জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টতা অভিযোগে পাইলটসহ আটক ৪
2017.10.31
ঢাকা
বিমান নিয়ে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’র অভিযোগে বাংলাদেশ বিমানের এক পাইলটকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সাব্বির এমাম নামের এই পাইলট রাষ্ট্রীয় ওই বিমান সংস্থার ফার্স্ট অফিসার ছিলেন।
মঙ্গলবার কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের তরফ থেকে এই দাবি করা হয়। সাব্বির ছাড়াও এ দফায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সাব্বির এমাম (৩১), সুলতানা পারভিন (৫৫), মো. আসিফুর রহমান (২৫) ও মো. আলম (৩০)।
বুধবার ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের (সিপিএ) সম্মেলনের আগের দিনই এই নাশকতার পরিকল্পনাকারীদের আটক করা হলো। এ সম্মেলন উপলক্ষে দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের গুরুত্বপূর্ণ পদের ব্যক্তির জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাকে ‘আশঙ্কাজনক’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ প্রসঙ্গে এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ বিমান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সেখানকার একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি নিঃসন্দেহে আশঙ্কাজনক। কারণ, এসব পজিশনে নিয়োগের ক্ষেত্রে পুঙ্খানুপুঙ্খু তদন্ত হয়।”
তবে এ ঘটনার তদন্ত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে র্যাব মিরপুরের কমলপ্রভায় ৫৪ ঘন্টাব্যাপী অভিযান চালায়। ওই অভিযানে আবদুল্লাহ তাঁর দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুজন সহযোগীসহ নিহত হন।
অভিযানের পর র্যাব জানায়, আবদুল্লাহ নব্য জেএমিবর শীর্ষ নেতা ও র্যাবের অভিযানে নিহত সারওয়ার জাহানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। কমলপ্রভায় সারওয়ার জাহানের যাতায়াত ছিল।
কমলপ্রভার মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদের ছেলেই হলেন সাব্বির এমাম, সুলতানা পারভিন মালিকের স্ত্রী, আসিফ তাঁদের ঘনিষ্ঠজন ও চা দোকানী মো. আলম বিভিন্ন অভিযানে গাড়ি সরবরাহ করতেন।
র্যাব–৪ এর একটি আভিযানিক দল সোমবার দিবাগত রাত ২টা থেকে সকাল ১১ টা পর্যন্ত মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাব্বিরের মতো একজন উগ্রবাদী জঙ্গিকে গ্রেফতার করে র্যাব বাংলাদেশকে নিকট ভবিষ্যতে আরো একটি নতুন অনাকাঙ্খিত ও ভয়াবহ ঘটনা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে।
“গ্রেপ্তারকৃত সাব্বির এমামের মতো একজন দুর্ধর্ষ ব্যক্তি বাংলাদেশ বিমানের মতো সংবেদনশীল স্থানে চাকুরিরত, যেখানে সর্বদা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যাতায়াত,” মুফতি মাহমুদ খান বলেন।
র্যাবের দাবি গুলশান হামলার আগে ও পরে আব্দুল্লাহ, গ্রেফতারকৃত পাইলট সাব্বির, সারোয়ার একত্রে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাইলট সাব্বির বিমান চালিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের বাসভবনে আঘাত করা অথবা বিমানের যাত্রীদের জিম্মি করে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। তাঁর চাকুরির ভাতা বাবদ ১০ লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা ছিল এবং ওই টাকা পেলেই আব্দুল্লাহর মাধ্যমে সংগঠনে দান করবেন বলে আব্দুল্লাহকে কথা দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ বিমানের ফার্স্ট অফিসার সাব্বির এমাম সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তিনি (সাব্বির) ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি হতে বিমান চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে তিনি প্লেন চালিয়েছেন।
স্পেন থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ২০১৪ সালে সাব্বির বাংলাদেশ বিমানের পাইলট হিসেবে চাকরি করেন। তিনি বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং-৭৩৭ পরিচালনা করে থাকেন। তিনি সর্বশেষ গত ৩০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখ ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা (১৯:৫০-২৩:০০) ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। সাব্বির তুরস্ক থেকেও বিমান চালনার উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
তিনি দুবাই, কাতার, মাসকাট, সিংগাপুর, মালেয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ছাড়াও অন্যান্য আরো অনেক দেশে বাংলাদেশ বিমানের পাইলট হিসেবে কাজ করেছেন।
সাব্বির এমামের মা সুলতানা পারভীন (৫৫) বিভিন্ন সময় আবদুল্লাহকে অর্থ সহায়তা দেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃত মো. আসিফুর রহমান আসিফের (২৫) আব্দুল্লাহর বাসায় যাতায়াত ছিল। আসিফ বিস্ফোরক তৈরির জন্য আব্দুল্লাহর বাসায় বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল সরবরাহ করতেন। এছাড়াও তিনি তাঁর বন্ধুর কাছ থেকে একটা ৯ এমএম পিস্তল এনে আব্দুল্লাহর নিকট সরবরাহ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় আব্দুল্লাহ পিস্তলটি নেননি। আসামি সুলতানা পারভীন ওই অস্ত্রটি কেনার জন্য আব্দুল্লাহকে টাকা দিতে রাজি হয়েছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
অন্যদিকে চা দোকানী মো. আলম বিভিন্ন সময় সংগঠনের কাজে আব্দুল্লাহকে গাড়ি সরবরাহ করতেন বলে জানিয়েছে র্যাব। গত রমজান মাসের আগে মোঃ আলমের মাধ্যমে ট্রাক সংগ্রহ করে বিল্লালকে দিয়ে নিকটবর্তী পুলিশি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা করেন আব্দুল্লাহ।
সম্প্রতি ইউরোপে জঙ্গিদের গাড়ি হামলার কৌশলে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রেপ্তারকৃত আলমের সরবরাহ করা গাড়ি দিয়ে সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা গাড়ি চালানোর অনুশীলন করেন। গত ২৬ অক্টোবর বিল্লাল র্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর এই চর জঙ্গি সম্পর্কে তথ্য দেন।