ঢাকায় তিন ও চেন্নাইয়ে এক জঙ্গি গ্রেপ্তার
2019.09.10
কলকাতা ও ঢাকা

বাংলাদেশের ঢাকা এবং ভারতের চেন্নাইয়ে পৃথক অভিযানে চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তিন সদস্য। আর চেন্নাই থেকে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ) গ্রেপ্তার করেছে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) এক সদস্যকে।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রস্তুতি নেওয়ার অভিযোগে গত সোমবার ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে এবিটির সদস্যদের গ্রেপ্তার করে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) একটি দল। ওই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি বাস কাউন্টারের সামনে থেকে তাঁদের আটক করা হয়।
অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের জনসংযোগ শাখার পুলিশ সুপার মো. মাহিদুজ্জামান বেনারকে বলেন, “আটক তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আসামিরা এখন থানায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।”
আটককৃতরা হচ্ছেন; মো. রাসেল হোসেন (২১), জুয়েল মাহমুদ ওরফে ইমাম মাহমুদ (২৬) ও আবু জাফর সোহেল (৩৬)।
রাজশাহীর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজির ছাত্র রাসেলের বাড়ি পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলায়। ইমাম মাহমুদের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া। অপর সদস্য রাসেল রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য তাঁরা। পাশাপাশি তাঁরা ‘ইমাম মাহমুদ ও গাজোয়াতুল হিন্দ’ নামে একটি সক্রিয় গ্রুপের সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা ‘গাজোয়াতুল হিন্দ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহ করছেন।
রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করে তাঁরা বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
চেন্নাইয়ে গ্রেপ্তার জেএমবি সদস্য
কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) নিষিদ্ধ জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) এক সদস্যকে মঙ্গলবার ভোরে চেন্নাই থেকে গ্রেপ্তার করে। ভারতের জাতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) এসটিএফের বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ করে।
কলকাতা পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক আনন্দবাজার জানায়, বর্ধমানের বাসিন্দা এবং জঙ্গি নেতা আসাদুল্লাহ শেখ ওরফে রাজাকে (৩৫) মঙ্গলবার ভোর রাতে চেন্নাইয়ের থোরিয়াপক্কনম এলাকার একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই বাড়িতে তিনি মাস তিনেক ধরে ভাড়া থাকছিলেন। ওই খবরে আসাদুল্লাহকে ভারতে জেএমবির প্রথম সারির নেতা বলে উল্লেখ করা হয়।
মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে এই গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করেনি। তবে পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতের শীর্ষস্থানীয় সব গণমাধ্যম খবরটি প্রকাশ করেছে। যোগাযোগ করা হলে কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র বেনারের কাছে নাম প্রকাশ করে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানাতে চাননি।
এসটিএফ সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের সঙ্গেও আসাদুল্লাহর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ফোন, বেশ কিছু নথি ও জাল পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়।
বুধবার চেন্নাইয়ের আলান্দুরের আদালতে হাজির করার পরে ট্রানজিট রিমান্ডে তাঁকে কলকাতায় আনা হবে।
গত এক মাসে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ মোট পাঁচজন জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত ২৬ আগস্ট ভারতে জেএমবির আমির বলে পরিচিত ইজাজ আহমদকে বিহারের গয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরে ২ সেপ্টেম্বর উত্তর কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মুহম্মদ আবুল কাশেম নামে এক জেএমবির সদস্যকে। প্রায় একই সময়ে মালদহের সামসি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আব্দুল বারি ও নিজামউদ্দিন খানকে। এরা সবাই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।
গোয়েন্দাদের দাবি, কাশেমকে জেরা করে আসাদুল্লাহর চেন্নাইয়ের গোপন ডেরার খবর জানা যায়।
কে এই আসাদুল্লা
পুলিশ জানায়, আসাদুল্লা পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের নিত্যানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। ইজাজের মতো তিনিও মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসায় প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তীতে নিজেও প্রশিক্ষকের ভূমিকা পালন করেন।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ পরবর্তী সময়ে জেএমবির বীরভূম-বর্ধমান-মুর্শিদাবাদ মডিউলের অন্যান্য সদস্যের মতো আসাদুল্লাও দক্ষিণ ভারতে গা ঢাকা দেন।
তদন্তকারীদের দাবি, কওসরের পরিকল্পনা অনুযায়ী বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের জন্য তৈরি সংগঠনের ধুলিয়ান মডিউলকে গড়ে তোলা, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং বিস্ফোরণের পরিকল্পনার সঙ্গে আসাদুল্লাহ যুক্ত ছিলেন।
২০১৮ সালের ৬ আগস্ট বেঙ্গালুরুতে এনআইএর হাতে কওসর গ্রেপ্তার হওয়ার পর আসাদুল্লাহ ইজাজের সহযোগী হিসেবে কাজ করছিলেন।
ভারতে নিষিদ্ধ জেএমবি
বাংলাদেশের পাশাপাশি গত ২৪ মে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
বলা হয়, জেএমবি সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত। তারা ভারতে সন্ত্রাসের জন্য যুবকদের সংগ্রহ ও উদ্বুদ্ধ করে নাশকতা করতে চায়।
জিহাদের মাধ্যমে শরিয়তি শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে জন্ম নেওয়া জেএমবির সাথে খাগড়াগড় ও বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে যুক্ত থাকার প্রমাণ মেলে।
জেএমবি ফের সংগঠিত হচ্ছে
গত কয়েক মাসে ধৃত জেএমবি জঙ্গিদের জেরা থেকে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, কওসর গ্রেপ্তার হলেও দলের শীর্ষ নেতা সালাহউদ্দিন সালেহিন এখনও সক্রিয় নতুন করে সংগঠন গড়ার কাজে।
সালাহউদ্দিন এখনও পলাতক বলে পুলিশ জানায়।
মঙ্গলবার চেন্নাইয়ে ধৃত আসাদুল্লাহও বেশ কয়েকবার পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন। পুরনো কয়েকটি ঘাঁটিতে গিয়ে তিনি সংগঠনের প্রতি ‘সহানুভূতিশীল’ কয়েকজনের সঙ্গে দেখাও করেন বলে পুলিশ সূত্রে দাবি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক বিমল শঙ্কর নন্দ বেনারকে বলেন, “সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা তথ্যে স্পষ্ট যে, জেএমবির নেতারা ধরা পড়লেও এখন পর্যন্ত অনেকেই পলাতক আছে। তারাই নতুন নতুন মডিউল তৈরি করে সংগঠনকে ফের সক্রিয় করার চেষ্টা চালাচ্ছে।”
ওই বিশ্লেষকের মতে, “ভাষা ও সংস্কৃতিগত মিল থাকার কারণে অন্য রাজ্যে পালিয়ে থাকা জেএমবি সদস্যরা সুযোগ পেলেই পশ্চিমবঙ্গে ঘাঁটি গড়ে তুলবে। তাই পুলিশকে এ বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।”