কলকাতায় খুন হওয়া বাংলাদেশি এমপির লাশ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা
2024.05.23
ঢাকা
ভারতের কলকাতায় হত্যাকাণ্ডের শিকার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশ আদৌ পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান বাংলাদেশের পুলিশ।
আনারকে হত্যার ঘটনায় অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বৃহস্পতিবার জানান, আনারকে হত্যার পরিকল্পনা দুই থেকে তিন মাস আগে করা হয়েছিল।
“হত্যার পর লাশটি গুম করতে শরীর টুকরা টুকরা করে হাড্ডি ও মাংস আলাদা করা হয়। এরপর কেউ যাতে সন্দেহ করতে না পারে, এ জন্য হলুদ মিশিয়ে ব্যাগে ভরে ওই বাসা থেকে বের করা হয়েছে। কিন্তু কোথায় মরদেহের খণ্ডিত অংশ ফেলা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়’’ বলেন হারুন।
আনারের পুরো লাশ না পাওয়া গেলেও খণ্ডিত মরদেহ পাওয়া যাবে মনে করেন ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
আখতারুজ্জামান নামে আনারের এক বন্ধু হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারি দাবি করে হারুন বলেন, “আখতারুজ্জামানের দুটি বাসার একটি গুলশানে, অপরটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। এই দুই বাসায় অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছে। আনারকে হত্যার নেপথ্যে রাজনীতি বা অর্থনৈতিক যে কারণেই থাকুক না কেন বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি।”
হারুন বলেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা কলকাতায় গত ২৫ এপ্রিল একটি বাসা ভাড়া নেয়। তারা ৩০ এপ্রিল ওই বাসায় ওঠে। যিনি হত্যার পরিকল্পনা করেছেন তিনি ও আরেকজনসহ মোট তিনজন বিমানেযোগে কলকাতায় গিয়ে ভাড়া বাসায় ওঠেন। কিছু কাজ আছে বলে ৫/৬ জন রেখে ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন আখতারুজ্জামান শাহীন।
তিনি বলেন, “গত ১২ মে আনার তার ভারতীয় বন্ধু গোপালের বাসায় যান। ১৩ মে ওই ভাড়া বাসায় ওঠেন। ফয়সাল নামে একজন তাকে রিসিভ করেন। সেখান থেকে নিয়ে যিনি মূল হত্যাকারী তিনি আনার ও ফয়সালকে নিয়ে চালক রাজার গাড়িতে করে ওই বাসায় যান। আগে থেকে অবস্থান করা মোস্তাফিজও বাসায় ঢোকেন। আগে সেখানে ভেতরে ছিল জাহিদ ও সিয়াম। আধা ঘণ্টার মধ্যে নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।”
অপরদিকে আক্তারুজ্জামান, যার আমেরিকারও নাগরিকত্ব রয়েছে, ঢাকার একটি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার বলেন, “আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। ঘটনার সময় আমি বাংলাদেশে ছিলাম। দেশে বিচার পাবো না, তাই আমেরিকায় চলে এসেছি।”
এদিকে হত্যাকারীদের প্রায় চিহ্নিত করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চোরাচালান সম্পৃক্ততা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “আপনারা যা শুনেছেন, আমরা সেগুলোই শুনেছি। যে পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধার করতে না পারবো সে পর্যন্ত অফিসিয়ালি আপনাদের কিছু বলতে পারছি না। এ বিষয়ে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।”
মন্ত্রী বলেন, “আনোয়ারুল আজীম ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের এমপি। ওই বর্ডার এলাকাটা সন্ত্রাসকবলিত। কী কারণে হত্যাকাণ্ড হয়েছে সে বিষয়ে সুনিশ্চিত না হয়ে আমাদের কিছুই বলা ঠিক হবে না।”
ঢাকায় কলকাতার পুলিশ
হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে ঢাকায় এসেছে কলকাতা পুলিশের দুই সদস্যের একটি স্পেশাল টিম।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে যান ওই টিমের সদস্যরা।
বেনারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের একজন মুখপাত্র জানান, “আনারের লাশ না পাওয়া গেলেও কলকাতা পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে আনার খুন হয়েছেন।”
তিনি জানান, আনারের মরদেহ উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ।
তবে এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
যা বললেন ওবায়দুল কাদের
আনারের জনপ্রিয়তা দেখে আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দিয়েছিল বলে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
চোরাচালানে জড়িত একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া নিয়ে সাংবাদিকদের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তিনি বলেন, “সংসদ সদস্য কলকাতায় মারা গেছেন। তাকে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আমরা কিছু বলতে পারব না।“
ওবায়দুল কাদের বলেন, এলাকায় গিয়ে দেখুন, তার জন্য শোকার্ত মানুষের হাহাকার। তিনি প্রতিনিয়ত কোন গাড়ি নয়, মোটরসাইকেলে করে সারা এলাকা ঘুরতেন। তাকে তৃতীয়বার মনোনয়ন দেওয়া হয় জনপ্রিয়তা দেখে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) এখন বলছেন কলকাতায় তাকে চোরাকারবারি বলা হয়েছে। ভারতীয় সাংবাদিকেরা কোন তথ্য আনল, সেটার উদ্ধৃতি দিচ্ছেন। আপনারাতো এই দেশের নাগরিক, সে (আনার) যদি অপরাধী হয়, সেই অপরাধটা আপনাদের (সাংবাদিক) অনুসন্ধান প্রতিবেদনে কেন এলো না।
হলফনামায় চোরাচালানের মামলা
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর হলফনামায় ২১ মামলার তথ্য দিয়েছিলেন আনোয়ারুল আজিম আনার।
ওই হলফনামা অনুযায়ী, ৭টি মামলা থেকে ডিসচার্জ পেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। বাকী ১৪ টি মামলায় খালাস পাওয়ার কথা লেখা হয়।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (খ) ধারায় অনুযায়ী ২০০১ সালের ২ ডিসেম্বর ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থানায় চোরাচালান মামলা হয়েছিল বলে হলফনামায় পাওয়া যায়।