মিতু হত্যা মামলায় অগ্রগতি নেই, অস্ত্র মামলার বিচার শুরু

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.11.22
মিতু মিতু হত্যার ঘটনায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ভোলা ও মনির। জুন ২৮, ২০১৬।
স্টার মেইল

বাংলাদেশে আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় অস্ত্র আইনে করা মামলায় আটক দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। এর মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচার শুরু হয়েছে।

তবে এ ঘটনায় করা হত্যা মামলাটির তদন্ত এগুচ্ছে ধীর গতিতে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার। বিষয়টি নিয়ে মিতুর পরিবার ও পুলিশের পক্ষ থেকে অসহযোগিতার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তোলা হয়েছে।

মঙ্গলবার মিতু হত্যায় আটক দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করে চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালত। এ আগে গত ২৮ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মহিম উদ্দিন। এ আসামিরা হলেন এহতেশামুল হক ভোলা ও মনির হোসেন। এদের মধ্যে ভোলা মিতু হত্যা মামলারও আসামি।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী ফখরুদ্দিন চৌধুরী বেনারকে বলেন, “আগামী ১৮ জানুয়ারি আদালত এ মামলায় সাক্ষ‌্য গ্রহণ শুরুর জন‌্য তারিখ ধার্য করেছেন। অভিযুক্ত দুই আসামিই পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।”

মাহমুদা আক্তার মিতু। ফাইল ফটো।
মাহমুদা আক্তার মিতু। ফাইল ফটো।
স্টার মেইল
এ বছরের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের ও আর নিজাম রোডে মিতুকে তার শিশু সন্তানের সামনে প্রথমে গুলি ও পরে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার ২৩ দিনের মাথায় এই দুই আসামিকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া এই অস্ত্রই মিতু হত্যায় ব্যবহার হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি।

এদিকে গত পাঁচ মাসেও মিতু হত্যার ঘটনায় করা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি পুলিশ।  কার্যত তদন্ত কাজ  থমকে গেছে বলে পরিবারের অভিযোগ। যদিও তা অস্বীকার করে পুলিশ বলছে আসামিকে ধরার চেষ্টা চলছে।

এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বেনারকে বলেন, “এ মামলার তদন্ত চলছে। তবে মিতু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজন আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে ধরিয়ে দিতে চট্টগ্রামের পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।”

তদন্ত কাজে বাদী সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে মিতুর পরিবার সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অস্ত্র আইনের বিচার শুরু হলেও মূল হত্যা মামলা তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

তিনি বেনারকে বলেন, “অস্ত্র মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা থাকায় এ বিষয়ক মামলার বিচারও শুরু হয়েছে গেছে। অথচ হত্যা মামলার তদন্ত পাঁচ মাসেও এগোয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কাজে আমাদের পরিবারের সঙ্গেও তেমন কোন যোগাযোগ করে না।” এ বিষয়ে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

মিতু হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন দুজন। আটকদের মধ্যে মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম ও আনোয়ার হোসেন নামে দু’জন মিতু হত‌্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মুছার নাম বলেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্ত্রী হত্যার মাত্র কয়েকদিন আগে বাবুল আক্তার এসপি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বদলি হন। পরে মা হারানো দু’সন্তানকে নিয়ে তিনি ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন এবং এখনো সেখানেই বসবাস করছেন। তাঁর সন্তানেরাও নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান মোশাররফ হোসেন।

মিতু হত্যার কিছুদিনের মধ্যেই বাবুল আক্তারকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেসময় তাঁর কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্র নেওয়ার খবর গুঞ্জন শোনা যায়। এর প্রায় দুইমাস পরে বাবুলের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে চাকরি থেকে অব‌্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, মিতু হত্যার পর চট্টগ্রামের পুলিশ জানিয়েছিল-এ হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এ নিয়ে সারা দেশজুড়ে জঙ্গি বিরোধী অভিযানও পরিচালনা করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত মিতু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত না হলেও এর সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা নেই বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।