আবারও বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন মিয়ানমারের সেনারা
2024.04.17
কক্সবাজার ও ঢাকা
মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান সংঘাতে রাখাইন রাজ্য থেকে আবারও সেনা সদস্য, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও বেসামরিক ব্যক্তিরা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন।
সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে এবং বুধবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের আরও ৪৭ জন সেনা ও বিজিপি সদস্য পালিয়ে এসেছেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বুধবার বেনারকে বলেন, “গত রাতে (মঙ্গলবার) নতুন করে আরও ৪৬ জন বিজিপি সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন। বুধবার দিনের বেলা এসেছেন একজন।”
তিনি জানান, এ নিয়ে নতুন করে পালিয়ে আসা ২৬১ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
“বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেওয়া এই ব্যক্তিদের ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে,”যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়।
এর জের ধরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসেন ৩৩০ জন।
এর মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, চারজন বিজিপি পরিবারের সদস্য, দুইজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও চারজন বেসামরিক নাগরিক। তাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
গুলি-বোমায় কেঁপে উঠছে সীমান্ত
বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত ঘুরে দেখা গেছে, সীমান্তের ওপার থেকে গুলি ও একের পর এক মর্টার শেলের বিকট শব্দ আসছে।
সীমান্তবর্তী পৌর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “সকাল থেকে এই সীমান্তে বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, বাড়ির পাশে যুদ্ধ চলছে। মাঝখানে বন্ধ ছিল, বুধবার সকাল থেকে আবার শুরু হয়েছে।”সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হোয়াইক্ষ্যংয়ের উত্তরপাড়া, লম্বাবিল, উলুবনিয়া, জিম্মখালী, নয়াবাজার, হ্নীলা, শাহপরীর দ্বীপ, পৌর এলাকার জালিয়া পাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় মর্টার শেল ও গুলির শব্দ শোনা গেছে।শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মো. ইয়াছিন বেনারকে বলেন, “বুধবার সকাল থেকে সীমান্তের লোকজন মিয়ানমারে গুলির শব্দ শুনেছেন।”টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বেনারকে বলেন, “সীমান্তের ওপারে সংঘাত কিছু দিন কম ছিল। কিন্তু ঈদের দিন থেকে আবার গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, এখন প্রায় প্রতিদিনই গুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। ফলে সীমান্তের বাসিন্দারা সব সময় আতঙ্কে আছেন।
“বোমার শব্দ এত বিকট যে, অনেক সময় সীমান্ত কেঁপে ওঠে। আমরা লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলেছি,” বলেন মনিরুজ্জামান।কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা আব্দুর রহিম বেনারকে বলেন, “মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি বাংলাদেশে ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের ভাবিয়ে তুলেছে। সীমান্তের ওপারে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সংঘাত বাড়লে সেখানকার রোহিঙ্গারা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
অনুপ্রেবেশ ঠেকাতে টহল জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি বেনারকে বলেন, “আমরা নাফ নদ ও সমুদ্র পথে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টহল জোরদার রেখেছি। পাশাপাশি যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোস্ট গার্ড প্রস্তুত রয়েছে।”
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “যারা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন, তাঁরা সবাই আমাদের হেফাজতে রয়েছেন এবং সীমান্তে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিসের সাবেক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ বেনারকে বলেন, “মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি খুবই জটিল এবং সেখানকার অবস্থা যে কোনো সময় যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে। তাই বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষিত রেখে কোনো প্রকার সংঘাতে না জড়িয়ে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।”