সাবেক ভিপি নূরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা, আটকের পর মুক্তি

শরীফ খিয়াম
2020.09.21
ঢাকা
সাবেক ভিপি নূরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের  মামলা, আটকের পর মুক্তি1000 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নূর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কথা বলছেন। এর পরেই তাকে পুলিশ আটক করে। তার কিছুক্ষণ পর তিনি মুক্তি পান। সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০।
ছবি: বেনার নিউজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক  সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নূরসহ সাত জনকে আটকের কয়েক ঘন্টা পর ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোমবার রাতে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

পুলিশের মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন বেনারকে জানান, নুরুলসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকার একটি থানায় রোববার ধর্ষণ মামলা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে নূর ও তাঁর সহযোগীরা শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবনের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁরা পুলিশের কাজে বাধা দেন।”

উপকমিশনার জানান, রাজধানীর মৎস্য ভবন এলাকা থেকে নুরুল হকসহ সাতজনকে পুলিশ আটক করে। পরে মুচলেকা রেখে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সোমবার রাত সোয়া এগারেটায় ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান মুঠোফোনে বেনারকে বলেন, “নূরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যরাও চিকিৎ​সা নিয়েছেন।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ বাচ্চু বলেন, রাত দশটার দিকে নুরুল হকসহ কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে তাঁরা আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

এদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনেছেন নুরের সহযোগীরা। তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে ডিএমপির মুখপাত্র প্রশ্ন তোলেন, “পুলিশ হামলা করবে কেন?”

নুরুল হকের উত্থান সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে। ওই আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আত্মপ্রকাশ করে। অনিয়মের অভিযোগ ওঠা ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন, সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রায় সব পদে বিজয়ী হলেও নূর ডাকসু ভিপি নির্বাচিত হয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন।

মাস কয়েক আগে নূর রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়, ডাকসু নির্বাচনের আগে ও পরে এবং ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর ডাকসু ভবনে হামলার শিকার হন নুরুল হক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে তাঁর ওপর হামলার সংখ্যা অন্তত নয়টি।

সম্প্রতি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন নুরুল হক। তবে কোনো দলের হয়ে নয়। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে জানান।

গত ২৩ আগস্ট নূর জানান, ভোট করার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সব কিছু ঠিক থাকলে নাগরিক অধিকার পরিষদের ব্যানারে তিনি নির্বাচন করতে চান। এরপর থেকে তাঁকে ঘিরে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয়।

ধর্ষণের মামলা ও প্রতিবাদ

নূরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকার লালবাগ থানায় রবিবার ধর্ষণের মামলাটি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। ডিএমপির মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ওয়ালিদ এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার এক নম্বর আসামি ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। এজাহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ এবং পরে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ার অভিযোগ এনেছেন।

নুরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মীমাংসা করার নামে তাঁকে (ছাত্রীকে) নীলক্ষেতে ডেকে নিয়ে শাসিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাঁদের ভক্তদের দিয়ে তাঁর নামে ‘উল্টাপাল্টা’ পোস্ট করাবেন এবং ‘যৌনকর্মী’ বলে প্রচার করাবেন। তাঁদের গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন; ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, সহসভাপতি মো. নাজমুল হুদা ও শিক্ষার্থী মো. আবদুল্লাহ হিল বাকী।

এই মামলার বিষয়ে নুরুল সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, হাসান আল মামুনের বিষয়ে মেয়েটির যে অভিযোগ, সে ব্যাপারে মামুনই জবাব দিতে পারবেন। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেই।

নূর দাবি করেন, সরকারের সমালোচনা করায় প্রথম থেকেই তাঁর ওপর হামলা হচ্ছে। এই মামলাটিও সেই ধারাবাহিকতায় হয়েছে। তাঁর দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতার মদদেই ওই ছাত্রী উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

এদিকে  ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী। সোমবার ফেসবুকে রাব্বানী লিখেছেন, ইনবক্স-টাইমলাইন-কমেন্ট বক্সে একটি টাটকা নিউজ বেশ আলোচিত। গতরাতে ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর সাহেবের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে লালবাগ থানায় মামলা দায়ের করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী।

রাব্বানী লিখেছেন, “স্পর্শকাতর এই মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে নূর সাহেবের পদ, রাজনৈতিক অবস্থান বা মতাদর্শ যেন কোন নিয়ামক বা প্রভাবক হিসেবে বিবেচিত না হয়। দ্রুততম সময়ে অভিযোগটির সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, সে দোষী সাব্যস্ত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক আর নির্দোষ হলে দায়মুক্তি পাক, এটাই প্রত্যাশা।”

এদিকে ধর্ষণ মামলা দায়ের করার প্রতিবাদে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে নুরের সমর্থকেরা। সেখানে নূর অভিযোগ করেন, সরকারের নির্দেশে এই মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে তারা শাহবাগের দিকে গেলে বাঁধা দেয় পুলিশ।

পরে তারা শাহবাগ থেকে মৎসভবনের দিকে অগ্রসর হলে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। মৎসভবন মোড়ে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে পুলিশ ও সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে।

নূরের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের ও তাঁকে হয়রানির প্রতিবাদে মঙ্গলবার ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করবে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং সমমনা সংগঠনগুলো। সোমবার রাতে এই কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।