ভারতে জেলকর্মীর ওপর কারাবন্দী জঙ্গির হামলা

পরিতোষ পাল ও ঝুমুর দেব
2017.12.04
কলকাতা ও গৌহাটি, ভারত
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়ে কলকাতার আলিপুর কারাগারে বন্দী দলীয় সমর্থকদের উল্লাস। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়ে কলকাতার আলিপুর কারাগারে বন্দী দলীয় সমর্থকদের উল্লাস। ১৬ মে ২০০৯।
AFP

কারাবন্দী একজন সন্দেহভাজন জঙ্গি কীভাবে ধাতব অস্ত্র জোগাড় করল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কর্মকর্তারা। আইএস সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বন্দী মসিউদ্দিন ওরফে আবু মুসা রোববার ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক জেল ওয়ার্ডেনকে জবাইর চেষ্টা চালানোর একদিন পর তাঁরা এই তদন্তের কথা জানালেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কারা কর্মকর্তা বেনারকে বলেন, “প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী গোবিন্দ চন্দ্র দে নামের ওয়ার্ডেন রবিবার সকালে মুসার সেল খোলার পরই মুসা একটি পাথর দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে। তিনি মাটিতে পড়ে গেলে মুসা জেহাদি শ্লোগান দিয়ে একটি ধারালো ধাতব জিনিস দিয়ে তাঁর গলা কাটার চেষ্টা চালায়।”

মুসা আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে রয়েছে গত বছরের জুলাই থেকে। কারাসূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে জেলে মুসার ব্যবহারে কোনো অস্বাভাবিকতা না পাওয়া যাওয়ায় সেখানে অতিরিক্ত নজরদারি ব্যবস্থা ছিল না।

“হামলার তদন্ত চলাকালীন সময়ের জন্য আমরা তাঁকে (মুসাকে) নির্জন সেলে স্থানান্তর করেছি,” বেনারকে বলেন পশ্চিমবঙ্গের কারেকশানাল সার্ভিসেসের ডিজি ও আইজি অরুন কুমার গুপ্ত।

এদিকে মুসার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস।

“পুলিশ মুসার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে। সেই সঙ্গে কারা দপ্তরও অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে। মুসা কীভাবে ধারালো ধাতব জিনিস যোগাড় করেছিল তাও খুঁজে দেখা হচ্ছে,” বলেন উজ্জ্বল বিশ্বাস।

আহত ওয়ার্ডেন গোবিন্দকে প্রথমে একটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও পরে পরিবারের ইচ্ছায় তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রমতে, তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল রয়েছে।

২০১৬ সালের জুলাইতে ঢাকায় হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার সংশ্লিষ্টতায় ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ পশ্চিবঙ্গের বীরভূমের বাসিন্দা মুসার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছে।

বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও সিরয়ায় ফোন ও ইমেইল যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়ার দুইদিন পর আইএস জঙ্গী সন্দেহে মুসাকে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বর্ধমান রেলওয়ে স্টেশন থেকে বীরভূম যাওয়ার পথে গ্রেপ্তার করা হয়। সে তামিলনাডু থেকে বীরভূমে নিজের বাড়িতে ফিরছিল।

এনআই এর দেওয়া চার্জশিটে বলা হয়েছে, কলকাতার মিশনারিজ অব চ্যারিটির দপ্তরে হামলা এবং কলকাতায় বিদেশি পর্যটকদের খুন করার পরিকল্পনা নিয়েই সে পশ্চিমবঙ্গে ফিরছিল।

এনআই এর মতে, মুসা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ইসলামি জঙ্গি সংগঠন জামাত উল মুজাহিদিন বা জেএমবির এক নেতা আবু সুলাইমানের কাছ থেকে ভারতে আইএস এর একটি সেল খোলার দায়িত্ব পেয়েছিল।

মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ভারতে গ্রেপ্তার ও বিচারাধীন ১০০ সন্দেহভাজনের মধ্যে মুসা একজন।

গত বছর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ভারতে গিয়ে মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।