হলি আর্টিজানে হামলার আরেক পরিকল্পনাকারী র‌্যাশ আটক

জেসমিন পাপড়ি
2017.07.28
ঢাকা
হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার এক বছর পূর্তিতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সর্বস্তরের মানুষ। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার এক বছর পূর্তিতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সর্বস্তরের মানুষ। জুলাই ০১, ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’ ও ‘সমন্বয়কারী’ আসলাম হোসাইন রাশেদ ওরফে রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উত্তরাঞ্চলীয় জেলা নাটোরের সিংড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বেনারকে জানান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, পুলিশ সদরদপ্তরের ‘ল-ফুল ইন্টারসেপশন সেন্টার’ এবং বগুড়া ও নাটোর জেলা পুলিশের সদস্যরা যৌথভাবে এই অভিযান চালায়।

হলি আর্টিজানে হামলায় জড়িত সন্দেহে ২১ জনকে চিহ্নিত করে পুলিশ। এদের মধ্যে ১৫ জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। গতকাল রাশেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাকি রইল একমাত্র আসামি হাদীসুর রহমান সাগর।

এদিকে এক বছর পার হলেও বিশ্বজুড়ে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র জমা না দেওয়ারও সমালোচনা করেন বিশ্লেষকেরা।

রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ। ফাইল ছবি।
রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ। ফাইল ছবি।
সৌজন্যে: বাংলাদেশ পুলিশ
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল হক মারজান বেনারকে বলেন, “আসামি ধরায় বা অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যতটা মনোযোগী তাদেরকে (আসামি) বিচারের মুখোমুখি করতে ততটা নয়। এ কারণে আইন অনুযায়ী শাস্তি দিয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে।”

তদন্তের ধীর গতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত চার্জশিট দেওয়া হয়নি। তাহলে মামলা কবে ট্রায়ালে উঠবে আর কবে রায় হবে। ওই জঙ্গি হামলার ঘটনায় জাপান, ইতালিসহ কয়েকটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এই মামলার দ্রুত বিচার করা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল অবশ্য দাবি করেছেন, তদন্ত ও অভিযোগপত্র নির্ভুল করতেই সময় নেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “নির্ভুল তদন্ত ও অভিযোগপত্র দিতে কাজ করছে পুলিশ। কোনো ধরনের ভুল যাতে না হয়, সে জন্য সময় নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত শেষের দিকে রয়েছে।”

তবে ‘নব্য জেএমবির জঙ্গি’ রাশেদের গ্রেপ্তার হলি আর্টিজান মামলার তদন্তে অগ্রগতি আনবে বলে মনে করেন মনিরুল।

তিনি বলেন, “রাশেদকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। তাকে আদালতে হাজির করে হলি আর্টিজানের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।”

ভয়াবহ ওই জঙ্গি হামলার বছর পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই মামলাটির অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা পাঁচ জঙ্গি গ্রেপ্তার করতে না পারাকে যার কারণ দাবি করে আসছে পুলিশ।

এই সন্দেহভাজন পাঁচ জঙ্গি হলো; সোহেল মাহফুজ, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান ও হাদীসুর রহমান।

তবে পুলিশ জানায়, গত ২৬ ও ২৭ এপ্রিল শিবগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে বাশারুজ্জামান ও ছোট মিজানও নিহত হয়। গত ৮ জুলাই গ্রেপ্তার হয় সোহেল মাহফুজ। আর র‌্যাশ গ্রেপ্তার হওয়ার পরে এখন বাকি থাকল হাদীসুর রহমান সাগর।

তাকে ধরতেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।

জঙ্গিবাদ বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “হলি আর্টিজানের মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। দেশের ভাবমূর্তির কথা বিবেচনা করে দ্রুত এর তদন্ত ও বিচার কাজ শেষ করা উচিত।”

তামিমের কাছের লোক রাশেদ

২৪ বছর বয়সী এই তরুণ গুলশান হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন বলে সাংবাদিকদের জানান বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (গণমাধ্যম) সনাতন চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, “রাশেদ এই হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী।”

পুলিশ জানায়, নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় রাশেদের নিজের বাড়ি। তার বাবার নাম আবদুস সালাম।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ার ৭৯ নম্বর সড়কে অবস্থিত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় সশস্ত্র জঙ্গিরা।

বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের ২০ জন নাগরিককে গুলি করে এবং চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে তারা। জিম্মি করে রাখে আরও অনেককে। নিহতদের নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয় এবং অন্য তিনজন বাংলাদেশি।

জড়িতদের ১৫ জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত

হলি আর্টিজানে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তারা কারাগারে রয়েছে। এরা হলো- মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, রাকিবুল হাসান রিগান ও জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী। ইতিমধ্যে দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে তারা।

এছাড়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজাউল করিমও এই মামলায় আটক রয়েছেন। ঘটনার রাতে পরিবার সদস্যদের নিয়ে হলি আর্টিজানে জিম্মি ছিলেন হাসনাত। সেখান থেকে মুক্ত হওয়ার পরে তাঁকে আটক করে পুলিশ।

তিনি এ মামলার সন্দেহভাজন আসামি হওয়ায় এখনো কারাগারে আছেন বলে জানান মনিরুল ইসলাম।

মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম গত ২০ জুন গণমাধ্যম কর্মীদের মামলার অগ্রগতি নিয়ে ব্রিফিং করেন। এসময় তিনি হলি আর্টিজানে হামলার মূল পরিকল্পনাকারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ২১ জন নব্য জেএমবির জঙ্গির জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ার কথা জানান।

গত এক বছরে তাদের মধ্যে ১৫ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়।

নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী, জাহিদুল ইসলাম, তানভীর কাদেরী, আবু রায়হান তারেক, নুরুল ইসলাম মারজান, সারোয়ার জাহান, আব্দুল্লাহ মোতালেব ও ফরিদুল ইসলাম আকাশ গুলশানের হামলায় জড়িত ছিলেন বলে দাবি করে আসছে পুলিশ। যারা বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়।

এর আগে হলি আর্টিজানে কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছিলেন হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি। এরা হলো; নিবরাজ ইসলাম, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।