বাংলাদেশে উষ্ণ আতিথেয়তায় সিক্ত মাহমুদ আব্বাস

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2017.02.03
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্টকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্টকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৭।
ফোকাস বাংলা

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের বাংলাদেশ সফরকালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি দুই জাতির জন্য দুই রাষ্ট্র গঠনই সংকটের সমাধান এনে দিতে পারে—বাংলাদেশ তার পুরনো এই অবস্থান আবারও তুলে ধরেছে।

প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এসময় ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন অব্যাহত ও অটুট থাকার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পশ্চিম তীরে বসতি গড়ায় ইসরাইলের নিন্দাও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রয়াত ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের পর এটিই ছিল ফিলিস্তিনি কোনো নেতার আনুষ্ঠানিক বাংলাদেশ সফর।

উল্লেখ্য ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে স্বাধীনতার ২৫ বর্ষপূর্তি উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন ইয়াসির আরাফাত।

ফিলিস্তিন ২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘে ‘নন-মেম্বার অবজারভার স্টেট’ মর্যাদাপ্রাপ্ত দেশ।

বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশ রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ৫০টি দেশ ফিলিস্তিনকে এখনো স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে না।

ফিলিস্তিনি নেতার সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক জানান, “ফিলিস্তিন ও ইসরাইলে সংকটময় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে দীর্ঘদিন ধরে চলমান ‘দুই জাতির জন্য দুই রাষ্ট্র’ নীতিটিও এখন ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে প্রশ্নের মুখে পড়েছে।”

“বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মহলের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ,” জানান পররাষ্ট্র সচিব।

সফরটি সফল বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস ওয়াই রামাদান। তিনি বেনারকে বলেন, “ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর দু’দেশের সম্পর্ককে আরো গভীর ও বিস্তৃত করবে।”

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ইসরায়েলকে এখনও স্বীকৃতি না দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মাহমুদ আব্বাস। উল্লেখ্য, ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের শহীদুল হক বলেন, “যখন দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে, তখনই বাংলাদেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে।”

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বেনারকে বলেন, “মাহমুদ আব্বাসের এ সফর অত্যন্ত সময়োপযোগী। বাংলাদেশের সঙ্গে ফিলিস্তিনের চিরাচরিত সম্পর্ক রয়েছে। ফিলিস্তিনের লড়াই, আমাদের লড়াই। দীর্ঘদিন ধরে দেশটির জনগণ যে অন্যায় ও অবিচারের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশ তার নিন্দা জানায়।”

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ১৯৬৭ সালের মানচিত্র অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থন দিয়ে আসছে। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনের বিরোধিতা করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রস্তাবেও গত বছর সমর্থন দিয়েছিল বাংলাদেশ। অব্যাহত এ সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা

তিন দিনের সফরে গত বুধবার বিকেলে ঢাকায় আসা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে ‘আন্তঃসরকার যৌথ কমিটি’ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। শেখ হাসিনা এবং মাহমুদ আব্বাসের উপস্থিতিতে এ স্মারকে সই করেন দুই পক্ষের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

এ প্রসঙ্গে শহীদুল হক বলেন, “এখন থেকে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নিয়মিত পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হবে। আন্তঃসরকার যৌথ কমিটির প্রথম বৈঠক এ বছরের শেষ নাগাদ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।”

আন্তরিকতা ও হৃদ্যতাপূর্ণ আতিথেয়তায় মাহমুদ আব্বাসকে বরণ করে ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তাঁকে স্বাগত ও বিদায় জানান। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তাঁকে যথোপযুক্ত সম্মান দিয়েছে বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।