লিচুর কীটনাশকেই ১৩ শিশুর মৃত্যু

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.07.25
ঢাকা
পোকামাকড়মুক্ত লিচু বিক্রির আশায় চাষিরা গাছে থাকা অবস্থায় তাতে কীটনাশক ব্যবহার করেন। পোকামাকড়মুক্ত লিচু বিক্রির আশায় চাষিরা গাছে থাকা অবস্থায় তাতে কীটনাশক ব্যবহার করেন। এপ্রিল ২৬, ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

এন্ডোসালফান নামক কীটনাশক মিশ্রিত লিচু খাওয়ার কারণেই পাঁচ বছর আগে দিনাজপুর জেলায় ১৩টি শিশুর আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে বলে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা নিশ্চিত করেছে। ওই কীটনাশকটি বিশ্বের ৮০টি দেশে নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশে এখনো নিষিদ্ধ নয় বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইসিডিআরবি) একদল গবেষকের সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল ওই ১৩টি শিশুর মৃত্যুর কারণ এন্ডোসালফান এর বিষক্রিয়া বলে নিশ্চিত করেছে।

পোকামাকড় থেকে লিচু রক্ষা করতে দেশের অন্যতম লিচু উৎপাদনকারী জেলা দিনাজপুরে এন্ডোসালফান ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে এন্ডোসালফান এখনো নিষিদ্ধ নয় বলে বেনারকে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক।

“আমরা ওই ১৩ শিশুর মৃত্যুর কারণ জানতাম না। তবে আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনের গবেষণা সঠিক হলে বিষয়টি মারাত্মক ঘটনা,” বলেন তিনি।

জিয়াউল হক মনে করেন, সম্ভবত লিচু চাষিরা অতিরিক্ত এন্ডোসালফান ব্যবহার করেছিল। এ কারণেই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা আগে শিশুরা এন্ডোসালফান প্রয়োগ করা লিচু খেয়েছিল।

প্রসঙ্গত, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ২০১২ সালের মে মাসের ৩১ থেকে জুন মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত এক থেকে ১২ বছর বয়সের মোট ১৪টি শিশুকে সংজ্ঞাহীন অথবা খিচুনিরত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

গবেষণায় বলা হয়, প্রত্যেকটি শিশুই এন্ডোসালফান প্রয়োগ করা গাছ থেকে পড়া লিচু খেয়েছিল। আবার তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে গবেষকদল বলেছে লিচু খাওয়ার সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টার মধ্যে ওই শিশুরা মারা যায়। আক্রান্তদের মধ্যে একজন শিশু বেঁচে যায়।

মারা যাওয়া সব শিশু এন্ডোসালফান প্রয়োগ করা লিচু গাছের নিচে খেলা করত বলেও গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

উত্তরাঞ্চলীয় জেলা দিনাজপুর লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত। চাষিরা পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে লিচুকে রক্ষার জন্য এই কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন।

“এই ওষুধ না দিলে পোকামাকড়ে লিচু নষ্ট হয়ে যায়; গাছের পাতা কুঁকড়ে যায়। তাই আমরা এই ওষুধ ব্যবহার করি। তবে এটা যে এত খারাপ তা আমরা জানি না,” বেনারকে বলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার লিচু চাষি মোহাম্মদ ফারুক।

ফারুক আরও বলেন, অনেক চাষিই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ওষুধ ব্যবহার করেন।

তিনি বলেন, “লিচু গাছে ফল না থাকা অবস্থায় ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। কখনো কখনো এত বেশি ওষুধ ছিটানো হয় যে চারদিকে ধোঁয়ার মতো অবস্থা হয়।”

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক গবেষক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বেনারকে বলেন, “মারাত্মক বিষক্রিয়া ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকাসহ বিশ্বের ৮০টি দেশে এন্ডোসালফান ব্যবহার নিষিদ্ধ।”

“আমাদের দেশেও এন্ডোসালফান ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। দিনাজপুরের ১৩ জন শিশুর মৃত্যু থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমরা আর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না," বলেন তিনি।

“আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে এন্ডোসালফান বন্ধের জন্য সরকারকে সুপারিশ করব,” বেনারকে বলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।