মালিকদের প্রস্তাবিত মজুরি পোশাক শ্রমিকদের প্রত্যাখান

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.07.17
ঢাকা
মালিকদের প্রস্তাবিত মজুরি পোশাক শ্রমিকদের প্রত্যাখান-1 ঢাকার চামড়া শিল্প কারখানায় কাজ করছেন একজন শ্রমিক। ১৭ মে ২০১৫।
বেনারনিউজ

পাঁচ বছর পর দেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি শতকরা ২০ ভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাব শ্রমিক সংগঠনগুলো প্রত্যাখান করেছে। এই প্রেক্ষাপটে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বেনারকে বলেছেন, সরকার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের ঘোষিত প্রস্তাবের চেয়ে বেশি মজুরি ঘোষণা করবে।

মালিকদের প্রস্তাবিত নিম্নতম মাসিক মজুরি ৬ হাজার ৩৬০ টাকা। এটা বাড়িয়ে কত টাকা করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অচিরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা করার কথা জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

গত সোমবার প্রথমবারের মতো তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে নিম্নতম মজুরির প্রস্তাব দেয়া হয়। মঙ্গলবার শ্রমিক সংগঠনগুলো মালিকদের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁদের দাবি অনুযায়ী বেতন ঘোষণা করা না হলে প্রয়োজনে ধর্মঘট-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলো।

সর্বশেষ ২০১৩ সালে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরি ১২৫০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়।

মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলছেন, তারা মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ৬ হাজার ৩৬০ টাকা বেতনের প্রস্তাব দিয়েছেন। মালিকদের প্রস্তাব অনুযায়ী, শ্রমিকদের মাসে বেতন বাড়বে ১ হাজার ৬০ টাকা।

বাংলাদেশ বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এই খাতে থেকে দেশের বার্ষিক রপ্তানির প্রায় ৮১ ভাগ আসে। এই খাতে ৪৪ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত, মোট কর্মীদের অধিকাংশই নারী।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বেনারকে বলেন, “মালিক পক্ষ যে প্রস্তাব দিয়েছে সেটা শ্রমিক পক্ষ কতটুকু মানবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আসলে বিজিএমইএ যে পরিমাণ মজুরির প্রস্তাব দিয়েছে সেটা যথেষ্ট নয়। মাসে ছয় হাজার ৩৬০ টাকা দিয়ে একজন মানুষ চলতে পারে না।”

তিনি বলেন, “আমরা মজুরি বোর্ডের কাছ থেকে এখনো কোনো প্রস্তাব পাইনি। প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে নুন্যতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমরা মজুরি বোর্ডের কাছ থেকে প্রস্তাব পাব।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল।

মজুরি বোর্ডে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি শামসুন নাহার ভুঁইয়া মূল বেতন সাত হাজার ৫০০ টাকাসহ চার হাজার ৫২০ টাকা অন্যান্য খরচ যোগ করে নিম্নতম মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন সরকার গঠিত মজুরি বোর্ডের কাছে।

‘নিম্নতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা হওয়া উচিত’

বেসরকারি খাতে শ্রমিকদের গবেষণা প্রতষ্ঠিান বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সুলতান উদ্দিন খান বেনারকে বলেন, “দেখুন মালিকপক্ষ থেকে নিম্নতম মজুরির যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে তা শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরির চেয়ে অনেক কম।”

তিনি বলেন, “শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতি বছর বর্তমান নিম্নতম মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকার শতকরা পাঁচ ভাগ মজুরি বাড়ানোর কথা। সেই হিসেবে পাঁচ বছর পর নিম্নতম মজুরি হওয়ার কথা ছয় হাজার চার’শ টাকা।”

সুলতান খান বলেন, “এই প্রস্তাব দিয়ে তারা শ্রমিকদের ওপর অন্যায় করেছেন, আইন ভঙ্গ করেছেন। এটি গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি বলেন, “আমাদের মাঠ পর্যায়ের গবেষণা অনুযায়ী একটি শ্রমিক পরিবারের ঢাকায় থেকে সংসার চালাতে কমপক্ষে ১৬ হাজার টাকা প্রয়োজন। কিন্তু মালিকপক্ষ তা মানতে নারাজ।”

তাঁর মতে, “মালিকদের কথা হলো শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করলে বিশ্ববাজারে তাঁদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা কমে যাবে। এটা সত্য। কিন্তু তাঁদের ব্যবসায়িক সুবিধা রাখতে গিয়ে শ্রমিকদের মজুরি কম দেবে সেটা ঠিক নয়।”

সুলতান উদ্দিন খান বলেন, “কমপিটেটিভনেস রক্ষার জন্য সরকার মালিকদের ট্যাক্স সুবিধা দিতে পারে। অথবা তারা নিজেদের এফিসিয়েন্সি বাড়াতে পারে। কিন্তু কোনোক্রমেই শ্রমিকদের বঞ্চিত করা যাবে না।”

তিনি বলেন, শ্রমিকদের মজুরি যদি যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করা না হয়, তাহলে নির্বাচনের বছরে শ্রমিক আন্দোলন হতে পারে। কারণ, এটি শ্রমিকদের অস্তিত্বের ব্যাপার।

সুলতান উদ্দিনের সঙ্গে একমত পোষণ করে গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু বেনারকে বলেন, “আমরা মালিকপক্ষের এই প্রস্তাবনা প্রত্যাখান করি। কারণ মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের সাথে ‘প্রহসন’ করেছে।”

মিশু বলেন, “আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিকেরা বিভিন্ন বস্তিতে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করে। তাদের ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরির মধ্যে বাড়ি ভাড়া বাবদই চলে যায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। আর বাকি টাকায় কী একটি পরিবার চলতে পারে?”

তিনি বলেন, “আমরা ৬২টি শ্রমিক সংগঠন একসাথে বলেছি নিম্নতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা দিতে হবে। অন্যথায় আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব। সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের দাবি মানতে হবে।”

মিশু বলেন, প্রথমে আমরা অনশন ধর্মঘট করব। দাবি পূরণ না হলে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য জেলা শহরে অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।