হাকিম ফাহাদ বিন আমিন চৌধুরী ওই আবেদন না মঞ্জুর করেন। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে আদেশ দেবে অ্যান্টি টেরররিজম ট্রাইবুনাল।”
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির হামলায় ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় ১৭ জন বিদেশি নাগরিক ও দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন ২২ জন।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের তদন্ত কর্মকর্তারা গত ২৩ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে ওই হামলা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে ইসলামিক স্টেটপন্থী জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির আট সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। আট সদস্যের দুজন পলাতক ও ছয়জন হেফাজতে আছেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম ২০১৬ সালের ২ আগস্ট থেকে হলি আর্টিজান হামলা মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে কারাগারে আছেন।
অভিযোগপত্র থেকে হাসনাত করিমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ বাদ দেওয়া হয়েছে বলে বেনারকে জানান মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের রেকর্ডিং অফিসার শেখ রাকিবুর রহমান।
রাকিব জানান, অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বৃহস্পতিবার আদালতের একজন বিচারক অভিযোগপত্রটি খতিয়ে দেখেন।
“হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন অভিযোগপত্র খতিয়ে দেখেন এবং অভিযোগপত্রের ওপর ‘দেখা হয়েছে’ লিখে ফেরত পাঠান,” বলেন রাকিব।
মুখ্য মহানগর হাকিমের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো অভিযোগপত্র পুনঃনিরীক্ষণ করে রোববার অ্যান্টি টেররিজম কোর্টে পাঠাতে পারেন। এই আদালতেই হলি আর্টিজানে হামলা মামলার বিচার হবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শুনানির পর ঢাকার অ্যান্টি টেররিজম ট্রাইব্যুনাল অভিযোগপত্র গ্রহণের জন্য নতুন একটি তারিখ দেবে। ওই দিন হাসনাত করিম মুক্তি পেতে পারেন।
তবে অ্যান্টি টেররিজম ট্রাইব্যুনাল এখনো শুনানির তারিখ ঘোষণা করেনি বলে জানিয়েছে আদালত সূত্র।
“আমাদের দীর্ঘ ও জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে হাসনাত করিম খুব দ্রুত হয়তো মুক্তি পাবেন না। তাঁকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে,” বেনারকে বলেন ঢাকার বিচারিক আদালতে কর্মরত আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস।
এদিকে হাসনাতের মুক্তির জন্য আইনগত প্রক্রিয়ার বিষয়টি দেখতে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার বেনারকে জানান হাসনাত করিমের স্ত্রী শারমিনা পারভিন করিম।
“আসলে তাঁর মুক্তি যে আরও বিলম্বিত হলো তা নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি, কিছুটা হতাশও। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে,” বলেন শারমিনা।
শারমিনা বলেন, ঢাকায় ব্রিটিশ দূতাবাস থেকে একজন কর্মকর্তা প্রতি দুই মাস পরপর হাসনাত করিমকে দেখতে যেতেন।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকায় ব্রিটিশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বেনারকে বলেন, “আমরা তাঁকে দেখতে কারাগারে গেছি। তাঁর স্বাস্থ্য, তদন্ত ও বিচারের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছি।”
হাসনাতের মুক্তির বিষয়ে দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, “এখন বাংলাদেশের বিচারিক ব্যবস্থার মধ্যে আমাদের আর কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। আমরা খুশি যে তদন্তে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এই তদন্তে আমাদের আস্থা আছে।”
“আশা করি হাসনাত মুক্তি পাবেন,” তিনি বলেন।
ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে ‘মানবাধিকার পরিপন্থী’ এবং একটি স্বাধীন দেশের জন্য খুবই জটিল প্রক্রিয়া বলে মন্তব্য করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
“যেহেতু অভিযোগপত্রে হাসনাত করিমের নাম নেই, আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে তাঁর মুক্তির উদ্যোগ নিতে পারে। একজন মানুষ কোনো অপরাধ না করেও শুধুমাত্র আইনি জটিলতার কারণে জেলে পচে মরবে এ বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন,” বেনারকে বলেন মিজানুর রহমান।
হাসনাত করিমের মুক্তির সম্ভাব্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস বেনারকে বলেন, “পুনঃ নিরীক্ষিত অভিযোগপত্র পেলে অ্যান্টি টেররিজম ট্রাইব্যুনাল অভিযোগপত্র শুনানির তারিখ দেবে।”
তিনি বলেন, “শুনানির দিন গ্রেপ্তার আসামিদের ট্রাইব্যুনালে তোলা হবে। যেহেতু অভিযোগপত্রে হাসনাত করিমকে নির্দোষ বলা হয়েছে, তাই ওই দিনই হাসনাতের আইনজীবী মুক্তির আবেদন করতে পারেন।”
এরপর আদালত ওই আবেদন মঞ্জুর করলে হাসনাতের কারামুক্তির ব্যাপারে আদেশ জারি করবে বলে জানান প্রকাশ।
“আদালত থেকে মুক্তির আদেশ কারাগারে পৌঁছালেই মুক্তি পাবেন হাসনাত করিম,” যোগ করেন প্রকাশ বিশ্বাস।