আবারও বাংলাদেশি জেলে নৌকায় মিয়ানমার নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলি, একজন নিহত
2017.02.06
কক্সবাজারের টেকনাফে বাংলাদেশ-মিয়ানমারকে পৃথককারী নাফ নদীতে মাছ ধরার সময় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপির) গুলিতে একজন বাংলাদেশি জেলে নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরেকজন জেলে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলমান উত্তেজনার মাঝেই এই হত্যার ঘটনা ঘটল। সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা দু’দেশের মধ্যকার যেকোনো বিষয় সমাধানের পথে অন্তরায় বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
এ প্রসঙ্গে অভিবাসন-বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সি আর আবরার বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় সীমান্তে গোলাগুলি কখনো ভালো ফল আনতে পারে না। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।”
এর আগে গত বছরের ৩ ও ২৭ ডিসেম্বর সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর গুলিতে পৃথক দুটি ঘটনায় আরও সাতজন বাংলাদেশি জেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। ওই ঘটনায় মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।
এদিকে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবু জার আল জাহিদ বেনারকে বলেন, “বিজিপির সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিজিপির দাবি, বাংলাদেশি জেলেরা সীমান্ত অতিক্রম করলে, থামার সংকেত দিলেও তা অমান্য করায় গুলি ছোঁড়ে বিজিপি।”
তিনি বলেন, “সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু এভাবে গুলি করে বিজিপি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।
জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বাংলাদেশের জলসীমানায় জেলেদের ওপর গুলির ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন জেলে নুরুল আমিন (২৬)। তিনি টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা। বিজিপির গুলিতে আহত হয়েছেন একই এলাকার সোনা মিয়ার ছেলে মো. মুর্তজা হোসেন (২৪)। তিনি নৌকার মালিক।
ওই ঘটনায় অক্ষত অবস্থায় ফেরত আসা জেলে নুর হাকিম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা তিনজন একটি নৌকায় করে সোমবার সকালে নাফ নদীতে মাছ ধরতে যান। বাংলাদেশ জলসীমায় জাল ফেলে নৌকায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তাঁরা। এরই মধ্যে পোশাকধারী কয়েকজন বিজিপি সদস্য স্পিডবোটে করে বাংলাদেশ জলসীমানায় ঢুকে কোনো কথা ছাড়াই নির্বিচারে তাঁদের নৌকাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে নুরুল ও মর্তুজা গুলিবিদ্ধ হন।
নৌকায় শুয়ে পড়ে নিজের প্রাণ বাঁচে জানিয়ে তিনি বলেন, “পরে তীরে এসে গুলিবিদ্ধ দুজনকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে নুরুলকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসা কর্মকর্তা।”
“নুরুলের বুকে গুলি লাগে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়,” সাংবাদিকদের জানান টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা শোভন দাশ।
আহত মর্তুজার পিঠে কয়েকটি গুলি লেগেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
এদিকে টেকনাফ মডেল থানা-পুলিশের পরিদর্শক (ওসি. অপারেশন) শফিউল আজম সাংবাদিকদের বলেন, “বিজিবির মারফত আমরা ঘটনাটি জানতে পারি। নিহত জেলের লাশ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।”
এদিকে ওই ঘটনার পর থেকে নদীতে মাছ ধরতে যেতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয় জেলেরা।
এ বিষয়ে টেকনাফের জেলে আব্দুল কুদ্দুস (৫৫) টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “আমাদের জলসীমায় মাছ ধরার অধিকার আমাদের আছে। কিন্তু নদীতে মাছ ধরার সময় কোনো উসকানি ছাড়াই নাসাকা (বিজিপি) ঘন ঘন ফায়ারিং করে। ফলে নদীতে মাছ ধরা খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।”
সীমান্তে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দাবি করে ওই জেলে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।