গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মঘাতী জেএমবির দুই জঙ্গি
2018.10.05
ঢাকা
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জের সোনাপাহাড় এলাকায় একটি সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে শুক্রবার সকালে দুজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান–র্যাব।
তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার এড়াতে তারা আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বেনারকে জানিয়েছেন, নিহতরা নব্য জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ—জেএমবির সদস্য। বিস্ফোরণের পর শুক্রবার বেলা এগারোটার দিকে সেখানে সন্দেহভাজন দুই পুরুষ জঙ্গির ছিন্নভিন্ন মরদেহ পাওয়া গেছে।
“জঙ্গিদের চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল,” জানান র্যাবের ওই কর্মকর্তা।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, র্যাবের একটি দল শুক্রবার ভোর তিনটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছে মিরসরাই এলাকায় চৌধুরী ম্যানসন নামে একটি একতলা টিনের বাড়ি ঘিরে রাখে।
বাইরে থেকে মাইকে ‘জঙ্গিদের’ আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হলে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ও ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসেস (আইইডি) ছোড়ে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়।
“ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়। গ্রেপ্তার এড়াতে জঙ্গিরা নিজেরাই সেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে থাকতে পারে,” বলেন মুফতি মাহমুদ।
ঘটনাস্থল থেকে একটি একে ২২ রাইফেল, তিনটি পিস্তল, গ্রেনেড বানানোর কাঁচামাল এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। অভিযান শেষ হওয়ার কথা জানিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই ধরনের অস্ত্রই ২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলাকারী জঙ্গিরা ব্যবহার করেছিল।
গত দুই মাসে র্যাব ৩০ জন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এই তথ্য জানিয়ে মুফতি মাহমুদ জানান, আটককৃত কয়েকজন র্যাবকে জানায় জঙ্গিদের একটি গ্রুপ চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে অবস্থান করেছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়।
গোলাগুলির কারণে শুক্রবার ভোর তিনটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভোরের দিকে ওই বাড়িতে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ হয়। এতে বাড়ির টিনের চাল উড়ে যায়।
চৌধুরী ম্যানশনের মালিক ও তত্ত্বাবধায়ককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে র্যাব।
সোনাপাহাড় গ্রামের বাসিন্দা মো. সাইদুল ইসলাম টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “চৌধুরী ম্যানসনের মালিক বাড়িতে থাকতেন না। ওই বাড়িতে কে অবস্থান করছে সে ব্যাপারে গ্রামের মানুষেরা জানতেন না। অধিকাংশ সময়ই বাড়ির দরজা বন্ধ থাকত।”
সাইদুল বলেন, “মিরসরাই শিল্প এলাকা। তাই, সেখানে কে আসছে বা কে যাচ্ছে তা বলা মুশকিল।”
এ বছর নব্য জেএমবি সদস্যদের আত্মঘাতী বিস্ফোরণের দ্বিতীয় ঘটনা এটি। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি ঢাকার নাখালপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালাতে গেলে আত্মঘাতী হয় সেখানকার তিন জঙ্গি।
গতকালের ঘটনা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “নির্বাচনের আগে আবার জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়াটা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ইঙ্গিত। তবে নির্বাচনের আগে যারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি চায় তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সফল হতে দেবে না।”
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার তেজগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৬ সালে ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার পর যৌথ অভিযানের মাধ্যমে শতাধিক জঙ্গি নিহত হলেও জেএমবির হুমকি শেষ হয়ে যায়নি।
কৌশলগত কারণে তারা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করলেও ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে আবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহেদুল আনাম খান বেনারকে বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে পুলিশের টানা অভিযান থেকে রক্ষা পেতে জঙ্গিরা গোপন আস্তানায় চলে যায়।
“জঙ্গি নির্মূল হয়েছে এটা ঠিক নয়। কারণ, জঙ্গিরা রাতারাতি তৈরি হয় না। আবার রাতারাতি নির্মূলও হয় না,” জানান শাহেদুল আনাম।
তিনি মনে করেন, “জঙ্গিবাদকে উসকে দেবে এমন রাজনৈতিক অবস্থা বাংলাদেশে নেই। তবে, নির্বাচনের আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকবে। এই সুযোগে রাজনীতির মাঠ গরম করতে কোনও গোষ্ঠী জঙ্গিদের কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাতে পারে।”
গতকালের জঙ্গি হামলা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও বলেন, “আমরা জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ করেছি, তাদের নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।”
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জেসমনি পাপড়ি।