শান্তিপূর্ণ ভোটে আইভির বিপুল বিজয়

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.12.22
বিজয়ের পর সেলিনা হায়াৎ আইভি। বিজয়ের পর সেলিনা হায়াৎ আইভি। ডিসেম্বর ২২, ২০১৬।
নিউজরুম ফটো

সব আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে উৎসবমুখর পরিবেশে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী, যিনি গত নির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছিলেন।

বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান পরাজিত হলেও তিনি নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রার্থীর পরাজয় মেনে নেওয়াটা বিরল ঘটনা।

শহরের দেওভোগে সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাসভবনের ফটকে তাঁর পোস্টারের ঠিক নিচে ছিল বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াতের পোস্টার। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নিকট অতীতে কোথাও দেখা যায়নি।

একটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হলেও তা সারা দেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এরপর বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে।

গতকালের নির্বাচনকে সরকার ও বিরোধী দল তাদের রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেয়।

তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এটাই ছিল কমিশনের শেষ নির্বাচন। ২০১৪ সালের পর থেকে এই কমিশনের অধীনে প্রায় সব নির্বাচনই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

“সরকার ও নির্বাচন কমিশন চাইলে যে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন সম্ভব, সেটা নারায়ণগঞ্জে প্রমাণ হয়েছে,” বেনারকে জানান সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন।

তাঁর মতে, নির্বাচন পদ্ধতি যেভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়েছিল, তাতে দেশবাসীর মধ্যে আস্থা ফেরানোর জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজন ছিল। তবে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রার্থী ও নাগরিক সমাজের শঙ্কা ছিল সেখানকার একজন সাংসদ ও সরকার দলীয় রাজনীতিবিদকে নিয়ে। কারও নাম উল্লেখ না করলেও সরকার দলীয় প্রার্থী আইভী বারবার তাঁর দিকেই আঙ্গুল দেখাচ্ছিলেন।

শঙ্কা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে কোথাও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। কেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাইরে দায়িত্ব পালন করে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে নয় হাজার সদস্য। তৎপর ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অনেকগুলো ভ্রাম্যমাণ আদালত।

“এমন নির্বাচন আমার জীবনে দেখি নাই। যতটা ভয় ছিল, তার কিছুই ভোটকেন্দ্রে দেখা যায়নি,” তোলারাম কলেজ কেন্দ্রে বেনারকে জানান সত্তোরোর্ধ নারী সুফিয়া বেগম।

ভোটকেন্দ্রগুলোতে ছিল নারী ভোটারদের ভিড়।
ভোটকেন্দ্রগুলোতে ছিল নারী ভোটারদের ভিড়।
নিউজরুম ফটো।
“এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট অবস্থান ছিল। এখানে একটা চমৎ​কার নির্বাচন হয়েছে এবং এটা দৃষ্টান্ত হতে পারে।" বেনারকে জানান সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি আবদুর রহমান।

এর আগে ২০১১ সালে বাংলাদেশের কোনো সিটি করপোরেশনের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আইভি। গতকাল বৃহষ্পতিবার দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তিনি জয়ী হলেন।

রাত সাড়ে ১০ টায় রিটানিং কর্মকর্তা বেসরকারিভাবে ১৭৪ টির মধ্যে ১৬৪ টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করেছেন। তাতে দেখা গেছে, নৌকা প্রতীক নিয়ে আইভী এক লাখ ৬৩ হাজার ৭৩৮ ভোট পেয়েছেন। আর বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান পেয়েছেন ৮৯ হাজার ৭৬০ ভোট।

তবে বেসরকারি সূত্রে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলে জানা গেছে, সবগুলো কেন্দ্রে আইভী প্রায় পৌনে এক লাখ ভোটে এগিয়ে আছেন।

দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত নারায়ণঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়েছেন সাত জন। নির্বাচনে ২৭ ওয়ার্ডের ২৭টি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ১৫৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ৯টি পদে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২ জন এবং নারী ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ জন।

নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে: নির্বাচন কমিশন

প্রার্থী ও ভোটারদের সহযোগিতায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। বিকেলে ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সিইসি এসব কথা বলেন।

সিইসি বলেন, ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

কাজী রকিবউদ্দীন বলেন, জনগণের রায় যদি সবাই মেনে নেয়, তাহলেই নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা হওয়ার সুযোগ থাকে না।

নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে: ব্রতী

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতী। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ শেষে সংস্থাটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের ইতিবাচক ভূমিকার কারণে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করে ব্রতী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।