আলোচিত জোড়া খুনের মামলায় সাবেক সাংসদপুত্রের যাবজ্জীবন

জেসমিন পাপড়ি
2019.01.30
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
190130_Double_murder_case_1000.jpg রায়ের আগে ইস্কাটনে জোড়া খুনের মামলার আসামি বখতিয়ার আলম রনিকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। ৩০ জানুয়ারি ২০১৯।
[ফোকাস বাংলা]

রাজধানীর ইস্কাটনে জোড়া খুনের দায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

ঘটনার তিন বছর পরে বুধবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল ঈমাম। এর আগে দুই দফা রায়ের তারিখ পেছানো হয়।

যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি রনিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। আসামি রনির উপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করা হয়।

“বখতিয়ার আলম রনির পিস্তল থেকে ছোড়া গুলিতে দুটি নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে গেছে, এর দায় আসামি এড়াতে পারেন না। তাই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো,” বলেন বিচারক।

“আসামির অপরাধ ৩০২ ধারায় প্রমাণিত হলেও তাঁর মানসিক ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়,” বলেন তিনি।

আসামির সর্বোচ্চ সাজা না হলেও রায় নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে আসামিপক্ষ।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ক্ষমতার দাপট যে অপরাধীকে বাঁচাতে পারে না, এ রায় তার দৃষ্টান্ত হতে পারে।

মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বেনারকে বলেন, “যে রায় হয়েছে তা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, ক্ষমতার প্রভাবে যেন এ সাজা কমে না যায়, বা আসামি ক্ষমা না পেয়ে যায়। যার উদাহরণ আমরা পূর্বেও দেখেছি।”

তাঁর মতে, “এ আসামি যাবজ্জীবন সাজা খাটলে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে যে ক্ষমতার আশ্রয়ে থাকলেও অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না।”

এদিকে আসামির আইনজীবী ওমর ফারুক বেনারকে বলেন, “আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। আমরা পুরো রায় পর্যালোচনা করে উচ্চ আদালতে যাব।”

তিনি বলেন, “মামলার সাক্ষীরা ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বললেও আদালতে কখনো বলেননি যে রনি গুলি ছুড়েছেন। এখানে আদালতে শপথ করে দেওয়া সাক্ষ্য ও রায়ের মধ্যে অসংগতি দেখছি।”

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম জাহিদ হোসেন বেনারকে বলেন, “ভিডিও ফুটেজসহ বিভিন্ন প্রমাণ ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আমরা আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। সর্বোচ্চ সাজা আমাদের কাম্য ছিল। তবে আসামির অবস্থা বিবেচনা করে আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে আমরা সন্তুষ্ট।”

জাহিদ হোসেন বলেন, “সেদিন ইস্কাটনে যা ঘটেছিল, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও দুঃখজক। এই ঘটনার বিচার সবার কাম্য ছিল।”

রায় ঘোষণার সময় সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিচারক বলেন, “সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঘটনার দিন রনি মদ্যপান করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে পিস্তল ছিল। তবে তিনি স্বাভাবিক ছিলেন না। তাঁর শিশু সন্তানও হাসপাতালে ভর্তি ছিল।”

“রাতে রনির মাইক্রোবাস মগবাজারের দিকে যায়, এর দশ মিনিটের মাথায় উল্টো পথ দিয়ে আবার ইস্কাটনের দিকে আসে,” বলেন আদালত।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে রাজধানী ঢাকার নিউ ইস্কাটনে একটি গাড়ি থেকে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়লে রিকশাচালক আবদুল হাকিম ও অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী গুরুতর আহত হন।

এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান।

ঘটনার দুদিনের মাথায় ১৫ এপ্রিল হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজনকে আসামি করে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

পরে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) স্থানীয় এলাকার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) সহায়তায় আসামি রনির প্রাডো গাড়ি এবং তাঁর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। সেই গাড়ির সূত্র ধরেই একই বছরের ৩০ মে রনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে আছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।