নরসিংদীতে জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানে এক নারী ও এক পুরুষ নিহত

প্রাপ্তি রহমান
2018.10.16
ঢাকা
181016_JMB_story_620.jpg নরসিংদীতে প্রথম দিনের জঙ্গিবিরোধী অভিযান শেষে গণমাধ্যমরে সাথে কথা বলছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম। ১৬ অক্টোবর ২০১৮।
বেনারনিউজ

নরসিংদীতে জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানে দুজন নিহত হয়েছেন। উভয়ই ইসলামিক স্টেট—আইএস পন্থী জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার অভিযানের প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে। বুধবার শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, নিহতদের নাম–পরিচয় এখনও জানা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, “নিহতদের একজন নারী ও অন্যজন পুরুষ। তাঁদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে। পুলিশ এখনও তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি।”

ঢাকা থেকে নরসিংদীর দুরত্ব ৫১ কিলোমিটার। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে নরসিংদী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে মাধবদী ও শেখেরচরের দুটি জঙ্গি আস্তানা পুলিশ ঘিরে ফেলে। ঘটনাস্থলে রাত থেকেই উপস্থিত ছিল পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম, পুলিশ সদরদপ্তরের ল ফুল ইন্টারসেপশন সেল, জেলা পুলিশ ও র‌্যাব। মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা থেকে সোয়াট ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

সোয়াট প্রথম পর্বের অভিযান শেষ করলে, বিকেল ৫টার দিকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম প্রথম দিনের অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, একটি আস্তানায় অভিযান শেষ হয়েছে। অন্যটিতে যারা আছেন তাঁদেরকে আত্মসমর্পণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাঁরা আত্মসমর্পণ না করলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁরা ধারণা করছেন অন্য আস্তানাটিতে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের বড় অংশই নারী।

“নিহতরা আত্মঘাতী হ‌য়ে‌ছে না কি পু‌লি‌শি অভিযা‌নে নিহত সে সম্প‌র্কে এখনই কিছু বলা যা‌চ্ছে না। তা‌দের কা‌ছে কী ধর‌নের অস্ত্র ও গোলাবারুদ আছে তা যাচাই বাছাই চল‌ছে। মাধবদীর জ‌ঙ্গি‌দের স‌ঙ্গে এই জঙ্গিদের ঘ‌নিষ্ঠ যোগা‌যোগ ছিল,” মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন।

মনিরুল আরও বলেন তারা একই দলভুক্ত, ত‌বে আলাদা জায়গায় অবস্থান নি‌য়ে‌ছিল। অন্য আস্তানাটিতে নারী জ‌ঙ্গিরা আছে। তাঁ‌দের আত্মসমর্পণ করতে বলা হ‌চ্ছে।

‌‘গর্ডন নট’ নামে নরসিংদীতে জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান শুরুর পর পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী ঘটনাস্থলে হাজির হন।

নরসিংদীর শেখেরচর ও মাধবদীর জঙ্গি আস্তানা দুটি ঢাকা–সিলেট মহাসড়ক থেকে ২০০ মিটার দূরে। শেখের চরের যে ভবনে গতকাল অভিযান পরিচালিত হয়, সেটিতে স্বামী–স্ত্রী পরিচয়ে ওই দুই নারী ও পুরুষ উঠেছিলেন চলতি মাসের ৭ তারিখ। একই দিনে মাধবদীর সাততলা ভবনের একটি তলায় উঠেছেন অন্যরা।

অভিযানের আদ্যোপান্ত

গতকাল মঙ্গলবার অভিযানে অংশ নিয়েছেন কাউন্টার টেররিজমের একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ বিরোধী কাজ থেমে নেই। চলমান একটি তদন্তের সূত্র ধরে নরসিংদীতে এ দুটি আস্তানার খবর পাওয়া যায়। দ্রুততার সঙ্গে তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। রাতেই পাঁচ ও সাততলা ভবনের দুটি ফ্ল্যাট বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ও ওই দুটি ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে বের করে আনা হয়। তারপর শুরু হয় আত্মসমর্পণের অনুরোধ।

“আমরা দুটি আস্তানাতেই জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের অনুরোধ করেছি। তারা সাড়া দেয়নি। এক পর্যায়ে তারা গ্যাস পাইপলাইনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়,” অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন। পরে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ভবনের চারপাশে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।

সোয়াট অভিযান শুরুর আগে ঘটনাস্থলে ফায়ার ব্রিগেড ও চিকিৎসকদের একটি দল ঘটনাস্থলে হাজির হয়।

বেলা সা‌ড়ে ১১ টার দি‌কে শে‌খের চ‌রে‌ ভ‌গিরথপুরে স‌ন্দেহভাজন জ‌ঙ্গি আস্তানার দিক থে‌কে গু‌লির শব্দ পাওয়া যায়। বেলা ১২ টা পর্যন্ত থে‌মে থে‌মে গু‌লির শব্দ পাওয়া গে‌ছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের ৩০০ গজ এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

বিকেল ৪ টায় অভিযান শেষ হওয়ার পর বাড়ির ভেতরে ঢোকেন বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা। গতকাল রাত ৮ টা পর্যন্ত অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ কী কী উদ্ধার হলো সে সম্পর্কে জানা যায়নি।

ভগীরথপুরের শেখের চর এলাকার যে ভবনে কাল অভিযান চালানো হয়, সেটির দ্বিতীয় তলায় থাকেন বাদল দেবনাথ। কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁদের বাড়ির চারপাশ পুলিশ ঘিরে ফেলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে। তাঁরা ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

“রাত ৩টার দিকে পুলিশ সদস্যরা আমাদের বের করে আনেন। পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাটে কিছুদিন আগে দম্পতি পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিলেন এক নারী ও পুরুষ। তাঁদের সম্পর্কে ভালো করে জানারই সুযোগ হয়নি,” বাদল দেবনাথ বেনারকে বলেন।

শেখের চরের পাঁচতলা ভবনটি বিল্লাল মিয়ার বাড়ি বলে পরিচিত।

অন্যদিকে মাধবদী পৌরসভার ছোট গদাইরচরের যে ভবনটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে, সেটির মালিক হাজী মো. আফজাল হোসেন। ভবনটির প্রথম থেকে তিন তলা পর্যন্ত মিফতাহুল জান্নাহ মহিলা মাদরাসা।

অভিযানে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, নব্য জেএমবি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। তবে এখনও তাদের কর্মীসমর্থকেরা রয়েছেন। নরসিংদীতে যাঁরা আছেন, তাঁরা মধ্যম সারির নেতা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে গত ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছে এক বাড়িতে র‌্যাব অভিযান চালায়। গোলাগুলি ও বিস্ফোরণে দুজনের ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধার হয়।

প্রায় আট ঘণ্টার ওই অভিযানে আস্তানা থেকে তিনটি পিস্তল, একটি একে-২২ রাইফেল ও বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুর্গা পূজা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জঙ্গিরা সংগঠিত হচ্ছিল এমন একটা খবর তাঁদের কাছে ছিল।

“তবে তারা কোথায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে সে বিষয় সঠিক তথ্য ছিল না। এই ক্লু ধরে এগিয়ে নরসিংদীর আস্তানার খোঁজ পাওয়া যায়,” সাংবাদিকদের বলেন আবদুল্লাহ আল মামুন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।